× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সাক্ষাৎকার / খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি

প্রথম পাতা

মরিয়ম চম্পা
৬ মার্চ ২০২১, শনিবার

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেছেন, আমাদের দেশে করোনার ক্ষেত্রে কতগুলো ফ্যাক্টর কাজ করেছে। আমাদের অধিকাংশ মানুষ খেটে খাওয়া। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সূর্যের আলো থেকে তারা ভিটামিন-ডি পায়। এটাও শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এ ছাড়া আমাদের দেশে বিভিন্ন রকম ভাইরাস ঘোরাফেরা করে। এসব ভাইরাস একটি আরেকটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। আংশিক হলেও প্রতিরোধ করে।
সিঙ্গাপুর থেকে টেলিফোনে মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ড. বিজন কুমার শীল বলেন, সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে আমাদের দেশে বিশেষ করে রাজধানীর বস্তিতে শতকরা ৭৪ ভাগ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি আছে। এবং সেখানে মানুষ মারা গেছে, অসুস্থ হয়েছে এ রকম রিপোর্ট কিন্তু খুবই কম আছে। ওখানকার মানুষের যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বা স্বাস্থ্যগত অবস্থা সেখানে কিন্তু বিভিন্ন রকমের ভাইরাস ঘোরাফেরা করে। এই খেটে খাওয়া মানুষদের খাদ্যতালিকা খুবই সাধারণ। দেখা গেছে বাজারে গিয়ে তারা সবচেয়ে ছোট মাছটি ক্রয় করে। আমরা হয়তো বড় মাছ ক্রয় করি। তাদের কায়িক পরিশ্রমটা খুব বেশি হয়। তাছাড়া সূর্যের তাপটা তাদের শরীরে বেশি লাগে আমাদের চেয়ে। এক্ষেত্রে দেখা যায় ইউরোপে করোনাটা ছড়িয়েছে শীতের মধ্যে। শীতে সাধারণত সূর্যের আলো কম থাকে, মানুষ ঘরের মধ্যে বেশি থাকে এবং ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। এজন্য ভাইরাসটি বেশি ছড়িয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মার্চ মাসে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। তখন কিন্তু আমাদের দেশে ইতিমধ্যে গরম পড়ে গেছে। তাপমাত্রা বেড়েছে। যার জন্য আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম ছিল। তাছাড়া দেখা গেছে যে পরিবারে একজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন বাকিদের মধ্যে ক্লোজ কন্টাক্টের কারণে কিন্তু অ্যান্টিবডি চলে এসেছে। যা তারা নিজেরাও জানতেন না। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ যাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি আছে তারা জানেই না। কিন্তু অ্যান্টিবডি আছে। হাঁচি-কাশিকে আমরা ওভাবে অসুখ মনে করি না। এ কারণে আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে যেভাবে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে অন্যান্য দেশে তা হয়নি। এটা একটি মূল কারণ। ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার যে দ্বিতীয় ঢেউটা হলো তখন কিন্তু তাদের অ্যান্টিবডির পরিমাণ ছিল ৯ থেকে ১০ ভাগের মতো। তার মানে ৯০ ভাগ মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি ছিল না। সুতরাং যখনই শীতকাল চলে এলো অক্টোবর থেকে ভাইরাস পুনরায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে আফ্রিকার ভাইরাসের ধরনটা আমার কাছে বেশ ভয়ঙ্কর মনে হয়েছে। এটা যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে। এটা ভারতে ইতিমধ্যে আঘাত হেনেছে। আমাদের দেশে কতোভাগ লোক ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে এবং হার্ড ইমিউনিটি এসেছে কি না জানতে চাইলে এই বিজ্ঞানী বলেন, এ বিষয়ে একটি স্টাডি প্রয়োজন ছিল। গত বছরের সেপ্টেম্বরে একটি স্টাডিতে বলা হয়েছে ৪৫ ভাগ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি এসেছে। যদি এটা বিদ্যমান থাকে তাহলে আমাদের দেশের ৬০ ভাগ মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি এসেছে। এটা স্টাডি না করে বলা মুশকিল। ব্যক্তিগত ধারণা থেকে বলছি আমাদের দেশে হার্ড ইমিউনিটি যথেষ্ট শক্ত। ভাইরাসটা খারাপভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। ইমিউন সিস্টেম খুব ভালো। আমরা একটি ভালো অবস্থানে আছি। সারা পৃথিবীর মধ্যে আমার মনে হয় বাংলাদেশ এমনই একটি দেশ যেখানে আক্রান্তের হার পাঁচ ভাগের নিচে এসেছে লকডাউন না করে।
তিনি বলেন, তবে আক্রান্ত এবং সংস্পর্শে আসার মধ্যে পার্থক্য আছে। পরিবারে একজন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছে। বাকিদের কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। সামান্য জ্বর এসেছে। এই মানুষের সংখ্যা কিন্তু অনেক। এরাই কিন্তু আমাদের দেশের ভাইরাসটিকে প্রতিহত করলো। আক্রান্তের হার কমেছে শুধুমাত্র তাদের জন্য। আক্রান্ত বোঝা যায়নি। কিন্তু অ্যান্টিবডি এসেছে এর সংখ্যা কিন্তু অনেক। ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে ড. বিজন বলেন, মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় প্যানডেমিকের সময় কিন্তু ভ্যাকসিনেশন হয় না। করা উচিত না। কিন্তু এখন পৃথিবীর যে দুর্ভোগ তাতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন প্রতিরোধ ক্ষমতা না আসুক। কিন্তু রোগের যে সার্কেল অর্থাৎ ৩০ দিন থেকে ১৫ দিনে কমে আসে এটা বড় একটি অর্জন। ভ্যাকসিন মূলত এই লক্ষ্যে করা হচ্ছে রোগের বিস্তারটা কমিয়ে আনা। এটা হলো ভ্যাকসিনের কাজ। বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থানে আছে যেখানে ভাইরাসের পরিমাণ খুবই কম। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে ভ্যাকসিন করার পরেও যদি শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে তাহলে নাক এবং ফুসফুসসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তারলাভ করবে। সেক্ষেত্রে ওই ভাইরাসটি যখন রক্তে প্রবেশ করবে তখনই প্রতিরোধের মুখোমুখি হবে। সেটা ভ্যাকসিন বা প্রাকৃতিগতভাবে হোক। এজন্য ভ্যাকসিন দেয়ার অর্থ এই নয় যে, সম্পূর্ণভাবে আমি করোনামুক্ত।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি স্বাস্থ্যবিধির মধ্যে মাস্কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাস্ক পরতেই হবে। মাস্ক পরার সুবিধা হলো কমপক্ষে বাতাসের ধূলিকণাটা আপনার নাকে প্রবেশ করছে না। গত এক বছরে মানুষের ফুসফুস পরীক্ষা করলে দেখা যাবে পৃথিবীব্যাপী ফুসফুসের স্বাস্থ্য অনেক ভালো। শুধু মাস্ক পরার জন্য। কাজেই মাস্ক ততদিন পরতে হবে যতদিন না আমরা শূন্যে এসে দাঁড়াবো।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার বিষয়ে ড. বিজন বলেন, আমি মনে করি এটা শিক্ষার্থীদের নৈতিক দাবি। কারণ, এতদিন ঘরে বসে ছিল তারা। এখন যেটা করতে হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনেশন করতে হবে। সেটা হোক না এক ডোজ। করোনা প্রতিরোধে আমাদের দেশে কি রোডম্যাপ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন নিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। এবং মাস্ক আরো কমপক্ষে ছয়মাস বাধ্যতামূলক পরতে হবে। তাহলে আমাদের দেশে রোগের যে বিস্তার এবং প্রতিরোধের যে শুভ সূচনা হয়েছে এটাকে এক পর্যায়ে গিয়ে শতভাগ নির্মূল করা যাবে।


 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর