পাঁচদিনের মধ্যে একবার বাইরে আসার সুযোগ হয়েছে। সেই সুযোগে তারা প্রাণ ভরে নিয়েছেন নিঃশ্বাস। এরপর আবারো বন্দি ঘরের চার দেয়ালে। একেবারে যেন কারাগারের পরিবেশ। তবে একটু ব্যতিক্রম, বাইরে যেতে না পারলেও ভিডিও কলে কথা বলার সুযোগ আছে। কিন্তু তাতে কী! এমন পরিবেশকে জেল ভাবা ছাড়া আর কিই বা বলা যায়! অবশ্য আর মাত্র দুইদিন। এরপর বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডে খোলা আকাশের নিচে অনুশীলন করতে পারবে। তবে পরের ৭ দিন এই ব্যবস্থাও থাকবে কোয়ারেন্টিনের মধ্যেই।
তবে প্রথম সপ্তাহটি হয়তো টাইগার ক্রিকেটারদের জীবনের প্রথম জেল অভিজ্ঞতার মতই হয়ে থাকবে। গতকাল ভিডিও বার্তায় জাতীয় দলের স্পিন তারকা মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন, ‘বুঝতেই পারছেন কী রকম কাটছে। এই প্রথম হোটেলের রুমের ভেতর এরকম পাঁচটা দিন কাটিয়েছি। প্রথম দিকে সময় কাটছিল না। কারও সঙ্গে দেখাই হয়নি। তিনদিন তো কারও সঙ্গে দেখাই হয়নি। ফোনে-ফোনে কথা হয়েছে সবার সঙ্গে, ভিডিও কলে কথা হয়েছে এক রুম থেকে আরেক রুমে। প্রথমদিকে বোরিং লাগছিল, সময় কাটছিল না। এখন যেহেতু পাঁচ দিন কেটে গেছে, আশা করি আরও দুইদিন কেটে যাবে।’
হ্যাঁ, পাশাপাশি রুমে থাকলেও কারো সঙ্গে সরাসরি দেখা করার সুযোগ নেই। বিদেশে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে এমন টাইগারদের এমন অভিজ্ঞতা কোনোকালেই ছিল না। এই কারণ সবারই জানা। ভয়াবহ করোনা মহামারির কারণেই এমন কঠিন কোয়ারেন্টিন আইন নিউজিল্যান্ডে। প্রথম ৭ দিন আইসোলেশন, এখানে খাবারও পৌঁছে দেয়া হবে রুমের দরজায়। এর পরের যে ৭ দিন সেখানে অনুশীলনের সুযোগ আসবে তবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে। আশার বিষয় বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা দুটি করোনা পরীক্ষাতেই নেগেটিভ এসেছেন। এখন শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা। কিন্তু তার আগে যে ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা তা ভীষণ হতাশারই বললেন অফস্পিনার মিরাজ। তিনি বলেন, ‘প্রথম তিন দিন তো রুমের ভেতরেই ছিলাম। তারপর আধা ঘণ্টা করে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েছি সবাই। আমি যেদিন প্রথম বেরিয়েছিলাম (শনিবার), শুরুর দিকে মাথা একটু ঘুরছিল। তারপর আস্তে আস্তে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঠিক হয়ে গেছে। তিন দিন ঘরের ভেতর যে বন্দি ছিলাম, আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, জেলখানায় আছি। খুব হতাশ লাগছিল। দেখেন তিন-চারদিন রুমে কাটানো, একইভাবে এটা আসলে একটু আমাদের জন্য আনকমফর্টেবল।’
১২ মাস পর গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। আগেই জানা ছিল করোনা মহামারির কারণে সেখানে কঠিন পরীক্ষা দিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে হবে। ক্রাইস্টচার্চে পা রেখে নিউজিল্যান্ডের সেনাবাহিনীর তৈরি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে প্রবেশ করে তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহা রিয়াদের দল। প্রথম করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ায় ক্রিকেটাররা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নিজ কক্ষ থেকে বের হতে পারছেন। গতকাল থেকে দিনে দুই বেলা বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এতে অবশ্য কিছুটা স্বস্তিও ফিরেছে। দিনে ৩০ মিনিটের এই মুক্তির আনন্দ নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘যখন বাইরে বের হলাম, আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিলাম, তখন ভালো লেগেছে। পরে যখন রুমে ফিরে গেছি, তখন নিজেকে একটু সতেজ মনে হয়েছে। এই যে ত্রিশ মিনিটের জন্য বাইরে আসতে দেয়, এটা ভালো লাগে যখন রুমে ফিরে যাই।’
তবে সত্যিকারের স্বস্তি মিলবে যখন অনুশীলনের সুযোগ আসবে। আর তাই অধীর অপেক্ষায় মিরাজরা। তিনি বলেন, ‘ছয়-সাত দিন পর যখন আমরা জিম এবং মাঠে যেতে পারবো, তখন আমাদের ভালো লাগবে। এখন হয়তো সময়টা কাটছে না। জিমে আমরা যদি কিছু কাজ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের জন্য সহজ হতো, সময়টা কেটে যেত, ফিটনেস ভালো হতো। সুযোগটা আর কয়েক দিন পর আসবে আশা করি তখন ভালো হবে।’
নিউজিল্যান্ড সফরে তিনটি ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। ডানেডিনে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে মাঠে গড়াবে আগামী ২০শে মার্চ।