× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গাড়ি পারাপার / কৌশল পাল্টিয়েছে চাঁদাবাজরা

বাংলারজমিন

মো. সুজন খন্দকার, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) থেকে
১৩ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায় পুলিশ বাহিনীসহ স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে গাড়ি পারাপারে দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে অনেকটাই। তবে ট্রাফিক পুলিশের উৎকোচ নেয়া থেমে নেই। আর ট্রাফিক পুলিশকে এ কাজে সহায়তা করেন স্থানীয় প্রভাবশালী দালালরা। দালালরা ভিন্ন কৌশলে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় এ চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটে থাকা কিছু অসৎ কর্মচারী, ট্রাফিক পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি দালাল চক্র গড়ে উঠেছিল। তারা সিন্ডিকেট করে চালকদের জিম্মি করে টিকিটের মূল্য বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছিল। এ চক্রের দাপটে ট্রাকচালকরা কাউন্টারের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারতেন না। কয়েক মাস আগে তৎকালীন রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের নির্দেশে গোয়ালন্দ ঘাট থানাসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ বাহিনীর এবং স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি শুরু হয়।
ফলে দালালচক্রের সদস্যরা কাউন্টারে যেতে পারছেন না। তাই চক্রটি চাঁদাবাজির কৌশল পাল্টিয়েছে। বর্তমানে মোবাইলের মাধ্যমে চলছে তাদের কর্মকাণ্ড। তারা দৌলতদিয়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ও ফেরির কাউন্টারে থাকা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে চালক ও হেলপারকে নির্দেশনা দিয়ে সিরিয়ালে থাকা গাড়ি বাম দিক দিয়ে বের করে দেয়। বিনিময়ে চালক হেলপারকে গাড়ি প্রতি ৫০০-১০০০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। আর এ সব অনৈতিক কর্মকাণ্ড তারা মোবাইলের মাধ্যমে করে চলেছে। দৌলতদিয়া ঘাটে প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই মালভর্তি ট্রাকের লম্বা সিরিয়াল দেখা যায়। এ সময় পচনশীল ও অপচনশীল কাঁচামাল বোঝাই শতশত ট্রাক সিরিয়ালে আটকা পড়ে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হওয়ার পর নাইট কোচ আসা শুরু হলে সিরিয়াল আরো বেড়ে কয়েক মাইল এলাকা ছাড়িয়ে যায়। তখন যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালের ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করা হয়। অপচনশীল গাড়িগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। কাঁচামাল ভর্তি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হওয়ার কথা থাকলেও জ্যামের অজুহাতে আটকে রাখা হয়।
এ সময় কাঁচামালভর্তি ট্রাকচালকরা উৎকোচ আর অতিরিক্ত ভাড়া দেখার সময় পান না। যেকোনো মূল্যে ফেরিতে ওঠার জন্য চালকরা মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাদের এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রভাবশালীদের লোকজন, ট্রাফিক পুলিশ অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে থাকে। প্রভাবশালীরা আড়ালে থেকে মোবাইলের মাধ্যমের ট্রাফিক ও কাউন্টার কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ট্রাকগুলোকে সিরিয়ালের বাম দিক দিয়ে বের করে ফেরিতে তুলে দেয়। বিনিময়ে গাড়ি প্রতি ৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয়। আর এ টাকাগুলো লেনদেন হয় বিকাশের মাধ্যমে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরির নাগাল পাওয়া ট্রাকের চালকরা আক্ষেপ করে বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে আমরা কখনো স্বাধীনভাবে পার হতে পারবো না। কারণ আমাদের নিরাপত্তা দেবে পুলিশ। কিন্তু পুলিশই তো আমাদের বড় সমস্যা। কেন না ঘাটে এসে কারো না কারো নাম না বললে সিরিয়াল থেকে পুলিশ বেরোতেই দেয় না। কাউন্টারে ফেরির টিকিট পাওয়া যায় না। ঘাটের মাস্তানদের মার খেয়ে নাক মুখ হারাতে হবে। কত টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এর কোনো হিসাব নেই, ৫০০ থেকে ২ হাজার, ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। জ্যাম না থাকলে একটু কম দেয়া যায়। আর ঘাটে জ্যাম থাকলে বেশি দিয়েও সময় কুলিয়ে ওঠা মুশকিল হয়। টাকা কীভাবে দেন জানতে চাইলে মোবাইল দেখিয়ে বলেন, এই যে যন্ত্র দেখছেন না, আগে নগদ দিতাম, আমাদের লোকজন দূরে থাকে। মোবাইলে কথা বলে বিকাশ করে দেই। অপর একটি ফেরি থেকে চালকরা অভিযোগ করে বলেন, কাউন্টার কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং-এর নামে অধিক সময় কাটিয়ে দিয়ে চালকদের হয়রানি করে। ফলে সড়কের ওপর ট্রাকের সিরিয়াল থাকলেও ঘাটে গাড়ি লোড হওয়ার অপেক্ষায় খালি ফেরি দাঁড়িয়ে থাকছে। স্থানীয় দালাল ও প্রভাবশালীদের ইন্ধনে তারা পূর্বের অবৈধ দালালি পন্থা চালু করার চেষ্টা করছে।
দৌলতদিয়া পুলিশ বক্সের সামনে থেকে অনেকগুলো ট্রাক বাম দিক দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। ওগুলো বাম দিয়ে যাচ্ছে কেন জানতে চাইলে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মিজান বলেন, ওগুলো কাঁচামালের ট্রাক, ওগুলো আগে যাবে। সব মাল ভর্তি ট্রাকই তো ওদিক দিয়ে যাচ্ছে। তবে ডানে আটকে রেখেছেন কেন- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে তিনি সরে যান। কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর