দাম বেঁধে দেয়ার পর ভোজ্য তেলের বাজারে নতুন করে আর দাম বাড়েনি। যদিও সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভোক্তারা। তাদের দাবি, আগের তুলনায় বর্তমান মূল্য এখনো অনেক বাড়তি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারের কাছ থেকে তেলের বাড়তি মূল্যের স্বীকৃতি নিয়েছে। ওদিকে সরকার মিল গেটে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। সূত্র জানায়, সরকার মিল গেটে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১০৭ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মিল গেটে প্রতিলিটার সয়াবিন বিক্রি করছেন ১১০ টাকায়। এতে বিপাকে পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
তারা খুচরায় সরকারের নির্ধারিত মূল্য ১১৫ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১১৮ থেকে ১২০ টাকায়। তবে খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামের মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে খুচরা বাজারে রূপচাঁদা ব্রান্ডের প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩০ টাকা, দুই লিটার ২৪০ টাকা, তিন লিটার ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটার ৬২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বসুন্ধরার ৫ লিটার ৬২৫ টাকা, ১ লিটার ১২৫ এবং ২ লিটার ২৬০ টাকা, তীরের ৫ লিটার ৬২০ টাকা, রয়েল শেফের সান ফ্লাওয়ার তেল ৭৫০ টাকা, পুষ্টির ৫ লিটার ৬০০ টাকা, ২ লিটার ২৫০ টাকা এবং রূপচাঁদা ৫ লিটার ৬১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বৃহস্পতিবার সরকার তেলের দর নির্ধারণ করে দেয়। সে অনুযায়ী প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন মিল গেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা, প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন মিল গেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ১৩৫ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিল গেট মূল্য ৫৯০ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬১০ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ৬৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিলিটার খোলা পাম সুপার মিল গেট মূল্য ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ টাকা এবং খুচরা বিক্রয় মূল্য ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন সরকারের নির্ধারিত মূল্যের মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।
কাওরান বাজারের আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়াতে বাজারের অস্থিরতা দূর হয়েছে। ধীরে ধীরে বাজারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। বিশ^ বাজারে তেলের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা ব্যবসায়ীরাও শঙ্কার মধ্যে ছিলাম। এখন দর নির্ধারণ করে দেয়ায় সেই শঙ্কা কেটে গেছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যের মধ্যে তেল বিক্রি করছে। তিনি বলেন, বিশ^ বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করেছিল। তাদের শঙ্কা ছিল যে হয়তো আরো বাড়বে। কিন্তু বিশ^ বাজারে বাড়লেও সরকার আমাদের দেশে তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয়াতে ব্যবসায়ীরা আর নতুন করে তেলের মজুত করছেন না। তারা তেল বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লেও আমাদের দেশের বাজার স্থিতিশীল থাকবে। তাই আমি মনে করি সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আঁখি এন্টারপ্রাইজ ও সিরাজ স্টোরের বিক্রেতা জানান, বর্তমানে তেলের বাজার স্থির রয়েছে। সরকারের নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। বরং নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে আরো কম দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিনের নির্ধারিত মূল্য মানা হচ্ছে না বলে সূত্র জানায়। মিল গেটে খোলা সয়াবিনের দাম ১০৭ টাকা করা হলেও ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর মিল পর্যায়ে প্রতিলিটার পাম সুপার অয়েলের দাম ৯৫ টাকা করা হলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় আড়াই টাকা বেশি সাড়ে ৯৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারে খোলা তেলের দাম এখনো নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। বাড়তি দামের ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করার আগেই ভোজ্য তেলের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ফলে নির্ধারিত দামে পৌঁছতে একটু সময় লাগছে। ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো তাদের প্যাকেট ও বোতলজাত পণ্যের দাম সরকার নির্ধারিত দামের মধ্যে সমন্বয় করে বিক্রি করছে। পাইকারি বাজারে ভোজ্য তেল কিছুদিনের মধ্যে সরকারি নির্ধারিত দামে পৌঁছবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।
ওদিকে সরকারের নির্ধারণ করা দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভোক্তারা। তাদের দাবি, আগের তুলনায় বর্তমান মূল্য এখনো অনেক বাড়তি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে সরকারের কাছ থেকে তেলের বাড়তি মূল্যের স্বীকৃতি নিয়েছে। কাওরান বাজারে সাখাওয়াত হোসেন নামে একজন ক্রেতা বলেন, দুই একমাস আগেও তেলের দাম তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে তেলের দাম অনেক বাড়তি। সেই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। এখানে সিন্ডিকেট আছে। সরকার সিন্ডিকেট না ভেঙে বরং তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেছে। এটা ভোক্তাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, এমনিতেই বাজারে প্রায় সব পণ্যের দামই চড়া। এরমধ্যে চাল তেলসহ দুই একটি পণ্যের চড়া দামে আমাদের মতো সাধারণ ভোক্তাদের নাভিশ^াস উঠেছে।