রোহিঙ্গা সংকট এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন প্রেক্ষিত বিষয়ক একাধিক আলোচনায় অংশ নিতে ওয়াশিংটনের পথে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। ওয়াশিংটন সফরের সুবাদে তিনি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন নবগঠিত মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা করতে চান। বিদেশে বাংলাদেশ বিষয়ক নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলায় মার্কিন গণমাধ্যমকে ইতিবাচক ব্রিফিং দিতেও আগ্রহী মন্ত্রী মোমেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি বাইডেন প্রশাসনের কোন্ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন এবং দেশটির কোন্ কোন্ গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে পারছেন তা চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মন্ত্রীর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, ২০শে জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় পালাবদলের পর এটাই হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির প্রথম ওয়াশিংটন সফর। সফরকালে বেশ ক’জন কংগ্রেসম্যান এবং সিনেটরের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের বৈঠকের কথাবার্তা চলছে। করোনার কারণে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনি ব্লিনকেনের সঙ্গে তার মুখোমুখি বৈঠকের সম্ভাবনা কম। তবে টেলিফোন আলাপ বা ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের একটা চেষ্টা আছে।
সফরসূচির অনেক কিছুই এখনো ‘হতে পারে’ (টিবিসি) বা ‘প্রস্তাবনায় আছে’ (প্রপোজড) পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ঢাকার এক কর্মকর্তা বলেন, এমন সফরে একেবারে শেষ মুহূর্তে অনেক কিছু ঠিক হয়। তবে যা-ই হোক, নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। এদিকে সোমবার বিকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ৩ দিনের সফরে রাতে আমেরিকা যাচ্ছি, এখানে আমাদের কয়েকটি মিটিং আয়োজন হয়েছে। বিশেষ করে নতুন সরকার এসেছে। নতুন সরকারের সঙ্গে আমরা সম্পর্কের ?উন্নয়ন চাই। ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের বিদেশনীতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমি ব্রড বেইজড আলাপ করবো। তারা নতুন একটা ফরেন পলিসি দিয়েছে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখানে ভূ-রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেসব আমরা তাদের কাছে তুলে ধরবো। যাতে তারাও আমাদের সেভাবে দেখে। মোমেন জানান, মঙ্গলবার তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থোনিও ব্লিনকেন এবং চেয়ারম্যান অব দি সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির বৈঠকে যোগ দেবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকা অনেক বড় দেশ। তাদের সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক আরো উন্নত করতে পারি, দিজ ইজ এ উইন-উইন। বাংলাদেশেরও এখন অনেক কিছু অফার করার সুযোগ আছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমেরিকা এক নম্বর ইনভেস্টর ইন বাংলাদেশ। মোস্টলি ইন এনার্জি সেক্টর। আবার অন্যান্য সেক্টরও আছে। আমরা এখন ফার্মাসিউটিক্যালস সেক্টর ওপেন করেছি। উই ওয়ান্ট টু ব্রডেনিং।
ওদিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি গণমাধ্যমকে ব্রিফিংয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বিদেশে আমাদের দেশ সম্পর্কে কোনো কোনো সময় নেতিবাচক প্রচারণা হয়। ওয়াশিংটন সফরকালে আমি সেই নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে দু’য়েকটা মিডিয়াতে সাক্ষাৎকার দেবো। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে চলমান নেতিবাচক প্রচারণার জবাব দেয়া। দীর্ঘদিন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকারী মোমেন বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়ে বলেন, যেমন ধরুন- বলা হয় আমরা খুব বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করি। একেবারে মিথ্যা কথা। আমাদের দেশে কালেভদ্রে দু’য়েকটা হয়। আমেরিকাতে পুলিশ অনেক লোক মারে, ইচ্ছা করে মারে না, মরে যায়। গত এক বছরে দেখেন ১০০৪ জনকে পুলিশ মেরে ফেলেছে। উইদাউট ডিউ প্রসেস অব দি ল’। ইচ্ছা করে তো মারে না, বিভিন্ন কারণে মারা যায়। আর আমাদের এখানে মনে হয়, যেন আমরা ইচ্ছা করে করেছি! কোন্ কোন্ মিডিয়াকে তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন? সেই প্রশ্নের জবাবে এখনো নির্দিষ্ট হয়নি জানিয়ে মোমেন বলেন, এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে মিডিয়া হাউজগুলোর ওপর। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কি-না? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা এর আগেও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। নতুন সরকারের প্রতিনিধিদেরও আমরা একইভাবে আমন্ত্রণ জানাবো।