× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুলে মজার পড়াশোনা

শিক্ষাঙ্গন

স্টাফ রিপোর্টার
(৩ বছর আগে) ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১, মঙ্গলবার, ৮:৫৫ অপরাহ্ন

ক্লাসের শুরুতেই শিক্ষক যখন বললেন, ‘গুড মর্নিং’, তখনই প্রথম শ্রেণীর সকল সোনামণিরা পাখির মতো কিচির মিচির করতে করতে বলে উঠলো, “গুড মর্নিং টিচার।”
ক্লাসের প্রতি প্রবল উৎসাহ তাদের। প্রতিদিন পাঠদানের শুরুতে ডিভাইস স্ক্রিনের সামনে বসে কিছুক্ষণ শারীরিক কসরত করে সকলেই। তাদেরই একজন রিয়া। তার প্রাত্যহিক রুটিনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। অথচ অবাক করে দেয়ার মতো বিষয় হলো, প্রথম শ্রেণীর এই ছোট্ট সোনা মণিটি কোনোদিনই সকালে উঠে ক্লাস করতে চাইতো না এর আগে।
রিয়ার বাবা-মা তাকে করোনাকালেই গত আগস্টে ভর্তি করিয়ে দেন বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুলে। তারপর থেকে নিয়মিত সপ্তাহে দুদিন সে অনলাইনে ক্লাস করছে। প্রতিবার সে প্রবল আগ্রহ নিয়ে বসে থাকে, কবে শনিবার আসবে এবং সে তার প্রিয় শিক্ষক আর বন্ধুদেরকে অনলাইনে দেখতে পাবে। শুনতে পাবে নানান মজার গল্প।
বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুল (বিডিএস) এই দেশের প্রথম অনলাইন টিচিং প্ল্যাটফরম যেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে লাইভ ইন্টারেকশনের মাধ্যমে পাঠ গ্রহণের সুযোগ।
২০২০ সালে চালু হওয়া এই প্ল্যাটফরমটিতে বর্তমানে রয়েছে অভিজ্ঞ সব শিক্ষকম-লী, যারা বিনামূল্যে ইন্টারেক্টিভ সেশনের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৪৫টি জেলার প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। বিডিএসের ফেসবুক পেইজে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসগুলোর লাইভ শেয়ার করা হয়। অভিভাবকেরা একটি লিঙ্কের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারে।
বিডিএস’র মূলমন্ত্রই হচ্ছে যে, পড়াশোনা মজার হওয়া উচিত। বিডিএস-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. কামরুল কিবরিয়া অয়ন তার নিজস্ব শিক্ষার অভিজ্ঞতাটি উদাহরণ হিসেবে ব্যক্ত করেছেন, “আমাদের ছোটবেলায় বেশিরভাগেরই কঠোর পিতা-মাতার শাসনের মধ্যে বেগে উঠার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তখন শাস্তির ভয়েই মূলত পড়াশোনা করতাম। তবে বিডিএসে আমরা বিশ্বাস করি যে পড়াশোনা মজার হওয়া উচিত। কারণ এটি কেবল গ্রেড বা রেজাল্টের জন্য নয় বরং একজন মানুষ হয়ে বেড়ে ওঠাতেও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।”   
তাই বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় ভিডিও কনটেন্টের মাধ্যমে বিডিএস’র ক্লাসগুলোকে মজার করে তোলা হয়। অয়ন জানান, কোর্সের উপকরণগুলো বিভিন্ন বয়সের গ্রুপ এবং গ্রেডের জন্য ডিজাইন করা।
কোভিড-১৯ আমাদের কাছ থেকে অসংখ্য জীবন কেড়ে নিয়েছে এটি যেমন সত্যি, তেমনিভাবে এটিও সত্যি যে, এই ভয়ঙ্কর অতিমারি আমাদের নানাভাবে জীবনমুখী শিক্ষায় শিক্ষিতও করেছে। যেকোনো বিষয়ের ভালোমন্দ বিচার করার ক্ষেত্রে যে চিরায়ত দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের, সেটিও অনেকখানি বদলে দিয়েছে এই কোভিড-১৯। বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন, তা আমাদেরকে আগামী পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত হতে অনেকাংশে সহায়তা করছে। এই সকল নতুন নিয়ম-কানুনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়ে, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যেন কোনোরূপ বিঘœ না ঘটে এবং তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজেশনই বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুল (ইধহমষধফবংয উরমরঃধষ ঝপযড়ড়ষ) এর মূল লক্ষ্য।
পাশাপাশি বিডিএসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. কামরুল কিবরিয়া আরো জানান যে, তারা এ বছর থেকে নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়তা শুরু করারও পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে।
প্রতিসপ্তাহে বিডিএস’র ১ম ও ২য় শ্রেণীর জন্য দু’টি ক্লাস এবং ৩য় থেকে ৪র্থ শ্রেণীর জন্য ৪টি ক্লাস হয়। ক্লাসগুলি আরো ইন্টারেক্টিভ এবং মজাদার করার জন্য, প্রতিটি বিষয় সম্পর্কিত ৩০টিরও বেশি মজাদার কন্টেন্ট তৈরি করা হয়। এই মুহূর্তে বিডিএসে ১১জন শিক্ষক রয়েছেন যারা অনলাইনে পাঠদানের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। কন্টেন্ট মডারেটর টিমের সঙ্গে একত্রে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য এই সামগ্রীগুলি প্রস্তুত করেন। প্রোগ্রামটি আরো বিস্তৃত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এটি শিক্ষকদের জন্যও একটি শেখার প্রক্রিয়া। ভারপ্রাপ্ত কোর্স তত্ত্বাবধায়ক ও বিডিএস’র শিক্ষক সাদিয়া রহমান সংগীতা বলেন, “এই স্কুলগামী বাচ্চাদের এবং তাদের অভিভাবকদের জন্য অনলাইন লার্নিং এবং ক্লাসগুলি নতুন। তবে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, এটিই ভবিষ্যৎ। যখনই আমি আমার ছাত্রদের এই নতুন প্ল্যাটফরমে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে দেখি তখন খুব খুশি এবং গর্ব বোধ করি।”  
অনলাইন শিক্ষার জন্য ইন্টারনেট অন্যতম বড় একটি ব্যাপার। বিডিএস শুরুর আগে তাদের টিম বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), গ্রামীণফোন এবং অন্যান্য মোবাইল অপারেটর সংস্থাগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করেছিল। এতে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৫০-৫২% জন গোষ্ঠীর অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিতে মোবাইল, কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসে অ্যাক্সেস রয়েছে। এবং বাংলাদেশের থ্রিজি ইন্টারনেটের ১০০% কভারেজ রয়েছে। সেই তথ্য দিয়ে, বিডিএস সারা দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পড়াশোনা।
এমনকি শিক্ষার্থীরা জুম বা গুগল শ্রেণিকক্ষে সরাসরি ক্লাসে অংশ নিতে না পারলেও ক্লাসগুলি রেকর্ড করা হয় এবং ভিডিওগুলি গুগলে আপলোড করা হয়, সেখান থেকে তারা রেকর্ডিংগুলি ডাউনলোড করতে পারে। ভবিষ্যতে আরো বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানোর জন্য বিডিএস টিম দেশের বিটিআরসি এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে।
এই মহামারিটি বর্তমান প্রজন্মকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সম্ভাবনা দেখিয়েছে। এটি অনেক কিছু নিয়েছে আমাদের থেকে তবে পাশাপাশি প্রচুর সুযোগও করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল স্কুল সেই সুযোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর