× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কাশ্মীর সংহতি দিবস এবং কিছু কথা...

মত-মতান্তর

ড. আমজাদ আইয়ুব মির্জা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, শুক্রবার

৫ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু কাশ্মীরে (পিওজিকে) বসবাসকৃত আমার জনগণ আরও একবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চাপে বাধ্য হয়ে মিথ্যা জিহাদ ই কাশ্মীর এর সুরে নৃত্য করবে। আর এদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী কতলি শহরে এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারত-বিদ্বেষীদের সঙ্গে সুরে সুর মেলাতে মোজাফরবাদে আসবেন। কাশ্মীরবাসীকে তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণ থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে এদিন মোদি সরকারকে একচোট দেখে নেবেন তারা। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের স্বপ্ন পূরণে প্রতিশ্রুতি দেবেনও।

পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে বর্তমানে আমাদের প্রধান খাদ্য উপাদান আটা জোগাড় করতেই রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এছাড়া নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ, পান উপযোগী পানি এবং বন, নদী, পর্বতের মতো প্রাকৃতিক সম্পদগুলোয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেও তারা লড়াই করছে। সর্বোপরি তারা একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন চায়। আর তাদের এই প্রত্যাশাগুলোই নানারকম বাক্যের অলঙ্কারে অলঙ্কিত হবে সেদিন।


কয়েক সপ্তাহ ধরেই পিওজের কোথাও আটা পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া লাইন অব কন্ট্রোলের (এলওসি) পাশে বসবাসকারী হতভাগ্যরা আটা ক্রয়ের ওপরে যে ভর্তুকি পেতো সেটিও এখন আর দেয়া হচ্ছে না। তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে। ভিম্বার থেকে আহমেদাবাদ এবং মোজাফরবাদে বসবাস করা পিওজেকের অধিবাসীরা আটা, বিদ্যুৎ এবং     সুপেয় পানির জন্য নিরন্তর বিক্ষোভ করছে।  

মাসের পর মাস ধরে সরকারি কর্মকর্তারা এই বিক্ষোভের রেশ অনুধাবন করছেন। অনেক মন্ত্রণালয়ই তাদের কর্মচারিদের বেতন দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল হাতে পাচ্ছে না। এর ফলে বেশিরভাগ পরিবারেই এখন খাদ্যাভাব একটি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন সকালে নারী এবং পুরুষ সবাই পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছে পাওনা বেতনের আশায়। কিন্তু তাদের খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।

বছরের পর বছর ধরে ছোট দোকানদার থেকে শুরু করে হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করা কটেজ আকারের ছোট ছোট ওয়ার্কশপের মালিক এবং শিক্ষার্থী সবাই মিলে অপেক্ষা করছে কবে নাগাদ দৈনিক ২০ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের চিরাচরিত নিয়মের অবসান হবে। পিছিয়ে থাকা এ জনগোষ্ঠি স্বপ্ন দেখছে বিদ্যুতের এ সমস্যা সমাধান হলে তাদের শিক্ষাজীবন ঝলমলে হয়ে ওঠবে, পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি বাড়বে- আর এর মাধ্যমে তারা পেটে ক্ষুধা নিয়ে কোনরকমে বেঁচে থাকা আপনজনের মুখে খাবার তুলে দিতে পারবে।

১৯৯০সালের জানুয়ারিতে যখন আফগানিস্তানে জিহাদ শেষ হয় এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীরাও নিজেদের আত্মবিশ্বাস প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদি ভাবধারায় উদ্ধুদ্ধ ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মতবাদ ছড়িয়ে দেয়ার কার্যক্রম বন্ধ করে। আর এরপর থেকে তারা পুরো দেশজুড়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে থাকে। শুধু তাই নয়, পাকিস্তান ও পিওজেকের অতি সচেতন নাগরিকদের কৌতুহল দমন করতে পাকিস্তানি ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) নামে নতুন এক কৌশল গ্রহণ করা হয়। এটি ছিলো আমির কাজি হোসাইনের নেতৃত্বে জামাত-ই ইসলামির একটি কার্যক্রম। যারা ৫ই ফেব্রুয়ারিকে কাশ্মীর সলিডারিটি ডে বা সংহতি দিবস হিসেবে পালনের প্রচলনের শুরু করে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারিতে কাশ্মীর ভ্যালিতে পন্ডিতদের গণহত্যার গোপন উদযাপনের সময় হিসেবেও স্মরণ করা হয়। সেসময় কাশ্মীরের হাজার হাজার পন্ডিতদেরকে তাদের শত শত বছরের পুরনো জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে হয়। এরপরে তারা ভারত এবং এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে পারে।  

কাশ্মীরের সংহতি দিবস মূলত একটি ঘৃণা উদ্যাপনের উৎসব, মৃত্যু এবং ধ্বংসের উদ্যাপন। এছাড়া এ দিবসকে মিথ্যা রাজনৈতিক মতবাদ এবং বৃটিশ বিভাজনে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দু’দেশের অশুভ সাম্প্রদায়িক আদর্শের বার্ষিক চর্চা হিসেবে দেখা হয়। এটি এমন একটি দিবস যখন পিওজেকে, পিওজিবি এবং পাকিস্তানের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেয় তাদের শাসকদের আদর্শ ও ভৌগলিক বিষয়গুলো আর কিছু নয়, দেশের সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই প্রভাবিত হয়।  

লেখক: মানবাধিকার কর্মী
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর