দারিদ্র্য জয় করে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ইশাদ ইসলাম। বাবা একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। সন্তানের পড়ার খরচের জন্য রাতের বেলায়ও কাজ করতেন। নিজের মাথায় করে স্কুলের বেঞ্চ টানতেন তিনি। ভোলার লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইশাদের বাবা ইকবাল হোসেন। এ বছর বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে ইশাদ। লালমোহন পৌরসভার নয়ানিগ্রাম তাদের বাড়ি। ৩ মেয়ে ও এক ছেলে ইকবাল হোসেনের।
সন্তানদের কখনো অভাব বুঝতে দেননি তিনি। সন্তানরা অত্যন্ত মেধাবী তা বুঝতে পেরে ইকবাল হোসেন ধার-দেনা করেও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় মেয়ে ইশরাত জাহান ভোলা সরকারি কলেজে অনার্স পড়ে। মেজ মেয়ে আবিবারা এশা এবার এসএসসি দেবে। ছোট মেয়ে মহুয়া আক্তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ইশাদ লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে এসএসসি ও ২০২০ সালে ভোলা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। ইশাদ জীবনের কোনো পরীক্ষায় ফেল করেনি। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি প্রতিটি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পায় সে। পাশাপাশি পায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি।
ইশাদ জানান, লক্ষ্য ছিল মেডিকেলে পড়বো। একজন চিকিৎসক হবো। আমার বাবা-মা অনেক কষ্ট করে আমার পড়ার খরচ চালিয়েছেন। তাদের অনেক আশা ছিল আমাকে নিয়ে। তাই আমিও চেষ্টা করতাম। তাদের অর্থ যেন বিফলে না যায়। ঘুম, খাওয়া-দাওয়া এবং নামাজ ছাড়া দিনের বাকি সময়টকু পড়ালেখার পেছনে ব্যয় করতাম। লকডাউনের পুরো এক বছর বাসায় পড়তাম। এইচএসসিতে অটো পাস দেয়ায় নিজের কাছে ভালো লাগলো না। তখন নিজেকে আরো বেশি প্রমাণ করতে পড়ালেখার গতি আরো বাড়িয়ে দিলাম। যাতে কেউ অটোপাস নিয়ে কথা বলতে না পারে। ইশাদের বাবা ইকবাল হোসেন জানান, আমি সামান্য একজন কর্মচারী। স্কুলে গেলে আমি দাঁড়িয়ে থাকি। আমি চাই আমার ছেলেমেয়েরা যেন দাঁড়িয়ে না থাকে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় যোগ্যতম স্থানে বসে। আমি ইশাদের স্কুলে যাওয়ার সময় তার ব্যাগ কাঁধে করে বহন করতাম। ব্যাগের বইয়ের ওজন যেন তার কষ্ট না হয়। মাঝে মধ্যে অসুস্থ হলে বা ঝড়বৃষ্টি এলে ইশাদকে স্কুলে যেতে বারণ করতাম। কিন্তু সে শুনতো না। একদিন স্কুলে যেতে না পারলে সে কান্নাকাটি করতো। আমার সন্তানদের পড়ার খরচের জন্য রাতের বেলাও স্কুলের কাজ করেছি। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি, জমিও বিক্রি করেছি। তবুও ওদের পড়ার খরচের অভাব বুঝতে দেইনি। ওদের সর্বোচ্চ পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনে আমি সব জমি বিক্রি করে দিয়ে হলেও ওদের স্বপ্ন পূরণ করবো। ইশাদের মা জেসমিন একজন গৃহিণী। তিনি জানান, গভীর রাত পর্যন্ত ও পড়ালেখা করতো। আমি ওকে ঘুমাতে বললে ও বলতো ‘তোমাদের কষ্ট যেদিন সার্থক হবে সেদিন আমি ঘুমাবো’। ইশাদ নিজের সফলতার পেছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা রয়েছে বলে জানান। ইশাদ পরিপূর্ণ চিকিৎসক হতে পারলে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করবেন।
যাদের টাকা নেই তাদের ফ্রি চিকিৎসার পরিকল্পনা রয়েছে তার। পরবর্তী প্রজন্মের উদ্দেশ্যে ইশাদ বলেন, সবসময় সফলদের অনুসরণ করা উচিত। লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে সফল হওয়া যাবে। এই লক্ষ্যটাই একদিন জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।