× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মিয়ানমারে বিক্ষোভ অব্যাহত, সুচির বিরুদ্ধে আরো দুই অভিযোগ, নিন্দা

শেষের পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
২ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার

গুলিতে একদিনে ১৮ বিক্ষোভকারী নিহত হলেও পিছপা হচ্ছেন না মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী মানুষ। তারা অব্যাহতভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। ওদিকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ভয়াবহ সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ সহ বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিধর দেশ। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরাঁ এ সহিংসতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সহিংসতাকে ভয়াবহ সহিংসতা বলে অভিহিত করেছেন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক গারনিউ সেনাবাহিনীর প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহারকে 
আতঙ্কজনক বলে অভিহিত করেছেন। উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিউর টম অ্যানড্রুজ বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রতিক্রিয়া জোরালো করলেও সামরিক জান্তা তার কাজ চালিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
এ সময় তিনি মিয়ানমারের ওপর বৈশ্বিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, অধিক থেকে অধিক দেশের পক্ষ থেকে অবরোধ, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ব্যবসার বিরুদ্ধে অবরোধ এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদের বিচারের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিন্দা জানানোকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি। কিন্তু নিন্দা জানানোই যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের চোখের সামনে মিয়ানমারে ভয়াবহতা নেমে আসছে। তা আরো খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে। তাই বিশ্বকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। এ অবস্থায় আসিয়ানভুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বিশেষ ভিডিও মিটিং হওয়ার কথা আজ মঙ্গলবার। পার্লামেন্টে এ কথা বলেছেন সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়েন বালাকৃষ্ণাণ। তিনি বলেছেন, আমরা এ সময় মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধির কথা শুনবো। এর আগে গত মাসে বালাকৃষ্ণাণ বলেছিলেন, নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা চালানো উচিত নয়। তিনি প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে আহ্বান জানিয়েছেন গতকাল সোমবার।

ওদিকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে সোমবার প্রথমবারের মতো ভিডিও লিংকের মাধ্যমে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। এ সময় তাকে দেখে সুস্থ মনে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। তবে এদিন তার বিরুদ্ধে আরো দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। শুরুতে সুচির বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ ছিল। তা হলো বেআইনিভাবে ৬টি ওয়াকিটকি রেডিও আমদানি করা। করোনাভাইরাস মহামারির সময় প্রটোকল ভেঙে তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছেন। নতুন অভিযোগের একটিতে বলা হয়েছে, আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে অথবা জনগণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে এমন তথ্য প্রকাশ করেছেন তিনি। অন্য অভিযোগ আনা হয়েছে টেলি যোগাযোগ আইনের অধীনে। সুচির মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য হয়েছে আগামী ১৫ই মার্চ। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও অনলাইন বিবিসি। একমাস আগে ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক জান্তা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে গদি দখল করে। গ্রেপ্তার করে তার প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট সহ শীর্ষ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। এর প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মিয়ানমারের জনতা। রোববার সেখানে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল পরিস্থিতি। একদিনেই সর্বোচ্চ ১৮ জন নিহত হয়েছেন। এদিন বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ ও সেনাবাহিনী সরাসরি গুলি চালায়। রক্তে স্নাত হয় মিয়ানমারের রাজপথ। এর নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরাঁ সহ বিশ্বের শীর্ষ নেতারা। তারা এমন নৃশংসতাকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন। এরপর সোমবার সুচিকে আদালতে হাজির দেখানো হয়। তবে তাকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে এখনো মুখ খোলেনি সামরিক জান্তা। তাদের দাবি নভেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। তাদের এ দাবির প্রতি কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। ওই নির্বাচনে সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ভূমিধস জয় পায়। তার দল পার্লামেন্টের শতকরা ৮৩ ভাগেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়। সেই নির্বাচনকে বানচাল করে দিয়ে এখন সেনারা নতুন নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কবে, কীভাবে সেই নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে কোনোই সময়সীমা বা পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি। জনতার দাবি নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ীদেরকেই ক্ষমতায় আসতে দিতে হবে। এর মধ্যে সুচিকে কোথায় রাখা হয়েছে সে বিষয়ে সামরিক জান্তা চুপ থাকলেও সোমবার রাজধানী নেপিডতে স্থাপিত একটি আদালতে তাকে দেখানো হয় ভিডিও লিংকের মাধ্যমে। প্রাথমিকভাবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল হতে পারে।

ওদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে দেশজুড়ে চলছে অব্যাহত বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। রোববার পুলিশ বা সেনাদের গুলিতে ১৮ জন মানুষ নিহত হলেও বিক্ষোভকারীদের মনোবল দুর্বল হয়নি। তাদের একজন থার নগে। অন্যদের সঙ্গে তিনি ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সরে যেতে বাধ্য করেছে। তবে থার নগে বলেছেন, যা-ই ঘটুক না কেন, আমরা অব্যাহতভাবে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবো। এটা আমার এলাকা। আমার প্রিয় এলাকা। এখন সব সময়ই শুনতে পাই গুলির শব্দ। আমরা বাড়িতেও নিরাপদ নই। ওদিকে রোববারের সহিংসতা নিয়ে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করেনি। ইয়াঙ্গুনের যে এলাকাকে আন্দোলনের হটস্পট বলে মনে করা হয়, সোমবার দিনের শুরুতে সেখানে পুলিশ, জনকামান, সামরিক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে এ সময় বিক্ষোভকারীরাও অভ্যুত্থানবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলো।

এদিন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কালে’তে বিক্ষোভকারীদের দেখা গেছে সুচির ছবি নিয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা স্লোগান দিচ্ছেন, আমাদের প্রয়োজন গণতন্ত্র। ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারে দেখা গেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাশিও’তে সমবেত হয়েছেন অল্পকিছু মানুষ। এ সময় তাদের দিকে পুলিশকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। বাগান শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল বিক্ষোভকারীরা।
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর