কিশোরগঞ্জে পৃথক হত্যাকাণ্ডে ৬ জন এবং দু’টি দুর্ঘটনায় ২ জন মিলিয়ে একদিনে মোট ৮ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ভৈরবেই ৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া তাড়াইলে এক শিশু ও কুলিয়ারচরে একজন বিভাটেক চালক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ সদরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক রাজমিস্ত্রি এবং পাকুন্দিয়ায় অটোরিকশা চাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে।
ভৈরবে নিহত ৪ জনের মধ্যে শুক্রবার রাতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মো. ফারুক খান (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ী, শনিবার সকাল ও দুপুরে দুই দফা সংঘর্ষে শেখ মকবুল (৪০) ও শেখ পাবেল (২৮) নিহত হয়েছে। এ ছাড়া শনিবার সকালে শরীফ (১৪) নামে এক অটোচালকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দু’টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে তাড়াইলে রিফাত (১২) নামে এক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। শনিবার সকালে পাটক্ষেত থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অন্যদিকে কুলিয়ারচরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় নৃশংস হামলায় লিটন মিয়া (৪৫) নামে এক বিভাটেক চালক নিহত হন।
এ ছাড়া শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ শহরের বাইসাইকেল যোগে কাজ করতে যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মো. বাচ্চু মিয়া (৬৫) নামে এক রাজমিস্ত্রি নিহত হয়েছে। সকালেই পাকুন্দিয়ায় বাড়ির পাশের সামনের রাস্তায় সবজি ভর্তি এক অটোরিকশা চাপায় রিয়া মণি (৬) নামে এক শিশু নিহত হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আশুগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরার পথে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর ভৈরব প্রান্তে পৌর এলাকার চন্ডিবের খান বাড়ির মো. সালাম খানের ছেলে ব্যবসায়ী মো. ফারুক খান ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এ সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হলে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শুক্রবার রাতে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের কালিকাপ্রসাদের গাজীরটেক এলাকা থেকে শরীফের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত শরীফ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে। সে ভৈরব পৌর শহরের ঘোড়াকান্দা এলাকায় পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতো।
ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের লুন্দিয়া গ্রামে শনিবার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই দফা সংর্ঘষে একই বংশের দুইজন নিহত হওয়া ছাড়াও দুই পক্ষেরই অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এ সময় শতাধিক ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুট করা হয়। এর মধ্যে সকাল ৯টার দিকে লুন্দিয়া গ্রামের শেখ বাড়ির সঙ্গে লুন্দিয়া সিকদার বাড়ির মাজু মেম্বার গ্রুপের সংর্ঘষ হয়। এতে নিহত হয়েছে মৃত শেখ মোতালিব মিয়ার ছেলে শেখ মকবুল। অপরদিকে বেলা ১২টার দিকে লুন্দিয়া শেখ বাড়ির সঙ্গে পাগলার বাড়ির সংর্ঘষ হয়। এতে নিহত হয়েছে শেখ খালেক মিয়ার ছেলে শেখ পাবেল।
ছোট বাচ্চাদের আম পাড়াকে কেন্দ্র করে কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতী ইউনিয়নের মধ্য লালপুর ও ভৈরব উপজেলার মিরারচর উত্তর পাড়া ওমরা বাড়ি এই দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলায় বিভাটেক চালক লিটন মিয়া নৃশংসভাবে খুন হয়। এছাড়া নিহতের বড় ছেলে মো. রাকিব (২০) সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত এবং উভয়পক্ষের অন্তত ২০টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার রাতের খাবার খেয়ে বাইরে বেরিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের চরতালজাঙ্গা বাদুরতলা গ্রামের পাটক্ষেত থেকে শিশু রিফাতের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। রিফাত গ্রামের রাজমিস্ত্রি মো. দুলাল মিয়ার ছেলে।