× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্বপ্ন দেখেছেন রাত্রে হবুচন্দ্র ভূপ...

মত-মতান্তর

শরীফ আস্-সাবের
২১ মার্চ ২০২১, রবিবার

ধন্যবাদ, কবিগুরু, আপনার ‘হিং টিং ছট্’ কবিতায় আমাদের সহিত মান্যবর হবুচন্দ্র এবং গবুচন্দ্রের পরিচয় করাইয়া দেওয়ার জন্য।

আশি বছর আগে আপনি পৃথিবীর মায়া কাটাইয়া অনন্তলোকে পারি জমাইয়াছেন, আর আমরা এখনো আপনার এই দুই প্রিয়পাত্র, মহামহিম হবু এবং গবুর উন্মাতাল সান্নিধ্য  উপভোগ করিতেছি, উহাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উদ্ভট কথকতায় ব্যপৃত হইতেছি এবং অহেতুক হাসিয়া কিংবা অকারণে কাঁদিয়া এই কীর্তিমান মানবযুগলের মনোরঞ্জন করিতেছি।

আপনি শুনিয়া প্রীত হইবেন, আপনার কবিতায় বর্ণিত তিনখানা বাঁদর এখন সংখ্যায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাইয়াছে। বহুরূপী এইসব বাঁদরের উৎপাত, বেহায়াপনা  এবং সুরসুরিতে রাজ্যের আম্রজনতা যারপরনাই অস্বস্তি এবং অশান্তির মধ্যে দিনাতিপাত করিতেছে। উকুন না বাছিয়া এই বানরকুল এখন সর্বত্র বিভিন্ন প্রজাতির অভদ্র উকুন নির্বিচার ছড়াইয়া দিয়া এক বিতিকিচ্ছিরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করিয়াছে।

বেদেরা এখন সর্পবিদ্যা বিস্মৃত হইয়া পাখির পালক মাথায় গুজিয়া স্বপ্নমঙলের জগতে ভাসিয়া বেড়াইতেছে এবং সন্তর্পনে সর্প বিনাশের  মন্ত্র উচ্চারণ না করিয়া উচ্চৈস্বরে দেবকূলের  তিরস্কার, অসুরের স্ততি ও বাসুকীর বন্দনায় রত হইয়াছে। ইহার ফলে মানব বসতি দ্রুত লয়ে শ্বাপদসংকুল হইয়া উঠিতেছে।

আপনার প্রিয়ভাজন কবিরাও গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাইয়া দিয়াছে। ঊহারা অশ্লীল মিথ্যার বেসাতি করিয়া ভাব ও ছন্দের অমৃতবচন বাক্স পেটারায় সযতনে গুটাইয়া ফেলিয়াছে। উহাদের কপটতা ও ভন্ডামীর উত্তুঙ্গ মাতামাতিতে হতবিহ্বল হইয়া কিংকর্তব্যবিমুঢ় প্রজাকুল বাদ্যের তালে তালে উত্তুঙ্গ নৃত্য করিতেছে।

আপরদিকে, রাজ্যের তাবৎ মহিলা অবশেষে মুখের অর্গল খুলিয়া বাঁধভাঙ্গা কথার জোয়ারে ভূবন মুখরিত করিতেছে। ইহাতে অপরের কান কিয়ৎ ঝালাপালা হইলেও কাহারও এতদ্বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ করিবার মত সময় নাই। ভোলাভালা শিশুরাও পূনরায় খেলাধুলায় মনোনিবেশ করিয়াছে।
তবে তাহাদের খেলা এখন আর মাঠে ঘাটে সীমাবদ্ধ নাই - ঘরে বসিয়া কম্পিউটার নামীয় যন্ত্রের পর্দায় ছায়ার সহিত যুদ্ধ করিয়াই উহারা খেলা শুরু ও সাঙ্গ করিতেছে। ইহাতে পিতা মাতার অল্পবিস্তর মনোবেদনার উদ্রেক হইলেও শিশুদের গাত্রে ব্যথা হইবার কোন সম্ভাবনা থাকিতেছে না।

আপনার স্নেহধন্য পন্ডিতেরা শাস্ত্রপাঠ ভুলিয়া এখন পৃথিবীর দৈর্ঘ-প্রস্থ, ধর্ম-কর্ম, পুরস্কার-তিরস্কার লইয়া একে অপরের গুষ্টি উদ্ধার করিতেছে। আপন লেজুড় অপরের পিছনে জুডাইয়া দিয়া এই অকাল কুস্মান্ড পন্ডিতের দল অনিশ্চিত এই সংসারে কামিয়াব হইবার মানসে যথাসাধ্য কসরৎ করিতেছে আর রঙ মাখিয়া সঙ সাজিয়া হুজুরের দরবার মশহুর করিয়া রাখিতেছে। দেখিয়া শুনিয়া বোধ হইতেছে, হবুচন্দ্রের মহাঅতিন্দ্রীয় স্বপ্নের বিশ্লেষণ করিয়া ত্রিকালজ্ঞ, জরাগ্রস্থ এবং ক্ষীণকায় বাঙালির শির অযাচিত মুকুটের ভারে অদ্যাবধি নত হইয়া রহিয়াছে যাহা সহসা সমুন্নত হইবার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ।

সুপ্রিয় গুরুদেব, এই প্রায় অসম্ভবের সীমানায়  দাঁডাইয়া আমি, অপগন্ড শরীফ আস্-সাবের, সত্যি-মিথ্যা, স্বপ্ন-বাস্তব কিছুই সঠিকভাবে ঠাহর করিতে পারিতেছি না। তাই, যৎকিঞ্চিৎ কুন্ঠার সহিত জানিতে সাধ হয়, কি করিয়া শতবর্ষ আগে আপনার উপলব্ধিতে এই অপ্ত চরণ দুইটির উদয় হইলো?
“জগতে সকলি মিথ্যা সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়।”

ড. শরীফ আস্-সাবের শিক্ষক, কবি, লেখক ও সাবেক আমলা
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর