× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মুভমেন্ট পাস চেয়ে ১৬ কোটি বার নক / কঠোর লকডাউনেও বিধিনিষেধের তোয়াক্কা নেই

দেশ বিদেশ

রুদ্র মিজান
১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার

কঠোর লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে তোয়াক্কা করছে না সাধারণ মানুষ। বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভিড় করছেন অনেকে। মূল সড়ক থেকে এই দৃশ্য দেখা গেছে পাড়ার অলি-গলিতেও। মুভমেন্ট পাস ছাড়াই বাসার বাইরে বের হচ্ছেন। প্রয়োজন ছাড়াই এদিক-ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের প্রায় সবার কাছে মাস্ক থাকলেও অনেকেরই তা  থুতনিতে ঝুলানো। কারও কারও মাস্ক শোভা পাচ্ছে প্যান্টের পকেটে। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়াই বের হয়েছেন।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছেন। অন্যদিকে, গতকাল পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ চেয়ে প্রায় ১৬ কোটি বার হিট বা নক করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ১৪ হাজার ২৬টি।
সকালে মিরপুর-১১ এর কবরস্থান রোড এলাকায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ভিড়। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রেখেই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তারা। এ সময় পল্লবী থানা পুলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ টিমের গাড়ি সেখানে পৌঁছালে তারা দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে। একই অবস্থা দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকাতেও। বিকাল ৪টার দিকে হাতিরঝিলের রামপুরা এলাকায় দেখা গেছে, লেকের পাড়ের ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটছেন ৭-৮ জন যুবক। তাদের তিনজনের মুখে মাস্ক নেই। বাকিরা থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাস্ক। যুবকদের একজন জানান, সারাদিন বাসায় ছিলেন। বিকালে একটু হাওয়া লাগাতে বের হয়েছেন। কতক্ষণ আর এভাবে থাকা যায়? যুবকের প্রশ্ন।
এরমধ্যেই কোথাও কোথাও বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে গাদাগাদি করে বসে গল্প করছেন কেউ কেউ। ছবি তুলছেন অনেকে। তাদের একজন জানান, মাস্ক সবসময়ই সঙ্গে থাকে। কিন্তু বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এবার সঙ্গে আনতে ভুলে গেছেন তিনি।
কাওরানবাজারে জনসমাগম ছিল উল্লেখযোগ্য। মসজিদ মার্কেটের সামনে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি করছিলেন বিক্রেতারা। কেউ কেউ সাজিয়ে ছিলেন ইফতারের পসরা। তাদের অনেকের মুখেই মাস্কের দেখা মিলেনি। এমনকি ক্রেতাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। ইস্কাটন থেকে কাওরানবাজারে এসেছিলেন ষাট বছর বয়সী সাইফুল ইসলাম। কেনাকাটা করে তা ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে বিরক্তি প্রকাশ করে নীরব থাকেন তিনি।
একইভাবে মসজিদের সামনে টুপি-পাঞ্জাবি পরিহিত মাস্কবিহীন এক যুবকের দেখা মিলে। মাস্ক সম্পর্কে তার জবাব, আল্লাহ ভরসা।  রামপুরা এলাকায় টিসিবি’র ট্রাক থেকে পণ্য কিনছিলেন সাধারণ মানুষ। দীর্ঘ লাইনে একজনের শরীরে ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলেন অন্যজন। একই অবস্থা দেখা গেছে, একটি সুপার শপের সামনেও। খিলগাঁও এলাকায় ওই সুপার শপের সামনে কথা হয় এক নারীর সঙ্গে। বিলকিস জাহান নামে ওই নারী জানান, মুখে মাস্ক দিয়েছেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রয়েছে। কিন্তু এত লোকজন কেনাকাটা করতে এসেছেন গাদাগাদি করে না দাঁড়িয়ে উপায় নেই। কিছুক্ষণ পরপর নিরাপত্তাকর্মী এগিয়ে গিয়ে তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করছেন।
শাহবাগ এলাকায় হেঁটে যাচ্ছিলেন অনেকে। তাদের মধ্যে এক নারীর মুখে মাস্ক নেই। ১০-১২ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটছিলেন তিনি। মাস্ক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই ওই নারী পরনের কাপড়ের আঁচল মুখে টেনে ধরে জানান, মাস্কটি একটু আগে ছিঁড়ে গেছে। ফেলে দিয়েছেন। ওই এলাকায় অনেকেই অপ্রয়োজনে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। অনেকেরই ছিল না মুভমেন্ট পাস। দুপুর থেকে শাহবাগে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় দুপুরের মধ্যেই শাহবাগ এলাকায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। তারা মুভমেন্ট পাস ছাড়াই অপ্রয়োজনে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। বাইরে বের হওয়ার বিষয়ে যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে না পারায় দুপুরে ওই এলাকায় ১৫ জনকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
চলমান ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনে বিধিনিষেধ চলাকালে সাধারণ মানুষকে ঘরের বাইরে বের হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার জন্য ‘মুভমেন্ট পাস’র ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ পেতে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি বার হিট বা নক করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে হিট হয়েছে ১৪ হাজার ২৬টি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে, গত ১৩ই এপ্রিল কঠোর লকডাউন শুরুর আগের দিন সকালে মুভমেন্ট পাসের ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। গত ৪৬ ঘণ্টায় ওয়েবসাইটে ঢুকে মুভমেন্ট পাসের জন্য নিবন্ধন করেছেন ৪ লাখ ৯৭৭ জন। আর পুলিশ পাস ইস্যু করেছে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮০১টি।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) হায়দার আলী খান বলেন, যারা জরুরি কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা সবাই মুভমেন্ট পাস ছাড়া চলাচল করতে পারবে। তবে, তাদেরকেও যেকোনো একটা ডকুমেন্ট বা পরিচয়পত্র দেখাতে হবে, যাতে বোঝা যায় যে, তারা জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিত। কেউ হয়তো জরুরি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, কিন্তু অন্য কাজে বের হয়েছেন। কাজেই তাকেও ডকুমেন্ট বা পরিচয়পত্র অবশ্যই দেখাতে হবে। কেউ যদি পরিচয়পত্র বা কোনো ডকুমেন্ট দেখাতে না পারে, তাহলে আমরা কীভাবে বুঝবো যে তিনি জরুরি পেশায় নিয়োজিত? যেমন: চিকিৎসকদের অনেকের পরিচয়পত্র নেই। সেক্ষেত্রে তারা হাসপাতাল থেকে একটি পেপার নিয়ে রাখবে এবং সেটা আমাদের দেখাবে। গণমাধ্যমকর্মীদেরও পরিচয়পত্র দেখাতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর