চলে গেলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সুরকার ও সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। গতকাল সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। করোনায় আক্রান্ত এই সংগীত পরিচালক ১১ই এপ্রিল থেকে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। এরআগে দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার দুটি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন তিনি। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবশেষে চির বিদায় নিলেন এই বরেণ্য সংগীত পরিচালক। গতকাল ফরিদ আহমেদের জানাজার নামাজ বাদ আসর বাসার পাশের কলাবাগান ২য় লেন-ল কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রায়ের বাজার বধ্যভূমি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে গত মাসের শেষ দিকে টানা কয়েকদিন ভীষণ জ্বর ছিল ফরিদ আহমেদের। খাবারে স্বাদ-গন্ধ পাচ্ছিলেন না। তিনবার করোনার পরীক্ষা করানো হয়। প্রথম দুই দফায় নেগেটিভ এলেও তৃতীয়বারে কোভিড-১৯ পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর ২৫শে মার্চ রাতে তাকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। করোনায় ফরিদ আহমেদের ফুসফুস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছিল। তার ফুসফুসের ৬০ শতাংশ সংক্রমিত হয়। অনেক শ্রোতাপ্রিয় গানের সুরকার ফরিদ আহমেদ। স্কুলবন্ধু বায়েজীদের কাছে গিটারে তার হাতেখড়ি। এরপর ফিরোজ সাঁইয়ের হাত ধরে পেশাদার সংগীতাঙ্গনে তার পথচলা। লিটন অধিকারী রিন্টুর লেখা ও কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘তুমি ছাড়া আমি যেন মরুভূমি’ গানে সুর করে প্রশংসিত হন ফরিদ আহমেদ। এরপর থেকে বহু গানের সুর তৈরি করেছেন তিনি। করেছেন সংগীতায়োজনও। বিশেষ করে উল্লেখ করতেই হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’-এর টাইটেল সং ‘কেউ কেউ অবিরাম চুপি...’, কুমার বিশ্বজিতের ‘মনেরই রাগ অনুরাগ’, ‘আমি তোরই সাথে ভাসতে পারি মরণ খেয়ায় একসাথে’, রুনা লায়লার ‘ফেরারী সাইরেন’, রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে ‘দলছুট প্রজাপতি’, চ্যানেল আইয়ের ‘আজ জন্মদিন’, ‘ক্ষুদে গানরাজ’, ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’, ‘সেরা কণ্ঠ’ প্রতিযোগিতার থিম সং, সুমী শবনমের জনপ্রিয় গান ‘ললিতা’, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার কণ্ঠে সিনেমার গান ‘তুমি আমার জীবনের গহীনে’সহ আরো অনেক জনপ্রিয় গানের সুরকার তিনি। নূর হোসেন বলাইয়ের ‘নিষ্পত্তি’ চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন ফরিদ আহমেদ। ২০১৭ সালে সংগীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘তুমি রবে নীরবে’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনা করে এ পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এই সিনেমার আবহ সংগীতের কাজও করেন ফরিদ আহমেদ।