× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

একমাত্র খেলা পারে মানুষকে একসূত্রে গাঁথতে

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী

প্রতাপ শংকর হাজরা
২৬ মার্চ ২০২১, শুক্রবার

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে কটাক্ষ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন মার্কিন মদতপুষ্ট মোড়ল বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ। কারণ, দিন বদলে গেছে। বাংলাদেশ এখন তার সবচেয়ে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নিজস্ব অর্থায়নে। স্বাধীনতার মাত্র ৫০ বছরে এই পরিবর্তন বাংলাদেশের। শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, বাংলাদেশ বদলে গেছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রায় সব ক্ষেত্রেই। নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অর্থের বড় সংকট থাকলেও এই সেক্টরেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে।

স্বাধীন দেশের স্বপ্ন আলোড়িত করেছিল দেশবরেণ্য খেলোয়াড়দেরও।
বঙ্গবন্ধুর ‘যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে, দেশকে শত্রুমুক্ত করতে নিজেদের জায়গা থেকেই লড়েছিলেন অদম্য সাহসে। অস্ত্র কেবল বুলেট-বোমাকেই বোঝায় না। প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে মুখের ভাষাও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয় অনেক সময়। ফুটবলাররা অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ফুটবলকেই। গড়ে উঠেছিল ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’। এ দল হয়ে উঠেছিল দেশমাতৃকার মুক্তিযুদ্ধে একটা ব্রিগেডের মতোই, ফুটবল সেখানে ছিল কার্যকর এক হাতিয়ার। দেশের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে গঠিত ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল’ ফুটবল দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় করে গেছে অনন্য এক যুদ্ধ। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে দেশের ফুটবলের দামি তারকারা অপার এক দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে গড়ে তুলেছিলেন জনমত। যুদ্ধের সময় এ দলটি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় খেলেছিল ১৬টি ম্যাচ। জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে ছিলেন প্রতাপ শংকর হাজরা, নওশের, লালু, কায়কোবাদ, আশরাফ, এনায়েত, সালাউদ্দিন, আইনুলসহ ৩১ জন তারকা ফুটবলার। যাদের বেশির ভাগই স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সেরা ফুটবলার হিসেবে ছিলেন সুপরিচিত। দলটির ম্যানেজার ছিলেন তানভীর মাজহারুল ইসলাম তান্না। সাবেক জাতীয় কোচ আলী ইমাম ছিলেন দলটির অন্যতম সংগঠক। স্বাধীনতার সময় এই দলের গর্বিত সদস্য হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন প্রতাপ শংকর হাজরা। স্বাধীনতার ৫০ বছরের ক্ষণে দাঁড়িয়ে হাজরা বললেন, আমাদের দেশের ক্রীড়াঙ্গন গত ৫০ বছরে অনেক এগিয়েছে। পাকিস্তানের ২৫ বছরের শাসন আমলে মাত্র ১৫-১৬ জন জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। এখন আমরা পাকিস্তান জাতীয় দলকে নিয়মিত হারাই। ফুটবল কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছাতে না পারলেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়েছে। শুটিংয়ে আমাদের ছেলে- মেয়েরা নিয়মিত পদক পাচ্ছে। অথচ পাকিস্তান আমলে শুটিং করার সুযোগই ছিল না আমাদের।  ভারতে আরচারির প্রচলন থাকলেও আমাদের এটি সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। ২০০৫-০৬ সালে শুরু হওয়া সেই আরচারিতে আমরা অনেক এগিয়েছি। আরচারির রোমান সানা সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। গলফে সিদ্দিকুর রহমান একাই বিশ্ব দরবারে দেশকে পরিচিত করেছে। হকিতেও খারাপ করছি না আমরা। হকিতে পর্যাপ্ত অর্থ আর সংগঠকদের মধ্যে কোন্দল না থাকলে হয়তো এতদিনে পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলতে পারতাম। ক্রিকেট তো বিশ্বসেরাদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হয়। আমাদের সাকিব তো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এসবই আমাদের স্বাধীনতার অর্জন। মেয়েদের খেলাধুলায়ও আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের মেয়ে ফুটবল দল এশিয়ান পর্যায়ে খেলছে। নারী ক্রিকেটেও আমরা এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। পাকিস্তানের পরাধীনতা শিকলে থাকলে এসব কোনো কিছুই সম্ভব হতো না। তবে এসব অর্জনকে কাঙ্ক্ষিত বলতে নারাজ আমি। কারণ, এদেশের ক্রীড়াঙ্গন চলছে ভিক্ষুকের মতো। এখানে টাকা জোগাড় করতে ভিক্ষুকের মতো সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়। সেখান থেকে যে অর্থ আসে তাও পর্যাপ্ত না। এসব কারণেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না আমাদের ক্রীড়াঙ্গন।  

একমাত্র খেলাই পারে মানুষকে একসূত্রে গাঁথতে। এ উপলব্ধিতেই একাত্তরে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এখন আমরা যদি সবাই একসঙ্গে ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করি, তবে যেটুকু ঘাটতি আছে সেটুকু পুষিয়ে বিশ্ব দরবারে আমরাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবো।  

লেখক: স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর