শিক্ষাঙ্গন

জাবিতে মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা

জাবি প্রতিনিধি

২০২১-০২-১৫

অনলাইনে স্নাতক শেষ পর্বের পরীক্ষা নিলেও মাস্টার্স পর্বের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসন। ফলে মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থীদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হচ্ছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পর্বের  সময়কাল ২০-২৪ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। আগামী মার্চে কেউ কেউ মাস্টার্স ‘তৃতীয় বর্ষে’ পা দেবে।  প্রশাসন বলছে, যেহেতু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোনো ‘তাড়া’ পাওয়া যাচ্ছে না ফলে প্রশাসনও ‘চাপবোধ’ করছে না।
জানা যায়, ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম স্নাতক শেষ পর্বের পরীক্ষার মতো মাস্টার্স পর্বের পরীক্ষাও অনলাইনে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু ‘অনলাইন পরীক্ষা বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিভাগের পাঠদান অগ্রগতির তথ্য সংগ্রহের অনুরোধ জানানো হয়। খবর নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগের মাস্টার্স পর্বের সিলেবাস ৫০-৬০% শেষ হয়েছে। গত মার্চে করোনা সংক্রমণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের শুরু থেকে অনলাইন ক্লাসের উপর জোর দেয়া হলেও অনলাইনে একাডেমিক সিলেবাসের খুব একটা অগ্রগতি হয়নি বিভাগগুলোতে।
এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার যে আভাস দেয়া হয়েছে তা প্রশাসনকে আরো সিদ্ধান্তহীন করে তুলেছে। যোগাযোগ করা হলে ইউরোপে অবস্থানরত গাণিতিক ও পদার্থ অনুষদের ডিন অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার জানান, ‘স্নাতক পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া হলেও মাস্টার্স পর্বের পরীক্ষা নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। এছাড়া একটা সম্ভাবনা আছে যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেও পারে নাও খুলতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল কমিটি কয়েকবার আলোচনা করেছি। ভিসি ম্যাডামের সঙ্গেও কথা হয়েছে। মাস্টার্স পর্বের পরীক্ষা অনলাইনে হতে পারে আবার সরাসরিও হতে পারে। অথবা দুইটার সমন্বয়ও করা হতে পারে। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষা পদ্ধতির পার্থক্য আছে, এসবও আমলে নিতে হচ্ছে সিদ্ধান্ত নিতে।’
প্রশাসনের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশাসনে আলোচনা হয়েছে। তবে যেহেতু জাহাঙ্গীরনগর আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় ফলে হল না খুলে সরাসরি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়াও কঠিন। অন্যদিকে শুধুমাত্র মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দিলে বাকি শিক্ষার্থীদের হলে আসা আটকানো সম্ভব না বলেও আশঙ্কা প্রশাসনের। এদিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রথম পর্র্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা বলেছেন। সে হিসাবে আগামী এপ্রিল- মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভ্যাকসিন পেলে সরাসরি পরীক্ষা নেয়ার একটা ‘সাহসবোধ’ করতে পারে প্রশাসন। তবে নিকট ভবিষ্যতে অনলাইন পদ্ধতির বিকল্প দেখছেন না শিক্ষকরা।
যোগাযোগ করা হলে, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মাস্টার্স পর্বের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেখা যাক কী করা যায়। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এখনো অনলাইনের বিকল্প দেখছি না। যা ভ্যাকসিন আসছে, তা দিয়ে তো সবাইকে কাভার হবে না। তার উপর ভ্যাকসিন নেয়ার পর আউটপুট কী আসে সেটাও দেখতে হবে। সব মিলিয়ে আমাদের সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা নিতে আরো বড় একটা সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। সেটা মে-জুন পার হতে পারে।’
এদিকে ১৯শে মার্চ ৪১তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাবি’র মাস্টার্স শিক্ষার্থীরা ৪১তম বিসিএসের পরীক্ষার্থী। ফলে মার্চে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা আসলে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নারাজি আসতে পারে। ১১ই এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে মাহে রমজান। সব মিলিয়ে সরাসরি পরীক্ষা হতে গেলে আগামী মে-জুনের দিকে একটা সম্ভাবনা দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
যোগাযোগ করা হলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘বিসিএস আমাদের কাছে কোন ইস্যু না। তবে পরীক্ষা পদ্ধতি ও তারিখ নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসিনি।’
স্নাতক পর্বের পরীক্ষা অনলাইনে নেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে খুশী না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনকালে বিপর্যস্ত পারিবারিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পড়েছে। অনেকে পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে পারেনি বাড়িতে থাকার কারণে।
ফলে এই পরীক্ষায় ‘ওভার মার্কিং’ হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখছেন শিক্ষকরা। এছাড়া এখনো সীমিত পরিসরে অফিস চলমান থাকা ও প্রশাসনের পরীক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতার একটা কারণ হিসেবে দেখছেন কেউ কেউ। সারা দেশের প্রায় সব অফিস সপ্তাহে পাঁচদিন খোলা থাকলেও জাবি’র অফিস খোলা থাকে মাত্র তিনদিন। তাও দুপুর ২ টা পর্যন্ত। এছাড়া ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), ট্রেজারারের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এখনো সরাসরি অফিস করেন না।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status