টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পোড়াবাড়িতে জৈব সার তৈরি করে কৃষকের মাঝে আশার সঞ্চার জাগিয়েছেন মো. ছানোয়ার হোসেন শরিফ। সোনার বাংলা ট্রাইকো ডার্মা নামে একটি প্রজেক্টে কম্পোস্ট সার তৈরি করে গোটা উপজেলার কৃষকের মাঝে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠা শরিফ। বিভিন্ন জৈব পদার্থ, চা পাতা, হাড়ের গুঁড়া, গোবর, নালি, চিনির গাদ, সয়াবিন ডাস্ট, ককো ডাস্ট, নিমপাতা, কচুরিপানা, সবজির উচ্ছিষ্ট এবং কেঁচোর মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে জৈব সার উৎপাদন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন শরিফ।
পাশাপাশি তার প্রজেক্টের সঙ্গে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন বিষ মুক্ত বিভিন্ন ফসল, সবজি ও ফলের বাগান। বর্তমানে তার এই প্রজেক্টে দৈনিক ৩০/৩৫ জন শ্রমিক রাত দিন কাজ করে চলেছেন।
মঙ্গলবার তার প্রজেক্টে গেলে দেখা মেলে শরিফের সঙ্গে। নিজের হাতে গড়া এই প্রজেক্ট সম্পর্কে কথা বলেন তিনি। ব্যক্তি জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জনক শরিফ।
একান্ত আলাপ চারিতায় তিনি বলেন, বর্তমানে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করে ফসল ফলিয়ে মানুষের দেহে সরাসরি বিষ প্রয়োগ করাচ্ছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। অপর দিকে মাটি হারাচ্ছে তার ফসল উৎপাদনের কার্যকর ক্ষমতা। মানুষ এ সব রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে ভুগছেন। অথচ জৈব বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ফসল হয় অংকুরোদগম, শিকড়ের বর্ধন ও পুষ্টি গুণে ভরপুর থাকে। বর্ধিত করে শিকরের বৃদ্ধি, শিকরের অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে, মাটির গঠন ও কাঠামো উন্নত করে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উদ্ভিদকে ঘন থেকে ঘনতর করে। ফলস হয় সতেজ, তরতাজা, আকারে বড় ও সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। তিনি বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় এই জৈব বা কেচো সার তৈরি করতে গিয়ে কৃষকদের নিয়ে সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠকসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে কৃষকের মাঝে এই সারের গুণাগুণ ও ক্রমবর্ধমান ফসল ফলিয়ে তাদের ভেতরে আস্তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। প্রথম দিকে শত শত কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে এই সার বিতরণ করেছি এবং এখনো করছি। তিনি বলেন, কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়ে খুব কাছ থেকে কৃষকের দুঃখ কষ্টগুলো অনুভব করেছি। বাবার সঙ্গে মাঠে ফসল ফলাতে গিয়ে রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি। দুই হাতে কোদাল মেরেছি, লাঙ্গল টেনেছি। ছোট বেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল কৃষকের জন্য কিছু করার। তাদের সুখ, দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার। আজ অনেকটা সফল হয়েছি। কাজেই আমার অদম্য ইচ্ছা থেকেই এই পেশা বেছে নিয়েছি যাতে মরে গেলেও কৃষকের হৃদয়ে আমার জন্য সামান্য ভালবাসা থাকে।