× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সিলেটের শামসুদ্দিন থেকে ফেরত যাচ্ছে শ্বাসকষ্টের রোগীরা

বাংলারজমিন

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
১৮ এপ্রিল ২০২১, রবিবার

সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা  রোগীদের। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময়ও এমন ঘটনা ঘটেনি। ম্যানেজ করে রোগী সেবা চালিয়ে গেছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়কালে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এর কারণ- অনেক রোগীই হার্টের সমস্যা সহ নানা জটিল সমস্যায় ভুগছেন। তাদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তারা করোনা আক্রান্ত না। এ কারণে যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের হাসপাতাল থেকে ফেরত দিতে হচ্ছে।
অথচ গত এক বছর চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে এমনটি করেননি ডাক্তাররা। সিলেট বিভাগে করোনার জন্য একমাত্র সরকারি হাসপাতাল হচ্ছে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল। এই হাসপাতালে আইসিইউ মিলে  বেডের সংখ্যা ১০০। হাসপাতালে রয়েছে ১৪টি আইসিইউ বেড ও ডায়ালাইসিসের জন্য আরো দুটি  বেড। কিন্তু এই হাসপাতালে আইসিইউ পেতে হলে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। কেউ মারা গেলে দ্রুত মিলে আইসিইউ বেড। নতুবা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্বাভাবিক থাকায় আপাতত অক্সিজেন পাচ্ছেন রোগীরা। গতকাল বিকালে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সব মিলিয়ে হাসপাতালে ৯০টি বেড রোগীতে ভর্তি। ১০টি বেড খালি থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে অন্য রোগে ভোগা শ্বাসকষ্টের রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে না। তাদেরকে সরকারি কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত মহাপাত্র মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গত দুইদিনে বেশ কয়েকজন শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীকে তারা ভর্তি করতে পারেননি। ওই রোগীদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ তারা শ্বাসকষ্টে ভুগলেও কোভিডে আক্রান্ত না। এ কারণে তাদের  রোগ চিহ্নিত করে সঠিক স্থানে রেফার্ড করা হচ্ছে। তবে বিগত এক বছর কষ্ট করে হলেও তারা ওই সব রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে গেছেন। ডা. সুশান্ত জানান, ‘এখন পরিস্থিতি নাজুক। প্রতিদিনই কোভিড পজেটিভ হয়ে অনেক রোগী এসে ভর্তি হচ্ছেন। আমাদের ম্যানেজ করে চলতে হচ্ছে। এ কারণে কোভিড রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’ এদিকে- সিলেটে করোনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আগের চেয়ে মৃত্যু দুই থেকে চারগুণ হারে বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। দিনে ২-৩ জন রোগী মারা যাচ্ছে। আক্রান্তও হচ্ছে বেশি সংখ্যক মানুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেরিত তথ্য থেকে জানা গেছে- চলতি মাসের ১৭ দিনে সিলেটে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন। এতে দেখা গেছে, গড়ে একজনের বেশি রোগী প্রতিদিন সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একদিনে সর্বোচ্চ ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অথচ গত মার্চ মাসে এমনটি ছিল না সিলেটে। ফেব্রুয়ারিতেও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল খুবই কম। মার্চ মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট বিভাগে মারা গেছে ১৩ জন রোগী। মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে আইসিইউ সংকট। সরকারি পর্যায়ে আইসিইউ বেড পর্যাপ্ত থাকলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। যে বেড রয়েছে সেগুলো খুব সীমিত। সীমিত সংখ্যক আইসিইউ দিয়ে সিলেটে মহামারি করোনার সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- সিলেটে করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন। আমরা তাদের পাশে আছি।
তবে- সাপোর্ট লাগবে। আমরা চেষ্টা করছি চিকিৎসকদের সাপোর্ট দিতে। পাশাপাশি আইসিইউ সহ অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এদিকে- করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন আরো ২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬২ জন। যার মধ্যে ৫৫ জনই সিলেটের। আর একই সময়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ৪৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের চারটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় ৬২ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হন। এর মধ্যে সিলেট  জেলার ৫৫ জন, সুনামগঞ্জে ২ জন,  মৌলভীবাজারে ৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সিলেট বিভাগে করোনা প্রমাণিত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৫৯ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সিলেট  জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২ হাজার ২৭২ জন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬৬৭ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ২১৮ জন ও  মৌলভীবাজারে ২ হাজার ২০২ জনের করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। সিলেটে সুস্থ হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৪১ জন। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৩১০ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৯৪ জন, হবিগঞ্জে ১১ জন,  মৌলভীবাজারে ২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে যে ২ জন মারা গেছেন এরমধ্যে ২ জন সিলেট জেলার বাসিন্দা। সেই সঙ্গে সিলেট বিভাগে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩১১ জনে। এর মধ্যে সিলেট জেলার ২৪১ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন ও  মৌলভীবাজারের ২৬ জন রয়েছেন। সিলেটের বেসরকারি মেডিকেল ও ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম হোসাইন জানিয়েছেন, সিলেটে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। সিলেটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং উন্নতমানের হাসপাতালগুলোতেও আইসিইউ সংকট চলছে। করোনার গুরুতর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউতে চাপ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর