× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রুমী ভাই, এতো কি তাড়া ছিল আপনার?

মত-মতান্তর

দীন ইসলাম, কানাডা (টরন্টো) থেকে
৯ মার্চ ২০২১, মঙ্গলবার

আমার বিনোদন রিপোর্টিংয়ের শিক্ষাগুরু রুমী ভাই নেই। তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন এটা ভাবতেই যেন কেমন লাগছে। চোখ ভিজে যাচ্ছে। বার বার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, রুমী ভাই। কি এমন তাড়া ছিল? আপনাকে এতো তাড়াতাড়ি দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিতে হবে।আপনার সঙ্গে আমার কত শত স্মৃতি। কিভাবে ওই সব স্মৃতি ভূলে যাই বলেন? স্মৃতি মনে পড়লেই ভেতরটা ভেঙ্গে পড়ে। আমার এখনও মনে আছে ২০০৩ সালের ১ লা আগস্ট দুপুর বেলা আমাদের সবার প্রিয় মতি ভাই (মতিউর রহমান চৌধুরী) আপনার প্রিয় স্থান বিনোদন বিভাগে আমাকে ন্যাস্ত করলেন। আপনাকে মতি ভাই বললেন, দেখেন ছেলেটাকে রিপোর্টিং শেখাতে পারেন কিনা? যদিও বিনোদন বিভাগে সোর্স বিল্ডআপ করা একটু কষ্টের।
যাক বাংলা মটর ওয়ালসো টাওয়ার ভবনের অফিসে আপনার ডেস্কে আসার পর আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনি কি এফডিসি চিনেন? আমি হ্যাঁ সুচক জবাব দিলে বললেন, এফডিসি’র গেট নিয়ে রিপোর্ট করতে পারবেন? আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, ভাই এফডিসি’র গেট নিয়ে কি রিপোর্ট করবো? রুমী ভাই বললেন, গ্রাম থেকে অনেক ছেলেরা নায়ক হতে ঢাকায় আসে। এফডিসির গেটে দাড়িয়ে থাকে। দেখেন ওই রকম নায়ক হতে আগ্রহী কাউকে খুঁজে পান কিনা। আমি রুমী ভাইয়ের এসাইনমেন্ট অনুযায়ি এফডিসি’র গেটে গেলাম। তবে কোন নায়ক খুঁজে পেলাম না। কিন্তু এফডিসির গেটের আনসাররা টাকা দিয়ে লোকজন ভেতরে ঢুকাচ্ছে এটা দেখতে পেলাম। অফিসে এসে কাঁচা হাতে ‘এফডিসি’র গেট, টাকা দিলেই ভেতরে যাওয়ার সুযোগ’ রিপোর্ট তৈরি করলাম। আমার রিপোর্ট ঘষামাজা করে তা ছাপার উপযোগী করে তুললেন রুমী ভাই। প্রথম রিপোর্টেই তদন্ত কমিটি গঠন করে এফডিসি কর্তৃপক্ষ। এর দুই দিন পর আমার সামনে একদিন মতি ভাই রুমী ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলেন, ছেলেটা কি বিনোদন রিপোর্ট করতে পারবে? রুমী ভাই বললেন, এই ছেলেটা অবশ্যই ভাল করবে। তারপর থেকে রুমী বসের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে তার সুনজরে থাকি। আমাকে কোন এসাইনমেন্ট দিয়ে তিনি স্বস্তিতে থাকতেন। এরপর আমাদের মধ্যে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক হয়ে যায়। একে অপরের সঙ্গে নিজেদের অনেক ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করি। মনে পড়ে বিনোদন বিভাগে কাজের ফাঁকে রুমী ভাই, আতিক ভাই, রাগিব হাসান, আসলাম রহমান (করোনায় মারা গেছেন) এবং ওমর ফারুক ভাই এক সঙ্গে লাঞ্চ করতে বাইরে যেতাম। তখনকার লাঞ্চের আড্ডা এখনও মিস করি, নস্টালজিক হই। একটি কথা জোর দিয়েই বলবো রুমী ভাই দৈনিক মানবজমিনের কাজে কখনো ফাঁকি দিতে দিতেন না। আমরা কাজে ফাঁকি দিলেই আদর মাখা কণ্ঠে শাসন করতেন। ২০০৬ সালে আমাকে যখন বিনোদন বিভাগ থেকে জেনারেল রিপোর্টিং এ বদলি করা হয়। তখন রুমী ভাই মতি ভাইয়ের কাছে প্রতিবাদ জানান। এটা শোনার পর ওই সময় বেশ আবেগতাড়িত হয়ে যাই। জেনারেল রিপোর্টিংয়ে আমার ভাল রিপোর্ট ছাপা হলে রুমী ভাই সব সময় আমাকে বাহবা দিতেন। বলতেন, আপনিতো রিপোর্টিংয়ে ভাল করছেন। কিন্তু একজন শিল্পীর জীবন নষ্ট করে দিচ্ছেন। আমি বেশি কিছু জানতে চাইলে হেসে বলতেন, ঘরের বউকে আবার মিডিয়াতে কাজ করান। যাক ওই সব কথা এখন কেবলই স্মৃতি। বার বার রুমি ভাইয়ের কথা মনে পড়ছে। বিনোদন বিভাগে আমার দুই সহকর্মী মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন এবং আসলাম রহমান  আগেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। এখন রুমী ভাইও চলে গেছেন।  সাতজনের টীমের তিন জন এখন দুনিয়াতে নেই। সামনে কি অপেক্ষা করছে তা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। পরপারে রুমী ভাইকে অনেক ভাল রাখুন এটা সব সময় কামনা করি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর