× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিমানে বসেই বিমানবালা আর এক সিআইএ এজেন্টের অসাধারণ প্রেমকাহিনী

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৩ বছর আগে) মার্চ ৫, ২০২১, শুক্রবার, ৬:০৬ অপরাহ্ন

১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বরে জোসেলিন নোয়াস্কি প্যান অ্যামেরিকান ওয়ার্ল্ড এয়ারওয়েজের একটি বিমানের প্রধান বিমানবালার দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্যারিস থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়া ওই ফ্লাইটেই তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। প্যান আমে কাজ করার দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বন্ধু বানিয়েছিলেন জোসেলিন। ২৩ বছর বয়সেই মরক্কো, নাইরোবি, বার্বাডোস, লাইবেরিয়া কিংবা বৈরুতে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। যদিও এই অসাধারণ জীবনে আসার কোনো ইচ্ছা তার ছিলনা। জোসেলিন ছিলেন নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সেইন্ট ভিনসেন্ট কলেজের বায়োলজির শিক্ষার্থী। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল চিকিৎসক হওয়া। কিন্তু গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারেন প্যান আম ফ্লাইট ক্রু নিয়োগ দিচ্ছে।
তারা দুজনই আবেদন করেন। জোসেলিন টিকে গেলেও বাদ পরেন তার বন্ধু। নিয়োগের পর প্রশিক্ষণ নেন জোসেলিন। তার প্রথম ট্রিপ ছিল বোয়িং ৭২৭ বিমানে করে বাহামাসের নাসাউতে। তিনি কখনই আর ফিরে তাকাননি এবং চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছাও জাগেনি তার মনে।
সিএনএনকে তিনি জানান, ১৯৭০ সালে প্রেম নিয়ে তিনি একদমই ভাবছিলেন না। মাত্র ৬ মাস আগেই তিনি এক পাইলটের সঙ্গে থাকা স¤পর্ক শেষ করেছেন। তার তখন ক্যারিয়ার ছাড়া আর কিছুই মাথায় ছিল না। ওই বছরের শেষ দিকে বিমান হাইজ্যাক নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরেছিল পুরো বিশ্বে। ফলে সিআইএ ও এফবিআই সদস্যদের আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিমানে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ঘটনার দিন জোসেলিনকে বলা হয়েছিল, এরকম দুজন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এ বিমানে যাচ্ছেন। একজন যাবেন ইকোনোমি ক্লাসে এবং অপরজন যাবেন ফার্স্ট ক্লাসে।

কিন্তু বিমান ছাড়ার সময় তারা আসতে দেরি করছিলেন। কারণ তারা প্যারিস থেকে স্কার্ফ কিনছিলেন, যা অ্যামেরিকা ফিরে গিয়ে মেয়েদের আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করবেন তারা। ফেরার পর দেরি করার অযুহাত দেয়ার সময় তাদের মধ্যে একজন জোসেলিনের সঙ্গে পরিচিত হলেন। তার নাম ছিল টাইলার হার্ডিং। সুদর্শন এই ব্যাক্তিকে প্রথম দেখেই ভালো লাগে জোসেলিনের। তবে জোসেলিন তখন প্রেমে আগ্রহী ছিলনা আর হার্ডিংও খুব আগ্রহ দেখায়নি প্রথমে। এ নিয়ে জোসেলিন বলেন, আমি তখন সুইডিশ কিছু মেয়ের সঙ্গে কাজ করছি। তারা ছিল অসাধারণ সুন্দরি। তাই কখনই ভাবিনি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আমি জিততে পারবো।

বিমান ছাড়ার পর থেকেই জোসেলিনের সঙ্গে নানা অযুহাতে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন হার্ডিং। জোসেলিন ভেবেছিলেন, তার মেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্যেই হার্ডিং এটা করছে। এক পর্যায়ে হার্ডিং সরাসরি জোসেলিনকে ডেটে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু জোসেলিন উত্তর দেন যে, তিনি তার যাত্রীদের সঙ্গে ডেটে যাননা এবং তার ধারণা হার্ডিং বিবাহিত। তবে হার্ডিং মনে করিয়ে দেন যে, তিনি আসলে সাধারণ যাত্রী নন। এসময় তার বয়স ছিল ২৯। থাকতেন ভার্জিনিয়াতে। জোসেলিনের তার সঙ্গে ডেটে যেতে কোনো বাঁধা ছিল না। তারপরেও একদমই অচেনা একজনের সঙ্গে ডেট করতে দ্বিধা হচ্ছিল তার। প্লেন নিউ ইয়র্কের কাছাকাছি পৌছানোর সময় যাত্রীদের কফি দিতে যাচ্ছিলেন জোসেলিন। হার্ডিংয়ের কাপে কফি ঢালার সময় তিনি জোসেলিনের চোখের দিকে তাকান। জোসেলিন জানান, তার নীল চোখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যান তিনি। কাপে কফি ঢালতে গিয়ে হার্ডিংয়ের পায়ে কফি ঢালতে থাকেন জোসেলিন। তার অবস্থা দেখে হার্ডিং হেসে ফেলেন এবং বলেন, এবার তোমাকে আমার সঙ্গে ডেটে যেতেই হবে।

বিষয়টা বন্ধু মালাকে জানালে তিনি জোসেলিনকে বলেন হার্ডিংকে তার কুইনসের অ্যাপার্টমেন্টে পার্টিতে নিমন্ত্রণ করতে। হার্ডিং পার্টিতে এসেছিলেন। সেখানে প্রায় তিন ঘন্টা দুজন আড্ডা দেন। তবে সেসময়ও জোসেলিন জানতে পারেননি হার্ডিং সিআইএ এজেন্ট। ওই পার্টির শেষেই জোসেলিনকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গেই হ্যা বলে দেন জোসেলিন।

এরপরই কাজের জন্য হার্ডিং যান তেহরান আর জোসেলিন যান রোমে। তবে এর আগেই বিয়ের বিষয়ে আরো সময় চান জোসেলিন। সে নিউ ইয়র্কে ফেরার পরই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন হার্ডিং। এরপর কিছুদিন তারা নিয়মিত ডেট করতে থাকেন। এরপর হার্ডিং আবারো তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন এবং জোসেলিন এবার নিশ্চিতভাবেই হ্যা বলে দেন। ক্রিস্টমাসের দিন তাদের এনগেজমেন্ট হয় এবং পরের বছর তাদের বিয়ে হয়। হানিমুনে তারা যান ফিজিতে। ফিরে এসে হার্ডিংয়ের বাড়িতেই ওঠেন তারা।

জোসেলিন জানান, আমরা একসঙ্গে অনেক দেশ ঘুরেছি। প্রায়ই হার্ডিং নানা কাজে দেশের বাইরে যেতো। একবার লাওসে সিআইএর এক মিশনে ৩ মাসের জন্য চলে যেতে হয়েছিল তাকে। এগুলো ছিল জোসেলিনের জন্য অনেক কঠিন। সেখানে তখন যুদ্ধ চলছিল। তারপরেও জোসেলিন সেখানে উড়ে যান হার্ডিংকে চমকে দিতে। এখন হার্ডিংয়ের বয়স ৮০ আর জোসেলিনের ৭৪। ৫ দশক ধরে তারা বিবাহিত। জোসেলিন জানান, কীভাবে ৫ দশক পার হয়ে গেছে তা তিনি টেরই পাননি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর