প্রখ্যাত আইন বিষয়ক সাংবাদিক ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক প্রয়াত মিজানুর রহমান খানের স্মরণসভায় বক্তারা বলেছেন, তিনি ছিলেন একজন অনুকরণীয় সাংবাদিক। আইন, আদালত, সংসদ, সংবিধানের উপর বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এক অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তার সততা, সত্যনিষ্ঠতা ও মানবিকতার কারণে এদেশের মানুষের মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন। তার এই শূন্যতা অপূরণীয়। বুধবার ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
স্মরণসভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, মিজানুর রহমান খান ছিলেন একজন অনুকরণীয় সাংবাদিক, যিনি সাংবাদিকতার বাইরে কিছুই ছিলেন না। তিনি আইন, আদালত, সংসদ, সংবিধানের উপর বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় এক অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। তিনি আইন-আদালতের বিষয়ে লেখালেখির কারণে দ-প্রাপ্তও হয়েছেন।
লেখালেখির কারণে তিনি বহু হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। অসংখ্যবার অন্যায়কারী চক্র তার মোবাইল ছিনতাই করেছেন। নিখুঁত ও তথ্যভিত্তিক লেখনীর কারণে সবার কাছে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন মিজানুর রহমান। তার এই শূন্যতা অপূরণীয়।
ডিআরইউ’র সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম সাবু, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন ও রফিকুল ইসলাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, ডিআরইউ’র নারী বিষয়ক সম্পাদক রীতা নাহার, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সভাপতি মিজান মালিক, ল’ রিপোর্টাস ফোরামের (এলআরএফ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন প্রমুখ।
মিজানুর রহমান খানের সহকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেনÑ প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ, যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, উপ সম্পাদক লাজ্জাত এনাম মহসি ও একেএম জাকারিয়া, সাবেক সহকর্মী শরীফুজ্জামান পিন্টু। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, মরহুম মিজানুর রহমান খানের ছেলে শাদমান মিজানুর খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান।
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি শফিকুল করিম সাবু বলেন, সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় ছিলেন। তিনি সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ থাকলেও সেখানে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। রিপোর্টিং করা, ভিডিও ও ছবি তোলা নিয়ে তার বেশ আগ্রহ ছিল। তিনি হাত খুলে লিখতেন, মন খুলে কথা বলতেন। কোনো বিশেষ রায় হলেই তার ওপরে বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশ হতো। একজন সাংবাদিকের এমনই হওয়া উচিত। সহকর্মী সবার সঙ্গে তার ছিল ব্যাপক আন্তরিকতা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী বলেন, মিজানুর রহমান খান একজন ভালো মনের মানুষ ছিলেন। অসহায় মানুষের জন্য তিনি উদার ছিলেন। তিনি যখন হাসপাতালে অসুস্থ ছিলেন, তখন অনেক অচেনা মানুষ সেখানে ভিড় করে ছিলেন। তার প্রচলিত আইনের ধারা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছিলেন এটি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ সম্ভব হবে। এরপর যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ শুরু হয়।
ডিআরইউ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, ৮০’র দশকে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান সাংবাদিকতায় আসেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এ পেশায় জড়িত হয়েছিলেন তিনি। আইন-আদালত, সংবিধান জ্ঞানসহ গণতন্ত্র নিয়ে নিজের ধারালো কলম চালিয়ে গেছেন মিজানুর রহমান। সব সময় সুশাসনের জন্য কলম চালিয়ে গেছেন তিনি।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, মিজানুর রহমান ছিলেন একজন বহুগুণের অধিকারী সাংবাদিক। প্রতিটি বিষয়ের মধ্যে তিনি বিচরণ করেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পরে যেভাবে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে প্রভাব পড়েছে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিরল। সেটি সম্ভব হয়েছে তার সততা, একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার কারণে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, মিজানুর রহমান খান ২৪ ঘণ্টা সাংবাদিকতা করতেন। তিনি আমাদেরকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। সত্য বলার জন্য তাকে একাধিকবার আদালতের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি কখনও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেননি। তিনি যা দিয়ে গেছেন তা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।