অস্ট্রেলিয়ায় পিলবারা ক্রেটনে ৩৫০ কোটি বছর পুরনো ড্রেসার ফরম্যাশন নামের একটি পাথুরে শিলাস্তরে জৈব রেণু আবিষ্কার করেছেন গবেষকরা। বলা হচ্ছে, এখন অবদি এটিই পৃথিবীতে অণুজীব গঠনে ভূমিকা রাখতে পারা প্রাচীনতম রাসায়নিক উপাদানের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ। এ খবর দিয়েছে সায়েন্স এলার্ট।
খবরে বলা হয়, পৃথিবীর এই অংশে আদি প্রাণ গঠনের প্রমাণ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই আবিষ্কার। এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া পৃথিবীর দুটি প্রাচীনতম ও উন্মুক্ত প্রাণবাহী ভূখণ্ডের একটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার এই পাথুরে শিলাস্তর। ধারণা করা হচ্ছে, আর্কিয়ান কাল থেকে টিকে আছে শিলাস্তরটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ড্রেসার ফরম্যাশনের হাইড্রোথার্মাল পাথরে আদিম পৃথিবীতে স্থলে বসবাসকারী প্রাণের প্রাচীনতম অস্তিত্ব থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন গবেষকরা। ৩৫০ কোটি বছর আগের জটিল অণুজীবের বাস্তুসংস্থানের স্পষ্ট প্রমাণও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এখন, নতুন এক গবেষণায় জার্মানির বিজ্ঞানীরা আদিম প্রাণ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে এমন সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক মিশ্রণের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছেন। বারাইট মিনারেলের ভেতর প্রাণ অণুজীব গঠনের সঙ্গে জৈবিকভাবে প্রাসঙ্গিক জৈব রেণু পেয়েছেন তারা।
জার্মানির ইউনিভার্সিটি অব কলগনের জিওবায়োলজিস্ট হেলগে মিসবাক বলেন, বারাইটগুলো জীবাশ্মযুক্ত অণুজীবের অংশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
সেগুলোয় আচড় পড়লে পচা ডিমের মতো গন্ধ বের হয়। সেখান থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল যে, এতে জৈব উপাদান থাকতে পারে যেগুলো হয়তো প্রাথমিক যুগের অণুজীবগুলোর জন্য পুষ্টি হিসেবে কাজ করতো।
আদিম মাইক্রোবগুলোর রাসায়নিক উপাদান হিসেবে জৈব রেণুর ভূমিকা নিয়ে বহু আগ থেকেই ধারণা করে আসছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এখন অবধি এ বিষয়ে সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে খুঁজে দেখতে মিসবাক ও অন্যান্য গবেষকরা ড্রেসার ফরম্যাশনের বারাইটগুলো পরীক্ষা করে দেখেন। বারাইট মিনারেলগুলো শত শত কোটি বছর পুরনো তরল পদার্থ ও গ্যাস সংরক্ষণ করে রাখতে সক্ষম।
নানা ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বারাইটগুলো বিশ্লেষণ করেন বিজ্ঞানীরা। তাদের পরীক্ষায় বের হয়ে আসে, পরিচিত ও অনুমিত বিপাকীয়ভাবে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন প্রকারের জৈব রেণু। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাসিটিক এসিড, মিথানেথিওল এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো বিভিন্ন গ্যাস।
বারাইট পাথরের ভেতর ও সেগুলোর সংলগ্ন স্ট্রোমাটোলাইটস নামের জৈবস্তরে এসব রাসায়নিক পদার্থের কাছাকাছি অবস্থান থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, প্রাচীন রাসায়নিকই পদার্থগুলো কোনো এক কালে হাইড্রোথার্মাল তরল পদার্থ (ফ্লুইডস) বহন করতো ও সেগুলো আদিম অণুজীব গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে।
আদিম অণুজীবের পুষ্টি হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারা ওই রাসায়নিক পদার্থগুলোর পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা আরো কিছু উপাদান পেয়েছেন যেগুলো বিভিন্ন কার্বন-ভিত্তিক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার মূল ভিত্তি হিসেবে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে, যা থেকে অণুজীব বিপাক শুরু হয়ে থাকতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলেন, অন্যকথায়, জীবন সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট মিথাইল থিয়োঅ্যাসিটেটের প্রধান উপাদানগুলো ড্রেসার ফরম্যাশনে বিদ্যমান ছিল।