× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পর্ব-৬৫ /আমরা ততক্ষণ থামবো না যতক্ষণ না জয়ী হই

এক্সক্লুসিভ

কাজল ঘোষ
৩ মার্চ ২০২১, বুধবার

আমার মা হচ্ছেন আমার দেখা মানুষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু আমি তার নিরাপত্তা নিয়ে বরাবরই অনিশ্চয়তা অনুভব করতাম। আমার ধারণা বড় সন্তান হিসেবে আমার ভেতর থেকেই এটি হতো। কিন্তু আমি জানতাম আমার মা ছিল টার্গেট। আমি তা দেখেছি এবং এটা আমাকে উন্মাদ করে তুলেছিল। আমার বুদ্ধিদীপ্ত মাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। যেখানে তাকে শুধুমাত্র তার আঞ্চলিকতার জন্য অনেক ছোট হতে হয়েছিল। তাকে নিয়ে আশেপাশের ডিপার্টমেন্ট স্টোরে কানাঘুষা চলতো।
কারণ তার মতো কৃষ্ণাঙ্গ নারীর পক্ষে এরকম পোশাক বা ব্লাউজ কেনা সম্ভব ছিল না।

আমি আরো দেখেছি, তিনি কোনো ধরনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কতোটা গুরুত্বসহকারে বাকবিতণ্ডায় অংশ নিতেন। যখনই আমরা দেশের বাইরে বেড়াতে যেতাম আমার মা চাইতেন মায়া এবং আমি যেন দেশের প্রচলিত রীতি আমাদের আচরণের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলি। ‘সোজা হয়ে দাঁড়াও, হাসাহাসি করো না। অধৈর্যভাব দেখাবে না। তিনি সব সময় সকল কিছু নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। তিনি জানতেন তার প্রতিটি কথা বিচার করা হবে এবং তিনি চাইতেন আমরাও যেন এর জন্য প্রস্তুত থাকি। আমার স্মৃতিশক্তি বলে প্রথমবার আমি এবং ডগ যখন কাস্টমস পার হচ্ছিলাম তখনও আমার মাসল মেমোরি সজাগ হয়ে গিয়েছিল। যদিও ডগকে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। সে খুব নীরিহভাবে অবাক হলো, আমাকে বললো, সমস্যা কি? কিন্তু আমরা দুটি ভিন্ন বাস্তবতার মধ্যে বড় হয়েছি। এই ঘটনা আমাদের দুজনেরই দৃষ্টি খুলে দিয়েছিল।

আমেরিকা হচ্ছে জাতিগতভাবে অভিবাসীদের দ্বারা তৈরি একটি রাষ্ট্র। কিন্তু দিন দিন আমরা অভিবাসীদের ভয় পেতে শুরু করেছি। দিন দিন আমেরিকার সংস্কৃতিতে এই ভয় গেড়ে বসেছে এবং একদল মানুষ এই ভয়কে পুঁজি করে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা লক্ষণীয় যে, ১৮৫০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে থার্ড পার্টি মুভমেন্ট হয়েছিল। এটা ছিল কথিত নো নাথিং পার্টি। এটি ছিল একটি অভিবাসনবিরোধী জোট। ১৮৮২ সালে এক আইন বলে আমেরিকায় চীনা অভিবাসীদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৯১৭ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের একটি ভেটো বাতিল করে দেয় কংগ্রেস। যার অধীনে অভিবাসীদের শিক্ষাসুবিধাসহ বিভিন্ন অধিকারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ১৯৩৯ সালে প্রায় এক হাজার জার্মান ইহুদি নাৎসিদের হাত থেকে পালাতে সেন্ট লুইস জাহাজে করে আমেরিকায় এলে তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। ২০,০০০ ইহুদি শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য যে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল তা বাতিল করে দেয়া হয় এবং খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১,১৭,০০০ জাপানি অ্যানসেসট্রি নাগরিককে পরীক্ষামূলক থাকার অনুমতি দেয়।

সম্প্রতি বৈশ্বিক কারণে মধ্যবিত্তরা লাখে লাখে চাকরি হারায় আর খুব সহজভাবেই অভিবাসীরা এ বিষয়ে দোষারোপের লক্ষ্যে পরিণত হয়। যখনই বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে আমেরিকার তৃণমূল অর্থনীতি আঘাতপ্রাপ্ত হয় তখন একটি বড় সংখ্যক রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা অভিবাসীদের এর জন্য দায়ী করে। যদিও তারা একইসময়ে বিশাল আকারের নতুন চাকরির বাজার সৃষ্টি করতে বিল পাস করে। অভিবাসীরা যদিও আমেরিকা গঠনে সব থেকে বড় ভূমিকা পালন করেছে কিন্তু প্রতিটি বিপর্যয়ে তাদেরকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।

আমাদের দেশ গড়েছে অনেক মানুষ মিলেই। আর এই মানুষেরা এসেছে সারা দুনিয়া থেকে এবং শতাব্দীজুড়েই অভিবাসীরা অর্থনীতিকে মজবুত করতে কাজ করে চলেছে। তারা শিল্পায়নে শ্রম দিয়েছে এবং জ্ঞান ও বিজ্ঞানে বুদ্ধি ব্যয় করেছেন। দেশের সেরা ব্র্যান্ডগুলো গড়ে ওঠার পেছনে অভিবাসী এবং তাদের সন্তানদের সৃজনশীল চিন্তা রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ল্যাবি এসটর্স, ইস্তি লডার। গুগলের সহ প্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ছিলেন একজন রুশ অভিবাসী। ইয়াহুর সহ প্রতিষ্ঠাতা জেরি ইয়াং এসেছেন তাইওয়ান থেকে। ইন্সটাগ্রামের সহ প্রতিষ্ঠাতা মাইক ক্রিগার এসেছেন ব্রাজিল থেকে, হাফিংটন পোস্টের প্রতিষ্ঠাতা আরইয়ারা হাফিংটন গ্রিসে জন্মেছিলেন। ২০১৬ সালের জরিপে দেখা গেছে, সিলিকন ভ্যালির বিলিয়ন ডলার ব্যবসাগুলোর অর্ধেকের বেশি এসেছে অভিবাসীদের মাধ্যমে।

আমি চিরলার পডিয়ামের সামনে দাঁড়ানো। আমার পেছনে আমেরিকার জাতীয় পতাকা এবং বেলুনে আবৃত। সান ফার্নান্ডো ভেলি থেকে আসা একজন মা স্পেনিশ ভাষায় বক্তব্য রাখছিলেন। আমি তার কথাগুলো অনুবাদ করছিলাম কিন্তু তার মর্মার্থ বুঝতে না পারলেও যন্ত্রণা উপলব্ধি করতে পারছিলাম। তার বলার ভঙ্গি এবং দৃষ্টির মাধ্যমে আমি তা বুঝতে পারছিলাম। সে তার সন্তানদের বোঝাতে চাইছিল সবকিছু ঠিক আছে, কিন্তু সে জানে আসলে ঠিক নেই।
আমি ভাবছিলাম সেই ষাট লাখ আমেরিকান শিশুর কথা যারা অন্তত একজন পরিবারের বাইরে কারও সঙ্গে থাকছে তাদের কথা। তারা যে ট্রমা এবং মানসিক চাপে রয়েছে তা আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নেয়া নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে অনেক কথা আমি শুনেছি। মায়েরা তাদের সন্তানদের বলে ‘যদি তোমার মা কাজ শেষে ঠিক সময়ে বাসায় না পৌঁছায় তাহলে তুমি তোমার চাচা-চাচিকে ফোন করো- যেন তোমাকে নিয়ে যায়। আমি যখন গৃহ নির্যাতনের শিকারদের নিয়ে কাজ করছিলাম তখন আমি এই পরিস্থিতি ভালো করে উপলব্ধি করি। যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই অভিবাসীদের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করা দরকার।

এসব পরিবারের সঙ্গে কাজ করা এডভোকেটরা আমাকে জানিয়েছেন বাবা-মাকে হারানোর ভয় নিয়ে শিশুরা কেমন আতঙ্কে থাকে। বাবা- মায়েরা তাদের সন্তানদের চিকিৎসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে দেয় এই ভয়ে যে আইসিই তাদের খুঁজে বের করে ফেলবে। বেশির ভাগ বাবা-মা-ই আতঙ্কে থাকেন তাদেরকে যদি আমেরিকা ছাড়তে হয় তাহলে সন্তানের কি হবে? এই সন্তানদের কি আমেরিকায় থাকার অধিকার রয়েছে। নাকি তাদেরকে তাদের বাবা-মা’র সঙ্গে এমন একটি দেশে যেতে হবে যার কিছুই তারা চিনে না। দুটি রাস্তা কল্পনা করাই ছিল হৃদয়বিদারক। শুধু অবৈধরাই যে এই আতঙ্কে থাকতেন তাই নয়। গবেষণা অনুযায়ী ল্যাটিন আমেরিকা থেকে আসা সকল অভিবাসী হোক সে বৈধ বা অবৈধ প্রত্যাবাসনের ঝুঁকিতে ভোগেন। আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করতে নেমেছিলাম।

আমি বললাম, এখনই সময় একসঙ্গে কাজ করে দেশকে গঠন করার। আমরা এখন আমাদের দেশের আদর্শ গঠনের লড়াই শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা ততক্ষণ থামবো না যতক্ষণ না জয়ী হই। আমি দুদিনের মাথায় চিরলা ছেড়ে দিলাম। আমি জানতাম আমরা সকলে মিলে একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে যুদ্ধে আমরা ছিলাম আন্ডার ডগ। সামনে যা আসছে তার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে।
কমালা হ্যারিসের অটোবায়োগ্রাফি
‘দ্য ট্রুথ উই হোল্ড’ বই থেকে


 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর