মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গৃহে কাজ করা ৫৪ শতাংশ নারী এবং গার্মেন্টের ১৯ শতাংশ নারী কাজ হারিয়েছেন বলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
গতকাল ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ‘সরকারের আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা: নারীরা কতোটা উপকৃত হয়েছে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। সিপিডি’র বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রতিবেদন তুলে ধরার সময় ফাহমিদা বলেন, করোনা মহামারি গরিব এবং নিম্ন আয়ের নারীদের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নারীরা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ নারী লকডাউনকে অনিরাপদ মনে করেন। বাল্যবিবাহ বেড়েছে ৫৮ শতাংশ এবং অকালে গর্ভধারণ বেড়েছে ৩০ শতাংশ। গ্রামের মাত্র ২ শতাংশ শিশু অনলাইনে শিক্ষা প্রোগ্রাম দেখেছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী কাজ হারিয়েছেন। এ সময় গার্মেন্টের ১৯ শতাংশ নারীকর্মী চাকরি হারিয়েছেন।
ফাহমিদা বলেন, সরকার ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
যা জিডিপি’র ৪.৪৪ শতাংশ। এই প্রণোদনা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট না। অতিমারির সময়কালে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো নারীদের জন্য তেমনভাবে কার্যকর হয়নি। বেশির ভাগ নারী এইসব প্যাকেজ সম্পর্কে অবগত নয়। যারা অবগত ছিলেন, তাদের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদনের অনিচ্ছা লক্ষ্য করা গেছে। নগদ সহায়তাই বেশি প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেক নারী উদ্যোক্তা। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য নারীবান্ধব নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ এবং বর্তমান প্যাকেজগুলোতে নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ উঠে আসে সংলাপে।
৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী এবং ১৯ শতাংশ গার্মেন্টের নারীকর্মীর কাজ হারানোর তথ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুলে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আপনাদের প্রতিবেদনের তথ্য আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। তিনি বলেন, আপনারা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ গৃহকর্মী ও ১৯ শতাংশ গার্মেন্টকর্মী কাজ হারিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর ৫-৬ মাস চলে গেছে। আমার ধারণা এ সময়ে অনেক রিকভারি হয়েছে। এই পরিমাণ নারী কাজ হারিয়েছে এটা প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে আমি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সঙ্গে বসবো।
পরিকল্পনামন্ত্রী প্রশ্ন তোলার পর অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, বেশির ভাগ গৃহকর্মী চাকরি হারানোর কারণ বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতে লকডাউনে আছে এবং অনেকে ভয় পাচ্ছেন- এদের (গৃহকর্মী) কারণে কোভিড বাড়িতে ঢুকে যাবে। গৃহকর্মীদের প্রটেকশন আমরা দিতে পারছি না। কারণ তারা পাঁচটা বাড়িতে কাজ করছে। এরা সব থেকে প্রান্তিক। এদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের একটা দায়িত্ব আছে। তিনি বলেন, এই ধরনের সংলাপ থেকে উঠে আসা সুপারিশগুলো কার্যকর করতে একটা টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে যারা এই কাজের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে।