× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

৪১তম বিসিএস প্রিলিমিনারি, করোনাভাইরাস ও কিছু কথা

শিক্ষাঙ্গন

আফরিন আপ্পি
(৩ বছর আগে) মার্চ ১৫, ২০২১, সোমবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪১ তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এতে আবেদন করেছেন প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে অংশ নেবেন প্রায় সাড়ে চার লাখ। এরই মাঝে গত ৭৪ দিনের মধ্যে রোববার করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক। রোববার মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮ জন। এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে।

করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
আরো উদ্বেগের খবর হল বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগই তরুণ।

এরই মাঝে আগামী ১৯ মার্চ বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রায় সাড়ে চার লাখ পরীক্ষার্থীর সমাগম হবে। তাদের প্রত্যেকের সাথে যদি ১জন করে অভিভাবক ধরি তাহলে এই সংখ্যাটা দাঁড়ায় প্রায় ৯ লাখ।

এবার আসুন এই পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে আগের দিন রাতে কোথায় থাকবে? বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাসা, শহরের বিভিন্ন মেস, হোটেলে অবস্থান নেবে।

বিভিন্ন যানবাহন যেমন বাস-ট্রেনে চড়ে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবে। আবার পরীক্ষার হলে পৌঁছতে ব্যবহার করবে রিকশা-সিএনজি এবং সেক্ষেত্রে তাদের সাথে জড়িত থাকবে গণপরিবহন শ্রমিকরাও।

আবার এই পরীক্ষার সাথে যুক্ত সারাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, স্কুল কলেজের শিক্ষক, অফিস সহকারি, পিএসসিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, পরীক্ষার্থীদের অভিভাবক সবমিলিয়ে সারাদেশে প্রায় ১২ লাখ মানুষ সেদিন ২ ঘন্টার পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪৮ ঘণ্টার মতো বেপরোয়াভাবে এক বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যাবেন।

প্রশ্ন আসতে পারে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ছাড়া সারাদেশে সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলছে তাহলে বিসিএস পরীক্ষা হতে দোষ কি? উত্তর একটাই কোন কিছু ধ্বংস হতে একটি বিস্ফোরণই যথেষ্ট।

আবার অনেকের বাবা-মা হয়তো করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে রয়েছেন। সেই পরীক্ষার্থী মানসিকভাবে কতোটা উপযোগী পরীক্ষার হলে বসার? বা আদৌ সে পরীক্ষার হলে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

বিসিএস যেহেতু সোনার হরিণ সেজন্য করোনা আক্রান্তরাও যে পরীক্ষার হলে যাবে না; সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর আক্রান্ত একজনও যদি পরীক্ষার হলে উপস্থিত হন তাহলে পরবর্তীতে এর ফলাফল কি হবে সেটি আমরা সহজেই আঁচ করতে পারছি।

করোনাভাইরাস এর এই ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মাঝে ১৯ মার্চ এর পরীক্ষার এমন সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক সে বিষয়ে অবশ্যই পিএসসির ভেবে দেখা উচিৎ বলে মনে করছি। কারণ এই একদিনের পরীক্ষার জন্য একজনও যদি আক্রান্ত হয় বা একটি প্রাণও যদি যায় তার দায় কিন্তু পিএসসি নেবে না।

অনেকেই বলতে পারেন করোনা কী শুধু পরীক্ষার হলেই থাকবে? না করোনা শুধু পরীক্ষার হলে থাকবে না। করোনা থাকতে পারে একজন পরীক্ষার্থী যে যানবাহনটিতে চড়ে যাচ্ছেন সেখানে। করোনা থাকতে পারে পরীক্ষার্থী যে আত্মীয়ের বাসায় বা যে হোটেলে অবস্থান করছে সেখানে। করোনা থাকতে পারে পরীক্ষার্থীর সামনে বা পেছনের বেঞ্চে বসে যিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই পরীক্ষার্থীর শরীরে। করোনা থাকতে পারে পরীক্ষার হল পরিদর্শকের শরীরে। করোনা থাকতে পারে যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে সদস্য পরীক্ষার্থীদের চেক করে কেন্দ্রে প্রবেশ করাচ্ছেন তার শরীরে। আমরা জানি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন এর লক্ষণ সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।

বলতে পারেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই-তো পরীক্ষা নেয়া হবে। তাহলে আপত্তি কেন? এর সহজ উত্তর পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢোকানো হলো। নিরাপদ দূরত্বে এক একজন পরীক্ষার্থীকে বসানো হলো। কিন্তু তাদের বহনকারী গণপরিবহনগুলোতে কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে না। আবার পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় যে বিশাল জনসমাগম হবে সেটিও করোনার নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলেই মনে করছি।

তাই আবারও বলছি ১২ লাখ মানুষ তাদের এক একজনের পরিবারে যদি অন্তত চারজন করেও থাকে সে ক্ষেত্রে ৪৮ লাখ মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে হুমকির মুখে না ফেলে; শেষ সময়ের জন্য হলেও অন্তত একবার ভাববে পিএসসি।

আসুন সবাই নিজে নিরাপদ থাকি; অপরকে নিরাপদ থাকতে সহায়তা করি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর