× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হঠাৎ কেন জাবি শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা!

মত-মতান্তর

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার

খুবই ন্যক্কারজনকভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গেরুয়া এলাকার স্থানীয় কিছু সংঘবদ্ধ লোক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা করেছে। এই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত ৩৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের অন্তত পাঁচটি বাইক ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয়রা। কিন্তু হঠাৎ করে কেনই বা স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের উপর এমন মারমুখী আচরণে গেল। গেরুয়ার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া দিয়ে, হোম ডেলেভারি খাবার সার্ভিস দিয়ে গেরুয়ার অনেক মানুষের সংসার চলে। শিক্ষার্থীদের স্থানীয়রা আদর করে মামা বলে ডাকে। এছাড়া আমি অনেক জাবি শিক্ষার্থীকে স্থানীয়দের বাসায় দাওয়াত খেতে দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী গেরুয়া অঞ্চলে বাসা নিয়ে থাকে।
এই করোনা সংকটে শিক্ষার্থীরা অনেক গ্রামবাসী আর্থিক সহযোগিতাও করছে। কিন্তু এমন সম্পর্কে হঠাৎ মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা কেন! সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এর নেপথ্যের কারণ হিসাবে উঠে এসেছে জাবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতা অভিষেক মন্ডলের চাঁদাবাজি। আমি বেশ কয়েকজন স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি। তাদের দাবি, ক্রিকেট খেলার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাবি ছাত্রলীগের অভিষেক মন্ডল তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। অভিষেকের চাঁদা দাবি ও হুমকি থেকে বাঁচতে তারা পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিল। আশুলিয়া থানার একজন এসআই স্থানীয়দের এই অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টরকে জানান বলে পুলিশ প্রশাসন নিশ্চিত করেছে। আশুলিয়া থানার এস আই হারুন দাবি করছেন, তিনি জাবির সহকারী প্রক্টর মেহেদি ইকবালকে ঘটনার দুদিন আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘ক্যাম্পাসের কিছু ছাত্র এবং ছাত্রলীগ নামধারীরা ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সঙ্গে দরবার সালিশ করছে, হাতাহাতি ঘটেছে, পরে আরও ঘটাতে পারে। অভিষেক, রতন এরা ক্যাম্পাসের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরা প্রায়ই গায়ে পড়ে ঝগড়া করে, দোকান বন্ধ করে দেয়, খারাপ আচরণ করে, ধান্ধা করে। ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা দলবল নিয়ে চাঁদাবাজি করার কথা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানানোর পরও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, তোমার কথায় ৫/১০ জন উঠে বসে, তুমি আক্রান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয় তোমার পাশে থাকে এই মানে তো নয় তুমি গিয়া স্থানীয়দের কাছে চাঁদাবাজি করবা। যে অভিষেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এর আগেও সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আরেকটা অঞ্চল ইসলামনগরে চাঁদাবাজি করছে তার অডিও রয়েছে। এছাড়া জাবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী কর্তৃক স্থানীয় গ্রামের দোকানে, ট্যুর এন্ড ট্রাভেল গ্রুপ ও ব্রডব্যান্ড ব্যবসায় চাঁদাবাজির অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্যবার প্রকাশিত হয়েছে। ফলে জাবি ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি থেকে স্থানীয়দের সুরক্ষা নিয়েও তো ভাবতে হবে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত ও অনুসন্ধানে জানা যায়, চাদাঁবাজি করতে গিয়ে স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে অভিষেকরা সাধারণ ছাত্রদের কাছে আশ্রয় নেয়। পরে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। তাহলে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বলি হলো কি সাধারণ ছাত্ররা! পাথালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও এই চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলেছেন। এলাকাবাসী বলছে, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের চাঁদাবাজিতে তারা অতিষ্ঠ। তারা এখন অনেকের নাম ও ছবি গণমাধ্যমে দিচ্ছে, যারা চাঁদা দাবি করতো। কিন্তু তাই বলে কেন এত সাধারণ ছাত্রদের ওপর তারা হামলা করলো। স্থানীয়রাই বলছে, গত ১১ই ফেব্রুয়ারি অভিষেক গংদের চাঁদাবাজি দাবির সময় থেকে তারা ‘তাদের প্রস্তুতি’ নিয়ে রেখেছিল। তার জন্য তারা স্থানীয় সাংসদ, ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানায়। কিন্তু তারা আইনি প্রক্রিয়ায় আগাতে পারতো। কেন পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট সাইজের লাঠি যোগাড় করে শিক্ষার্থীদের উপর এমন বর্বরোচিত হামলা! এখানে কোন রাজনৈতিক যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। গণমাধ্যমে খবর এসেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জাবি ছাত্রলীগের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ১১ই ফেব্রুয়ারি যে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত সে শুরুর সংঘর্ষে জড়িত ছিল ঢাকা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলামের ভাতিজা। গতকাল কয়েকজন গ্রামবাসীর কথা বলতে চাইলে তারা এই মুহূর্তে মনির ভাইয়ের বারণ আছে বলে জানান। ফলে স্থানীয়দের দিক দিয়ে কোন রাজনৈতিক উস্কানি ও স্বার্থ আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য রাশেদা বেগম মাইকে ‘ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা দিতে বলেন। হামলায় অংশগ্রহণ করেছে জামসিং, স্বন্দীপ ও বটতলা এলাকার জনতাও (সূত্র: দৈনিক মানবজমিন, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। বর্তমানে সাভারের বিভিন্ন ফেসবুকের গ্রুপে গেরুয়া গ্রামের বাসিন্দারা তাদের পাশে থাকার আবেদন জানাচ্ছে। এই যেন একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বৃহত্তর জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা। সুতরাং উভয় পক্ষেই রাজনৈতিক স্বার্থ থাকতে পারে। এখন যদি অভিষেক গংয়ের চাঁদাবাজি থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত হয় তবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির জন্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আক্রমণ করল সে বিষয়টারও বিচার হতে হবে। জাবি ছাত্রলীগ ও স্থানীয় ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বের বলি সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা হতে পারে না। সাধারণ ছাত্রদের যারা হামলার মুখোমুখি নিয়ে গেল, যারা হামলা করল, স্থানীয়দের যারা উস্কানি দিলো সবার শাস্তি হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তার আগে মূল ঘটনা কি তার জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। ঢাকা জেলা প্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এই দায়িত্ব নিতে হবে। আর যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমকে আগেই চাঁদাবাজির ঘটনা অবহিত করা হয়েছিল, ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রক্টরিয়াল টিমের কোন ব্যর্থতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে যায়, যুদ্ধ করতে নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি সংক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতাকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ ঠিক থাকে না। স্থানীয় ও জাবি ছাত্রলীগের দ্বন্দ্বের বলি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা না হয়। তার জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার সমাধান করতে হবে। নতুবা ‘স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয়’ দ্বন্দ্বের যে সূত্রপাত হলো তার স্থায়ী রূপ পেলে একটি স্থায়ী সংকট দাঁড়াতে পারে। সুতরাং সমস্যা সংকটে সরকার, প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়কে আর গভীর ও নিরপেক্ষভাবে ভাবতে হবে ও উদ্যোগ নিতে হবে। অপরাধী যেই হোক সে যেন শাস্তি পায়।
লেখক : জাবি প্রতিনিধি: দৈনিক মানবজমিন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর