খ্যাতিমান কলামিস্ট, গবেষক, সাংবাদিক সৈয়দ আবুল মকসুদ আর নেই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সৈয়দ আবুল মকসুদের ছেলে সৈয়দ নাসিফ মকসুদ জানিয়েছেন, বিকালে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তার বাবাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে সৈয়দ আবুল মকসুদকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। তখন পরীক্ষা করে তার হৃদস্পন্দন মেলেনি।
সন্ধ্যা ৭টা ৯ মিনিটে জরুরি বিভাগের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সৈয়দ আবুল মকসুদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
সৈয়দ আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩শে অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার এলাচিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ আবুল মাহমুদ ও মা সালেহা বেগম।
সৈয়দ আবুল মকসুদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬৪ সালে এম আনিসুজ্জামান সম্পাদিত সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে। পরে সাপ্তাহিক ‘জনতা’য় কাজ করেন কিছুদিন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় যোগ দেন। ২০০৮ সালে সেখান থেকে অবসর নেন। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকতার পাশাপাশি সাহিত্যিক হিসেবেও খ্যাতিমান ছিলেন। মানবাধিকার, পরিবেশ, সমাজসহ নানা বিষয়ে তিনি কবিতা, প্রবন্ধ নিবন্ধ লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ছড়া কবিতা: বিকেলবেলা, দারা শিকোহ ও অন্যান্য কবিতা; প্রবন্ধ: যুদ্ধ ও মানুষের মূর্খতা, বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার, পূর্ববঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথের ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু প্রভৃতি; জীবনী: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর জীবন ও সাহিত্য, মাওলানা আব্দুুল হামিদ খান ভাসানী, গোবিন্দচন্দ্র দাসের ঘর-গেরস্থালি; ভ্রমণকাহিনী: জার্মানির জার্নাল, পারস্যের পত্রাবলি। সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ঋষিজ পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। সাহিত্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা ইস্যুতে পত্রিকায় কলাম লিখে জনপ্রিয় হয়েছেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
উল্লেখ্য, গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে সৈয়দ আবদুল মকসুদ করোনাভাইরাসের টিকা নেন। তার কোন শারীরিক সমস্যা ছিল না। গতকাল সকালেও তিনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আয়োজিত একটি ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।