জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুঁতেরা মনে করেন এলডিসি থেকে বাংলাদেশ কিংবা যেকোনো রাষ্ট্রের উত্তরণকে কেবলমাত্র জিডিপি’র কৌশলগত পরিমাপ দিয়ে বিবেচনা না করে এর বহুমাত্রিক ঝুঁঁকি সূচক বিবেচনায় নিতে হবে। রাষ্ট্রগুলোকে উত্তরণের জন্য শাস্তি নয় বরং পুরস্কার দেয়া উচিত এমন মনোভাব পোষণ করে তিনি বলেন, উত্তরণ বা উন্নতি কারও জন্য শাস্তি হতে পারে না বরং এটি হতে পারে পুরস্কার। যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে মহাসচিব এসব কথা বলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিসি ক্যাটেগরি থেকে উত্তরিত হতে যাচ্ছে মর্মে সন্তুষ্টির কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলডিসি থেকে নিজেদের বের করে আনার চেষ্টায় থাকা দেশগুলোর জন্য উত্তরণ-পরবর্তী নতুন সহায়তার বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য উন্নয়ন অংশীদার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রভাব কাজে (গুড অফিস ব্যবহার) লাগানোর অনুরোধ করেন। জবাবে মহাসচিব এ নিয়ে ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে) ওই ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচারিত আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, বৈঠকে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের অতীত রেকর্ডের উদাহরণ টেনে মহাসচিব বলেন, কোনো ঝুঁঁকি মোকাবিলার বৈশ্বিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বদাই শীর্ষস্থানে রয়েছে।
তাই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশের এ ধরনের সাফল্য দেখে তিনি মোটেও অবাক হননি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির উচ্চকিত প্রশংসা করেন। আলোচনাকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিব উভয়েই সম্মত হন যে, করোনার ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচিত করা উচিত। মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানে বাংলাদেশ যে উদারতা দেখিয়েছে তার ভূয়সী প্রশংসা করে মহাসচিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন হলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। এ সময় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তা করতে জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে বলে তিনি জানান। ভাসানচরে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে মহাসচিবকে অবহিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান। বৈঠকে জলবায়ু কর্মসূচিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জলবায়ু-অর্থায়নকে সচল রাখতে মহাসচিবের আহ্বানকে স্বাগত জানান। ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জন এবং এ বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠেয় কপ-২৬ সফল করতে জাতিসংঘের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে বলে জানান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করা তার জীবনের যুদ্ধ বলে অভিহিত করে মহাসচিব বলেন, অভিযোজন কৌশল বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত জলবায়ু তহবিলের ৫০ ভাগ বরাদ্দ পেতে দাতাদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন তিনি। উপকূলবর্তী অঞ্চলে ব্যাপক অভিযোজন কর্মসূচি এবং নদী ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে অসাধারণ হিসেবে উল্লেখ করেন গুঁতেরা। বৈঠকে অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে যুগপৎভাবে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম এবং মহাসচিবের পুনর্নির্বাচন ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে অংশগ্রহণ করতে মহাসচিবকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভার্চ্যুয়াল ওই বৈঠকে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাও যুক্ত ছিলেন।