প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, পাকিস্তানিদের দালালি, তোষামোদি ও চাটুকারিতা ভুলতে পারেনি বলে অনেকে এখনও জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা বা নির্দেশনা খুঁজে পান না। বাংলাদেশের মানুষ যা বোঝে এরা তা বোঝে না। সোমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা নিয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। যেদিন এ ভাষণ দেওয়া হয় সেদিন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হেডলাইন হয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভাষণটি জায়গা করে নেয়। ব্রিটিশ সাংবাদিক জ্যাকব আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক ভাষণের ওপরে যে গবেষণা করেন সেখানেও এটি স্থান পেয়েছে। কিন্তু এ দেশে ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিল অনেক দিন।
আমাদের দেশের নির্বোধরা এর তাৎপর্য না বুঝলেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল।
তিনি বলেন, অনেকে এ ভাষণকে ছোট করতে চায়। এই ভাষণটাকে নিয়ে... আমি শুনলাম আমাদের বিএনপির কয়েকজন নেতা এর মধ্যে, কয়েকজন আছে যারা হয়তো একসময় ছাত্রলীগ করেছিল, পরে আবার ছেড়ে চলেও গিয়েছিল, বহু কিছু আছে এবং মানে...যাই হোক। তারা নাকি এই ভাষণে স্বাধীনতার কোনও ঘোষণাই পায় নাই। আমার মনে হলো একটা কথা, আমি আমার নেতাকর্মীদের এটা বলতে চাই। এরা পাবে না। কারণ, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীও পায়নি। তারা অনেক খুঁজেছে। আমার মনে হচ্ছে এরা যেন সেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তাদেরই পদলেহনকারী, খোশামোদি, তোষামোদির দল। কাজেই তারা (পাকিস্তানি জান্তারা) যা বোঝে এরা তা-ই বোঝে। কিন্তু বাঙালি যা বোঝে এরা তা বোঝে না। বাংলাদেশের মানুষ যা বোঝে এরা তা বোঝে না।’
৭ই মার্চের ভাষণের সময়ের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা, তাদের একটা পরিকল্পনা ছিল। তারা খুব সাজসাজ রব নিয়ে সাঁজোয়া বাহিনীসহ বসে ছিল। সেখানে হেলিকপ্টার, প্লেন রেডি ছিল যে বঙ্গবন্ধু কী ভাষণটা দেন এবং তার ওপর তারা আক্রমণ করে এই মাঠে যারা আছে সবাইকেই ওপর থেকে বোম্বিং করে হত্যা করবে। এটা একটা প্রস্তুতি নিয়েছিল। এটা পাকিস্তানি এখানে যারা তখন অপারেশন চালাচ্ছিল তাদের লেখা বইতেও কিন্তু এটা প্রকাশ পায়। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, তিনি তো ‘পোয়েট অফ পলিটিক্স’। তিনি আসলে রাজনীতির কবিই ছিলেন। তিনি জানতেন যে মানুষের কাছে কথাটা কী ভাষায় বললে সাধারণ মানুষ কথাটা বুঝে নেবে। কিন্তু শত্রুদের বুঝতে সময় লাগবে। যেকোনও একটা যুদ্ধে রণকৌশলটা হচ্ছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণের কথা দেশের মানুষ বুঝে নিয়েছিল এবং তার প্রতিটি অক্ষর মেনে চলেছিল। আর একজন বোঝেননি, যিনি সিরাজুল আলম খান। একসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মাহবুব উল আলম হানিফ, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোন্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বক্তব্য রাখেন।