× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ৯ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

ইআরএফ, র‌্যাপিড ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের ওয়েবিনার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

অনলাইন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
(৩ বছর আগে) এপ্রিল ১৭, ২০২১, শনিবার, ৭:৩৮ অপরাহ্ন

বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিনিয়োগ আকর্ষণে দীর্ঘদিন ধরে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে অনেক আলোচনা হলেও অগ্রগতি প্রত্যাশিত নয়। এ পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) তারা এসব কথা বলেন। ‘এফডিআই ফর এক্সপোর্ট ডাইভারসিফিকেশন অ্যান্ড স্মুথ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক ওই ওয়েবিনার যৌথভাবে আয়োজন করে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও রিসার্স পলিসি ইনটিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)। ইআরএফের সহসভাপতি এম শফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ওই ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক বর্তমান করোনা ভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কম বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। অথচ একই সময়ে কম্বোডিয়ায় এই বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৪ বিলিয়ন ডলার আর ভিয়েতনামে ১৬১ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বার্ষিক বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ জিডিপি মাত্র এক শতাংশের মতো আর ভিয়েতনামে তা প্রায় ৬ শতাংশ। অথচ সরকারের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাসহ অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু বহু আলোচনা সত্বেও দেশে প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ না আসার পেছনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে নানা ধরণের জটিলতা তথা বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজ করার সূচকে পিছিয়ে থাকাকে অন্যতম কারণ হিসেবে দায়ী করেন। বিশেষত অবকাঠামো দুর্বলতা এবং যেসব অবকাঠামো রয়েছে, বিদ্যমান অবকাঠামো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারা, শ্রমিকের দক্ষতার ঘাটতি, দুর্নীতি, ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণতা, সম্পত্তির নিবন্ধনে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা, ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা, বিভিন্ন অবকাঠামোর অনুমোদন প্রাপ্তিতে জটিলতা তথা ব্যবসা শুরু করতে অনেক বেশি সময় লেগে যাওয়াকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ তথা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পথে বাংলাদেশ আগামী ৫ বছর রপ্তানিতে বিদ্যমান সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যেই ইউরোপ, কানাডাসহ বড় বাজারগুলোতে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা ধরে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে বিনিয়োগ আকর্ষণে চলমান সীমাবদ্ধতা দ্রুত সমাধান করা বিশেষত ব্যবসা সহজ করার সূচকে উন্নতি করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বিদেশিরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের এই সূচকটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। এছাড়া চীন থেকে সরে আসা বিনিয়োগ ধরতে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতা ও এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বিনিয়োগ আকর্ষণে বিদ্যমান কর ব্যবস্থাকে অন্যতম বাধা হিসেবে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বর্তমান কর প্রদান পদ্ধতি ব্যবসাবান্ধব নয়। বর্তমান কর ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা বন্ধই করে দেয়া উচিত। এটি ঠিক না হলে বিদ্যমান ব্যবসাই থাকবে না, নতুন ব্যবসা তো দুরের কথা। এনবিআরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তার চেয়ে বলুন, আপনারা বিনিয়োগ চান না। তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে এলোমেলো চিন্তা না করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুন। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য, কৃষি, হালকা প্রকৌশল খাত, নন কটন তৈরি পোশাক পন্যে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বিদ্যমান কর কাঠামো নিয়ে অসন্তোষের কথা জানান ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানও। তিনি কর কাঠামোর সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কর হার অনেক বেশি।
এ সময় সরকারের কালো টাকা বিনিয়োগের প্রসঙ্গও তোলেন। তিনি বলেন, কর না দিলে সাড়ে ২২ শতাংশ লাভ। কেননা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় কর দিতে হয় মাত্র ১০ শতাংশ। তাহলে বোকার মতো কেন ট্যাক্স দেব? এছাড়া কালো টাকা পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ নেয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কালো টাকা পুঁজিবাজারে ঢোকার পর ২০১০ সালে কী হলো? আমরা কী আবারো সেই পথে যাচ্ছি? পুঁজিবাজার ও আবাসনে না দিয়ে এই সুযোগ স্বাস্থ্য খাত, অবকাঠামোসহ এ ধরনের খাতে দেয়া এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতকেও সমান সুবিধা দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এমসিসিআইর সভাপতি ব্যরিস্টার নিহাদ কবীর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সমন্বয়হীনতা ও অদূরদর্শিতার একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এভাবে দেশ এগিয়ে যাবে না। টার্গেটেড পলিসি নিতে হবে। তিনি সরকারের একটি প্রজ্ঞাপন তুলে ধরে বলেন, মাত্র দুটি কোম্পানির জন্য একটি বিষেশ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ওই পণ্য কি অন্য কোম্পানি তৈরি করে না?

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা স্বীকার করেন। এক্ষেত্রে বিডার পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ঘাটতিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেশে কর্মরত বিদেশি ৫০ হাজার কর্মীর জন্য টিকা চাওয়া হয়েছিল। একাধিক সভা এবং চিঠি দেয়ার পরও তা এখনো হয়নি। তারা এই টিকা পেলে তো ইতিবাচক বার্তা যেত। অবশ্য বিনিয়োগ আকর্ষণে বিডা’র বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।

পরিকল্পনা মন্ত্রী সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই পরিস্থিতিতে (করোনা অতিমারি) জিডিপি এগুচ্ছে, আপনারা আয় করতে পারছেন - এটা ইতিবাচক।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক ড. এম আবু ইউসুফ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর