ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুতে কাঁদছে পুরো বৃটেন। বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে মারা যাওয়ায় তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সমগ্র বৃটেন থেকে ‘গান স্যালুট’ জানানো হয়। সম্মান জানাতে গান স্যালুট দেয়া হয় জিব্রাল্টার থেকে শুরু করে বৃটিশ ঔপনিবেশ আছে এমন এলাকা থেকে। সমুদ্রে যুদ্ধজাহাজ থেকেও গান স্যালুট জানানো হয় বৃটিশ স্ট্যান্ডার্ড সময় দুপুর ঠিক ১২টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায়। স্থানীয় সময় দুপুর বেলা লন্ডন, এডিনবার্গ, কার্ডিফ এবং বেলফাস্টের মতো শহর থেকে ৪১ রাউন্ড তোপধ্বনি করা হয়। সম্মানসূচক স্যালুট জানিয়ে ফায়ার করা হয় এইচএমএস ডায়মন্ড এবং এইচএমএস মনট্রোজসহ সমুদ্রে থাকা রাজকীয় নৌবাহিনীর জাহাজ থেকেও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন লর্ড হাই এডমিরাল পদে।
তার প্রতি স্যালুট জানানোর অনুষ্ঠান অনলাইন এবং টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। করোনা সংক্রমণের কারণে জনগণকে বাসায় বসে তা পর্যবেক্ষণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
ডেইলি মেইলের খবরে বলা হয়, লন্ডনে রাজার রাজকীয় বাহিনী ঘোড়াবাহিত কামান নিয়ে আসে নাপিয়ের লাইনস ও উলউইচ ব্যারাক থেকে। প্যারেড গ্রাউন্ডে আসে ৭১টি ঘোড়া। এরমধ্যে ৩৬টি ঘোড়া টেনে নিয়ে আসে ১৩-পাউন্ডার ফিল্ড গান। এগুলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল। এই একই ফিল্ড গান ব্যবহার করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে রানী ও প্রিন্স ফিলিপের বিয়ের সময়। ১৯৫৩ সালে রানী হিসেবে অভিষেক অনুষ্ঠানেও এই ফিল্ডগানগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল। শ্রদ্ধা জানাতে এসে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, মহামান্য প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন সামরিক বাহিনীর সমর্থক ও দূত। আমরা তার জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং মহামান্য রানীর প্রতি সমবেদনা জানাই।
বৃটেনের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল স্যার নিক কার্টার বলেন, প্রিন্স ফিলিপ ছিলেন সামরিক বাহিনীর বন্ধু, আদর্শ ও অনুপ্রেরণা। তার শূন্যস্থান আমরা অনুভব করবো। তিনি আমাদের হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়েছেন, রাজকীয় নৌবাহিনীর হয়ে কাজ করেছেন এবং সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীর জন্য নিবেদিত ছিলেন।
লন্ডন টাওয়ার থেকে প্রিন্স ফিলিপের সম্মানার্থে গান স্যালুট দেয়া হয়। গান স্যালুট দেয়া হয় ১০৪তম রয়্যাল আর্টিলারি রেজিমেন্ট থেকেও। কার্ডিফ প্রাসাদ, হিলসবোরো প্রাসাদ, বেলফাস্ট প্রাসাদ এবং এডিনবার্গ প্রাসাদ থেকে গান স্যালুট দিয়ে প্রিন্সের প্রতি সম্মান জানানো হয়।
এর আগে শুক্রবার ৯৯ বছর বয়সে মারা যান ডিউক অব এডিনবার্গ। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে তিনি ৭৩ বছর দাম্পত্য সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন। বৃটেনের রাজপরিবারের এত দীর্ঘ সময় কোনো দা¤পত্য সঙ্গী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রানীর পাশে থাকার ইতিহাস নেই। তার মৃত্যুতে পুরো বৃটেনে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। জাতীয় পতাকা রাখা হয়েছে অর্ধনমিত। সারা বিশ্ব থেকে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। সপ্তাহান্তে তার চূড়ান্ত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তা হবে সেন্ট জর্জেস চ্যাপেল, উইন্ডসরে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে আয়োজনে কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে বলে কলেজ অব আর্মস জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে প্রয়াত ডিউককে রাষ্ট্রীয় সম্মানের সঙ্গে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। জনগণকে করোনার কারণে এসব অনুষ্ঠানে যোগ না দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ডিউকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর স্থানীয় সময় সকাল আটটা পর্যন্ত সব সরকারি অফিসে জাতীয় পতাকা থাকবে অর্ধনমিত। আগামি শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৬টা থেকে প্রতি ৬০ সেকেন্ড পর পর ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে ৯৯ বার বেল বাজানোর কথা। ডিউকের ৯৯ বছরের জীবনের প্রতিটি বছরকে স্মরণ করতে ৯৯ বার বেল বাজানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থলে, সমুদ্রে এবং বিভিন্ন রাজধানীতে এবং রাজকীয় নৌ ঘাঁটিগুলোতে ডিউক অব এডিনবার্গের স্মরণে মধ্যদিনে অস্ত্র থেকে গুলি ছোড়া হবে।