মিয়ানমারের বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি এবং সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইয়ের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে আসিয়ান। তাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান করাতে চায় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর এই সংগঠন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতিকে শান্ত করতে এবং সেখানে রাজনীতিতে যে উত্তাল পরিস্থিতি তা মোকাবিলার জন্য একটি চ্যানেল খুুঁজতে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ বিশেষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিভিয়েন বালাকৃষ্ণান বলেছেন, আজকের আলোচনায় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা খোলামেলা কথা বলবেন। ভিডিওকলের মাধ্যমে এই আলোচনা হবে। এই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা সামরিক জান্তার একজন প্রতিনিধির। তাকে জানানো হবে, মিয়ানমারের সহিংসতায় তারা হতবাক।
সোমবার দিনশেষে একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বালাকৃষ্ণাণ বলেছেন, বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচি ও সামরিক জান্তার মধ্যে আলোচনাকে উৎসাহিত করবে আসিয়ান। সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়- সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আছেন। অন্যদিকে সামরিক নেতৃত্ব আছেন। তাদের মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাদেরকে এক করে দিতে আমাদের সাহায্য করা উচিত। কিন্তু আসিয়ানের এমন উদ্যোগে ক্ষুব্ধ অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারী গ্রুপগুলো। ক্ষমতাচ্যুত আইন প্রণেতাদের একটি গ্রুপতো সামরিক জান্তাকে একটি ‘সন্ত্রাসী’ গ্রুপ বলে অভিহিত করেছে। জাতিসংঘে এই কমিটি নিযুক্ত দূত সা সা বলেছেন, সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন এই অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় যাওয়া মোটেও উচিত হবে না আসিয়ানের। উল্লেখ্য, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো হলো মিয়ানমার, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই এবং ভিয়েতনাম।
সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে দু’দিন আগে মিয়ানমার ছিল রক্তাক্ত। একদিনে সেখানে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কমপক্ষে ১৮ জনকে। তারপরও বিক্ষোভ থেমে নেই। ক্ষোভ এবং রাজপাথে জনতার উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছেই। আজও সেখানে বড় আকারে বিক্ষোভ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন কার্যত শান্ত রয়েছে। বেশির ভাগ দোকানপাট খোলেনি। কিছু কিছু স্থানে বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ করছেন। এতে আরো বলা হয়, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সুচির সরকারকে ১লা ফেব্রুয়ারি উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক জান্তা। তারপর থেকেই বিক্ষোভ হচ্ছে। প্রথম দিকে সরকার কিছুটা নমনীয় থাকলেও দু’দিন আগে তারা সরাসরি গুলি চালায়। এতে কমপক্ষে ১৮ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। সোমবার ইয়াঙ্গুনে কয়েক শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে। এরপরেই তারা পার্শ্ব সড়কগুলোতে সমবেত হয়ে রাবার বুলেট ছুড়েছে। ওদিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইংয়ের একটি বার্তা পড়ে শোনানো হয়। তাতে তিনি বিক্ষোভকারীদের নেতা ও উস্কানিদাতাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে এবং সরকারি যেসব কর্মচারী কাজে যোগ দিচ্ছেন না তাদের প্রতি হুমকি দেন। উল্লেখ্য, মিয়ানমারে নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে সামরিক জান্তা। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হবে। তবে কবে, কখন সেই নির্বাচন হবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা জানাননি তিনি। ওদিকে দেশে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়। ফলে যদি সামরিক জান্তা নির্বাচন দেয়, তাহলে তা এক বছরের আগে হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।