প্রায় শান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ক’মাসে আচমকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা এবং তাদের উল্লেখযোগ্য অংশের ভারতে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে দিল্লির সঙ্গে পাকাপোক্ত আলোচনা চায় ঢাকা। শনিবার থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দু’দিনের বৈঠকের এজেন্ডায় বিষয়টি রাখা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, গত ডিসেম্বরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স-বিএসএফ’র মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে স্পর্শকাতর এ ইস্যুতে কথা হয়েছিল। ওই সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘেঁষা মিজোরাম রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের ঘাঁটির অস্তিত্ব আছে বলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে অবহিত করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবস্থান করছে বলে ভারত বরাবরই অভিযোগ করে। পাল্টাপাল্টি ওই অভিযোগ বিষয়ে ঢাকা কার্যকর আলোচনা এবং তথ্য-প্রমাণ আদান-প্রদানে আগ্রহী। স্মরণ করা যায়, দীর্ঘ চার বছর পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে এই বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. শহিদুজ্জামান এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন অজয় কুমার ভাল্লা। দুইদিনের ওই বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বর্ডারে ফেন্সিং, সীমান্ত বাহিনী পর্যায়ে যোগাযোগ বৃদ্ধি, বর্ডার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমঝোতা, মাদক, অস্ত্রসহ বিভিন্ন চোরাচালান, মানবপাচারসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস, জাল অর্থ, বিছিন্নতাবাদ, ভিসাসহ অন্যান্য বিষয়েও কথা হবে। সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিষয়ে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব অঙ্গীকারাবদ্ধ। ওই অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে। হত্যা ঘটনা কমেছে কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়নি। অত্যাসন্ন বৈঠকে বিষয়টি ঢাকার তরফে জোরালোভাবে উত্থাপন করা হবে বলে জানান তিনি। ওই কর্মকর্তার মতে, আগে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের জন্য গরু চোরাচালানকে দায়ী করা হতো, কিন্তু বর্তমানে গরু চোরাচালান অনেকটাই কমেছে। কিন্তু মাদক চোরাচালান বেড়ে গেছে। এগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা নিয়ে দুই সচিবের বৈঠকে আলোচনা হবে। ভারতের বেশির ভাগ স্থলবন্দর এখনও বন্ধ রয়েছে এবং এর ফলে বাংলাদেশিরা স্থলপথে ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। এ কারণে অনেক রোগী এবং অন্যান্য জরুরি কাজে ভারতে গমনকারীরা বিপাকে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈধ ভিসাধারীদের ভারতে প্রবেশ এবং প্রত্যাবাসন সহজীকরণের বিষয়েও বৈঠকে কথা হবে। গত ২৯শে নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর প্রেক্ষাপটে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফর স্থগিত হয়ে যায়।