আমার আজীবন মনে থাকবে নভেম্বর, ১৯৯২ সালের কথা। আটাশ বছরের একজন বিচারক হিসেবে আমি অকল্যান্ড থেকে সানফ্রান্সিসকো গাড়ি চালিয়ে ছুটে গিয়েছিলাম নবনির্বাচিত দু’জন ইএস সিনেটর বারবারা বক্সার এবং ডাইনে ফাইনস্টেইনকে অভিনন্দন জানাতে। তারা ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রথম নারী সিনেটর এবং একইসঙ্গে প্রথম কোনো স্টেট থেকে একসঙ্গে সিনেটে প্রতিনিধিত্বকারী নারী। তাদের নির্বাচনটি হয়েছিল সকল নারীদের উৎসাহ দিতে বিশ্বব্যাপী পালিত নারী বর্ষে।
আমি বাইশ বছর আগের সেই ঘটনার কথা মনে করছি ২০১৫ সালের জানুয়ারির শুরুর দিকে সিনেটর বক্সারের একটি ভিডিও পোস্ট এবং তার নাতি জ্যাকের সঙ্গে আলাপের সময়। সে তা বলছিল খুব যত্ন করে যে, টানা ৩ দশক কংগ্রেসে এ বিষয়টি নিয়ে সে লড়াই করেছিল। একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত সমাজ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারী অধিকার, পরিবেশ রক্ষা, নাগরিক অধিকার, মানবাধিকার নিশ্চিত করার ইস্যুতে তিনি যেনো লড়াইয়ে হাল ছেড়ে না দেন। কিন্তু বক্সার যখন কথা বলছিল জ্যাকের সঙ্গে সে চাইছিল সে যেনো ক্যালিফোর্নিয়া চলে আসে এবং সে এটিও বলে যে, বক্সার পুনরায় নির্বাচনে অংশ নেবে না।
২০১৬ সালের নভেম্বরে দু’বছর চলে গেছে, এ সময় আমার একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার ছিল। আমি কি সিনেটর বক্সারের জায়গায় নির্বাচন করতে যাচ্ছি? যদি সেই সুযোগ পাওয়া যায় তবে আমাদের দাবিগুলো ক্যালিফোর্নিয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবো। ইউএস সিনেটর নির্বাচিত হলে আমি এতদিন যা করেছি তা হবে আমার কাজেরই বাড়তি অংশ। আমার কম বেতনের যে বোঝা পরিবারগুলোর ওপর রয়েছে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে, লড়াই করতে হবে বাড়ি ভাড়ার বিরুদ্ধে এবং একটি ভঙ্গুর বিচার ব্যবস্থা থেকে মানুষদের বের করে আনতে এবং শিক্ষার্থীদেরকে আকাশছোঁয়া টিউশন ফি’র বোঝা থেকে বাঁচাতে; প্রতারণার শিকারদের বাঁচাতে, অভিবাসী সম্প্রদায়কে বাঁচাতে এবং নারী ও বৃদ্ধ মানুষদের জন্য কাজ করতে। আমি জানি এটা নির্ভর করছে বক্তব্য যতো জোরালোভাবে উপস্থাপন করা যাবে ততই তা জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব পাবে এবং নীতি হিসাবে গৃহীত হবে।
আমি আমার প্রার্থীতা ঘোষণা করি ২০১৫ সালের ১৩ই জানুয়ারি। এরকম ভাবে আরো ৩৩ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। ডগের জন্য এটা ছিল প্রথম কোনো বড় ধরনের প্রচারণায় অংশ নেয়ার বিষয়ে নতুন কোনো পরিবেশ। আমার এখনো হাসি পায় যখন রিপোর্টাররা প্রশ্ন করে আমার জীবন নিয়ে নির্মিত ছবিতে কে অভিনয় করবে? আমি প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলি, আমি আসলে জানিনা। ডগ ছিল খুবই যত্নশীল। সে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছিল এবং বলেছিল ব্র্যাডলি কুপারকেই সে বেছে নেবে।
প্রচারণার সময় আমি যতো মানুষের সঙ্গে সম্ভব মিটিং করেছি তাদের উদ্বেগগুলো যত্নসহকারে শুনেছি এবং এগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা সাজিয়েছি। যখন প্রচারণা চলছিল তখন আমরা একটি কামোজি বাস তৈরি করেছি। কারণ, এই বিশাল আকৃতির ইমোজির ক্যারিকেচারটি ছিল আমারই ছবি। ক্যলিফোর্নিয়ার পৃথক ‘জাঙ্গল প্রাইমেরি’ ধরনের কারণে আমাকে ডেমোক্রেট প্রার্থী লরেটা স্যানচেজের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছিল। তিনি বহুকাল ধরেই কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন কঠিন প্রতিপক্ষ যে শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে চান। রাজনীতিতে সেরা কিছু মানুষ ছিল বলে আমি ছিলাম ভাগ্যবান। তাদের মধ্যে ছিলেন মেধাবী প্রচারণা ব্যবস্থাপক জোয়ান রড্রিগেজ, কৌশলগত উপদেষ্টা সন ক্লেক, এইচ স্মিথ, অ্যালি ক্যাপল এবং স্টাফ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের দল। আমার পোষ্য কন্যা হেলেনাও এ দলে ছিল। সে মূলত একটি নিউজ লেটার প্রকাশ করতো। এতে আমাদের যেসব প্রচেষ্টা ছিল তার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হতো। প্রচারণার যতোগুলো দিক রয়েছে আমার টিম তার সবগুলোই সামলে নিচ্ছিল। তাদের ছাড়া আমি কখনই এক্ষেত্রে সফল হতে পারতাম না।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে