× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অভিমানী রুমী

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
৯ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার

তেইশ বছর আগের কথা। ১৯৯৭ সাল। তোড়জোড় চলছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম রঙ্গিন ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রকাশনা নিয়ে। একঝাঁক তরুণ কর্মীর পাশাপাশি রয়েছেন প্রবীণ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিক। একের পর এক মিটিং চলছে পরিকল্পনা নিয়ে। এক মিটিংয়ে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ঘোষণা দিলেন, মানবজমিন-এ বিনোদন পাতা হবে দুটি। এবং পাঠকের জন্য প্রতিদিন বিনোদন পাতা বের হবে। সহকর্মীরা অবাক।
এ যে অকল্পনীয়। সকল পত্রিকাই যে সপ্তাহে একদিন বিনোদন পেজ বের করে। মিটিংয়েই নানা আলোচনা। সব আলোচনা ছাপিয়ে মতি ভাই নির্দেশনা দিলেন কি করতে হবে। কিভাবে বিনোদন পেজ হবে। এতে কি কি থাকবে। এ মিটিংয়ে প্রিয়মুখ নামে একটি পেজ করার ঘোষণাও দিলেন প্রধান সম্পাদক। এ পাতায় একজনের ছবি ছাপা হবে। থাকবে তার কিছু বর্ণনাও। এ পাতার দায়িত্ব দেয়া হয় কাওসার মাহমুদকে। ১৯৯৮ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বাজারে এলো মানবজমিন। সারাদেশে হইচই। বিনোদন পেজ দুটি। আর দুটি পেজই রঙ্গিন। পত্রিকা বাজারে আসার আগেই সাজানো হয় বিনোদন বিভাগ। হারুণ অর রশীদ, জামাল রেজা, ইকবাল করিম নিশান, মোশাররফ রুমী, সীমান্ত খোকন, আর্শিয়ানা সহ আরও অনেকেই যোগ দেন বিনোদন বিভাগে। মোশাররফ রুমী তখন মাঠের রিপোর্টার। বিনোদনের বহু চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট বের করে এনেছেন তিনি। মানবজমিন প্রতিদিন দুই পৃষ্ঠা বিনোদন পাতা করে তা দেখে অন্য পত্রিকাগুলোও এ ধারায় আসে। এখন সকল পত্রিকায় বিনোদন পাতা প্রতিদিন বের হয়। যার অগ্রপথিক মানবজমিন। দীর্ঘ তেইশ বছর মোশাররফ রুমীর সঙ্গে একত্রে এক অফিসে কাজ করেছি। তিনি ছিলেন কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, আলোচিত রিপোর্ট করতে ঘুরে বেড়াতেন সিনেমা পাড়া। সব সময় তার মুখে লেগে থাকত হাসি। এক সময় তিনি বিনোদন বিভাগের দায়িত্ব পান। প্রতিদিন সকালে এসে সহকর্মীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেয়া, রিপোর্ট এডিট করা থেকে পেজ ম্যাকাপ ছিল নিত্য রুটিন। এভাবেই কাটিয়ে গেছেন মানবজমিন-এর শেষ দিন পর্যন্ত। ওদিকে কাওসার মাহমুদ মানবজমিন ছেড়ে একটি বেসরকারি টিভির সংবাদ পাঠক হিসাবে যোগ দিলে এ পাতার দায়িত্ব দেয়া হয় মোশাররফ রুমীকে। প্রিয়মুখ পাতার মাধ্যমে একাধিক নায়ক নায়িকা স্থান করে নেয় ফিল্ম জগতে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিমলা, জায়েদ খান। সহকর্মীদের প্রতি মোশাররফ রুমীর ভালোবাসা ছিল অন্যরকম। কারো প্রতি তার ছিল না কোন অভিযোগ। অনুযোগ। মোশাররফ রুমী তাই সবার কাছে ছিল প্রিয়। ক’বছর আগের কথা। সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। অফিসে গিয়ে চেয়ারে বসা মাত্রই দেখি আমার টেবিলে এসেছে কেক। আমি তো অবাক। একি? আমার জন্মদিন এরা কিভাবে জানল? পরে বুঝতে পারলাম ফেসবুক মনে করিয়ে দিয়েছে জন্মদিনটি। আর এটি দেখে মোশাররফ রুমী উদ্যোগ নেন জন্মদিনে আমাকে সারপ্রাইজ দেবেন। শুধু আমাকেই নয়, অফিসে যারই জন্মদিন আসত তিনি সবাইকে এমন সারপ্রাইজ দিতেন। করোনার শুরুতে সারাদেশে যখন লকডাউন চলছে তখন মানবজমিন প্রিন্ট অডিশন কদিন বন্ধ ছিল। তবে বাসায় বসে সবাইকে অনলাইনের জন্য কাজ করতে হয়েছে। এ সময় মোশাররফ রমী একদিন ফোন করে বলেন, শামীম ভাই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি। কেন? তিনি বললেন, অনেক তো চাকরি করলাম এবার নিজে কিছু করার চেষ্টা করছি। মতি ভাই, মাহবুবা ভাবি আমাকে ছাড়তে চাইছেন না। অনেক করে উনারা বুঝিয়েছেন। এমনকি বলেছেন বাসায় বসে নির্দেশনা দিতে। অফিসে আসতে হবে না। কিন্তু আমি চাই এখন নিজে কিছু করতে। বললাম, আপনাকে বড্ড মিস করব রুমী ভাই। এরপরও কয়েকবার ফোনে কথা হয়েছে। এমনিতেই তার শরীরটা দুবছর ধরে ভাল যাচ্ছিল না। চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। অপারেশন করিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা থেকেই গিয়েছিল। ডাক্তাররা বলেছেন, তার চোখে স্ট্রোক হয়েছে। অফিসে প্রায়ই চোখের সমস্যা নিয়ে দুঃখ করতেন। বছর খানেক ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিয়েছেন। জানুয়ারিতে হঠাৎ ফেসবুকে তার স্ট্যাটাস-আমি অসুস্থ। আমার জন্য দোয়া করবেন। কি হয়েছিল তার? ব্রেন স্ট্রোক। কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি। গত মাসে আবার স্ট্যাটাস আমি এখন মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। সোমবার বিকালে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। মোশাররফ রুমী বড্ড অভিমানী এক মানুষ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত অভিমান করেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। পত্রিকায় হেডলাইন মোশাররফ রুমী আর নেই। এই আর নেই-এর তালিকায় সবাইকেই একদিন স্থান করে নিতে হবে। শুধু থেকে যাবে তার স্মৃতি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর