ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে। চারদিকে থমথমে পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি কিছু দূতাবাসের সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেছেন ইয়াঙ্গুনের অধিবাসীরা। সেনাদের অস্ত্রের ভয়কে উপেক্ষা করে সাধারণ ধর্মঘট চলছে আজ মিয়ানমারে। অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে হাজারো মানুষ জরুরি অবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমবেত হয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। তারা জানেন, এর ফলে জীবন হারাতে পারেন। কিন্তু মৃত্যুভয়কে পিছনে ফেলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ডাকে রাজপথে নেমে এসেছেন সাধারণ মানুষ। ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ প্রথম সারির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী।
এরপরই দিয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা। কিন্তু সামরিক জান্তা বন্দুকের ভয় দেখিয়ে মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। প্রতিদিনই বিক্ষোভে নেমে আসছেন তারা। করছেন গণঅসহযোগ আন্দোলন। তাদের দাবি, ১লা ফেব্রুয়ারির পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ অং সান সুচিকে মুক্তি দিতে হবে। পুনর্বহাল করতে হবে বেসামরিক প্রশাসন।
প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের হলেডান জংশনে ৪৬ বছর বয়সী সান সান মাওয়া বলেছেন, প্রতিজন মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন। আমাদেরকে ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। মিয়ানমারের মতো দেশে তারিখ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের ইংরেজি তারিখ ২২.২.২০২১ তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা এটাকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন ০৮-০৮-১৯৯৮ তারিখটির সঙ্গে। ওইদিন পূর্ববর্তী প্রজন্ম সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। সেনাবাহিনী হাতে রক্ত লাগিয়ে দমন করেছিল সেই বিক্ষোভ। তবে এবার নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ বা বাধা আসছে কম। তবুও এরই মধ্যে তারা কমপক্ষে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছে।
সর্বশেষ শনিবার তাদের গুলিতে নিহত হয়েছে দু’জন। এর মধ্যে একজন টিনেজার এবং একজনের বয়স ২০ বছর। সামরিক জান্তা বলেছে, বিক্ষোভে আহত এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। শনিবার গুলিতে দু’জন নিহত হলেও বিক্ষোভকারীরা নিবৃত হয়নি। তারা শোককে শক্তিতে পরিণত করে রোববার বিক্ষোভ করেছেন সারা মিয়ানমারে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন টেলিভিশন এমআরটিভি বিক্ষোভকারীদেরকে আজ সোমবার বিক্ষোভের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা এখন সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিচ্ছে। বিশেষ করে টিনেজ এবং যুব সমাজকে উসকে দিয়ে সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এতে প্রাণহানী ঘটতে পারে তাদের।
এর জবাব দিয়েছেন থেট থেট হ্লাইং (২২)। তিনি বলেছেন, আমি সামরিক জান্তা চাই না। আমি চাই গণতন্ত্র। আমাদের ভবিষ্যত আমরাই রচনা করবো। বিক্ষোভে আসতে আমার মা আমাকে বাধা দেননি। তিনি শুধু বলেছেন, দেখেশুনে চলো। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন এবং স্থানীয় স্টোরগুলো আজ সোমবার বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে ইয়াম ব্রান্ডস ইনকরপোরেশনের কেএফসি, ফুডপান্ডার প্রতিদিনের সরবরাহ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ান কোম্পানি গ্রাব তাদের সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করছে। মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কিছু দেশ হস্তক্ষেপ করছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন টুইটারে বলেছেন, অভ্যুত্থান বিরোধীদের দমন করতে কর্তৃপক্ষ সহিংসতা ব্যবহার করার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তার ভাষায়, আমরা মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছি। বৃটেন, জার্মানি, জাপান এবং সিঙ্গাপুর সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাঁ প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার অগ্রহণযোগ্য বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
আবুল কাসেম
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১০:৩২অং সান সু চিকে বলা হয় গণতন্ত্রের নেত্রী। প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের জন্য সেটাই সত্য। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সু চির মধ্যে মানবিকতার ছিটেফোঁটাও আছে কিনা। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিধনযজ্ঞে সু চি সাইঁ দিলেন অথবা এড়িয়ে গেলেন কিভাবে তা এক জলন্ত প্রশ্ন। প্রশ্ন জাগে মানবিকতা ও গনতন্ত্র কি আলাদা? কক্ষনো নয়। যেখানে গনতন্ত্র অনুপস্থিত সেখানে মানবাধিকারও লঙ্ঘিত হয়। গনতন্ত্রে দেশ, জাতি, ধর্মের বিভাজন তৈরি করেনা। গনতন্ত্রে আছে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও অধিকার এবং তা দেশ, জাতি ও ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া সত্ত্বেও মনের ভেতর একটা ক্ষত নিয়ে আজ গনতন্ত্রের পক্ষে সমর্থন জানাই। মিয়ানমারে গনতন্ত্র মুক্তি পাক এবং স্বৈরাচার হানাদার বাহিনী নিপাত যাক। আশা করি একদিন সু চির ভুল ভাঙবে। আমরা কোনো দেশের মুক্তিকামী গণমানুষের বিপক্ষে যেতে পারিনা, সে মুসলিম বিদ্বেষী হলেও। কারণ, এই গনতন্ত্রের মূলমন্ত্র একদিন না একদিন মানব জাতিকে বিদ্বেষ থেকে ফেরাবেই ইনশাআল্লাহ। মিয়ানমারের গনতন্ত্রকামী গণমানুষের বিজয় অর্জিত হোক। আমরাও একদিন গনতন্ত্রের জন্য অধিকার আদায়ের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। তাই অন্যদের গনতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখলে আমাদের কষ্ট হয়। চীনের উচিত মিয়ানমারের জনগণের পক্ষ সমর্থন করা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষে চীন সরকারের অবস্থান প্রমাণ করে, তাদের দেশে মুসলিম নিধন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ মিথ্যা নয়। মিয়ানমারে গনতন্ত্র বিজয়ী হলে অচিরেই তার তরঙ্গ চীনেও আঘাত হানবে ইনশাআল্লাহ। তাই সকল মুসলিম দেশের মানুষকে মিয়ানমারের গনতন্ত্রিক জনগণের প্রতি সমর্থন দিতে হবে। ন্যায় ও ইনসাফের বিজয় অবশ্যম্ভাবী ইনশাআল্লাহ।