মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে বুধবারও অন্তত ৯ গণতন্ত্রপন্থীর মৃত্যু হয়েছে। দেশটির প্রধান শহরগুলোতে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে একটানা জান্তা সরকারবিরোধী আন্দোলন চলছে। তবে গত কয়েকদিনে আন্দোলন দমনে কঠিন পথে হাটছে দেশটির বর্তমান সরকার। জাপান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বুধবার গুলি চালানোর আগে ভালো করে সতর্কতাও জারি করা হয়নি। আন্দোলনে যোগ দেয়া সি থু মং জানান, প্রথমে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও স্টান গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। এরপর তারা সরাসরি গুলি করতে শুরু করে। সমাবেশে হামলা নিয়ে দেশটির মিলিটারি কাউন্সিলে যোগাযোগে চেষ্টা করলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়।
নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক কিশোর।
বুধবার গুলিতে সবথেকে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে মোনিওয়া শহরে। সেখানে এক নারীসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে স্থানীয় একটি গণমাধ্যমে সম্পাদক জানান, আমরা পরিবার ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে ৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ৩০ জন। এছাড়া, দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালেতে ২ জন নিহত হয়েছেন। ইয়াংগুনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরো একজন।
গত ১লা ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে গণতন্ত্রের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে গোটা মিয়ানমার। এখন পর্যন্ত আন্দোলনে ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
আবুল কাসেম
৩ মার্চ ২০২১, বুধবার, ৭:০৭কথা বলার, মত প্রকাশের, স্বাধীনভাবে লেখার ও বাধামুক্ত চলাচল করার জন্য যুগে যুগে কতো মানুষের জীবন বলি হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবুও মানুষের মুক্তি মিলছেনা। কর্তৃত্ববাদী শাসন এমনই বিষাক্ত। হিংসা বিদ্বেষ ও জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার খায়েশ বিষাক্ত একটা 'বিষ'। যার ক্রিয়া মানুষের হৃৎপিণ্ড অচল করে দেয় এবং দুমড়ে মুচড়ে জীবন প্রদীপ নিঃশেষ করে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ মন খুলে মনের কথা বলতে না পারলে মনের ভেতর কথাগুলো বাষ্পীভূত হয়ে পড়ে এবং প্রতিনিয়ত তোলপাড় সৃষ্টি করে। পরিনামে মানুষ বিকারগস্ত হয়ে যায়। ফলে একটা সময় মানুষের মনের ভেতর জমা বাষ্প বিস্ফোরিত হয়ে যায় এবং দিকবিদিকজ্ঞানশুন্য মানুষ মনের অজান্তেই বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দেয়। একজন সবাক মানুষ কৃত্রিম উপায়ে বা নিয়ন্ত্রিত হয়ে বোবা হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব। গণমানুষের গণবিস্ফোরণের তোড়ে এক সময় কর্তৃত্ববাদীদের সম্বিত ফিরে আসে বটে ; কিন্তু, ততক্ষণে বহু মানুষের জীবনে নেমে আসে ধ্বংসযজ্ঞ । মায়ের বুক শূন্য হয়। সন্তান হয় এতিম। বধু হয় বিধবা। শাসকদের কর্তৃত্বের মোহ বা নেশাগ্রস্থের কাছে মানুষের জীবন ও সম্পদ তুচ্ছ হয়ে পড়ে। জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে ন্যায় ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে আর দ্বন্দ্ব সংঘাত থাকেনা। সেজন্যই আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, "হে মুমিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাকবে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের যেন কখনো সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে, সুবিচার করবে, এটা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় করবে, তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ তার সম্যক খবর রাখেন।" সুরা আল মায়িদা। আয়াত-৮। পিতামাতা, ধনী-গরিব ও ছোটো বড়ো নির্বিশেষে সকলের জন্য ন্যায়বিচার করতে এবং ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "হে ঈমানদারগণ। তোমরা সর্বদা ইনসাফের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং আল্লাহর জন্য সত্যের সাক্ষী হিসেবে নিজেকে পেশ করো। যদি একাজটি তোমার নিজের অথবা তোমার পিতামাতার কিংবা তোমার নিজের আত্মীয় স্বজনের ওপরেও আসে। সে ব্যক্তি ধনী হোক কিংবা গরীব। তাদের উভয়ের চাইতে আল্লাহ তায়ালার অধিকার অনেক বেশি। অতএব তুমি কখনো ন্যায় বিচার করতে নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ করোনা। যদি তোমরা পেচানো কথা বলো কিংবা (সাক্ষ্য দেয়া থেকে) বিরত থাকো, তাহলে তোমারা যা কিছু করোনা কেনো আল্লাহ তায়ালা তার সম্যক খবর রাখেন।" সূরা আন নিসা। আয়াত-১৩৫। সুতরাং, ইনসাফ ও ন্যায়বোধের দৃষ্টিকোন থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করলে কারো কণ্ঠ রোধ করার প্রয়োজন পড়েনা। সুশাসনের জন্য এটা অপরিহার্য।