× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সেরামের টিকা না এলে বিকল্প কি?

প্রথম পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২০ এপ্রিল ২০২১, মঙ্গলবার

দেশে করোনার প্রতিষেধক টিকার মজুত ফুরিয়ে আসছে। গতকাল পর্যন্ত্ত ৭২ লাখের কিছু বেশি টিকা প্রয়োগ হয়েছে। মজুত আছে মাত্র ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ডোজ টিকা। যা দিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে মার্চ মাসে কোনো টিকা আসেনি। এ হিসেবে মার্চ পর্যন্তই ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এপ্রিলের টিকা আসবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের পরবর্তী চালান দেশে আসার বিষয়ে সরকার এখনো সুনির্দিষ্ট করে জানতে না পারায় চলমান টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর টিকা পেতে বিকল্প একাধিক উৎসের খোঁজে নেমেছে সরকার।
বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের টিকা পেতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই দুটি দেশের পক্ষ থেকে সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানায়, মূল্য বেশি হলেও সরকার রাশিয়ার টিকা নেবে। কারণ চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে ওই টিকা সংগ্রহ করা ছাড়া বিকল্প নেই। দেশে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ওই দুটি টিকা সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৩০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রার রেফ্রিজারেটর প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধরনের রেফ্রিজারেটর আছে মাত্র কয়েকটি। এ ছাড়া ওই টিকার মূল্যও রাশিয়ার টিকার তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনাতেই রাশিয়ার টিকা সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে রাশিয়ার টিকার কার্যকারিতাও ভালো। এ কারণে বিকল্প হিসেবে রাশিয়ার টিকা সরকারের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছে চীনের টিকা। রাশিয়ার টিকার নিশ্চিত করার পর পরবর্তী বিকল্প হিসেবে চীনের টিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে সরকারের হাইকমান্ড।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান হারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হতে থাকলে মজুতে থাকা ভ্যাকসিন আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। বর্তমানে দৈনিক দুই লাখ মানুষ ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ প্রথম ডোজ নিচ্ছেন। দেশে মজুত থাকা এক কোটি দুই লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭২ লাখ ডোজ টিকা প্রয়োগ হয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে মোট ছয়টি চালানে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে সরকার। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছিল। কিন্তু, দ্বিতীয় চালানে ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসে। তৃতীয় চালানের ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন মার্চের শেষ সপ্তাহে দেশে আসার কথা থাকলেও দ্বিতীয় চালানের পর সেরামের কাছ থেকে আর কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি। মার্চে ভারত সরকার অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সব ধরনের রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করে। তারা জানায়, ভারতে সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যেতে পারে এবং সে কারণে তাদের নিজস্ব টিকাদান কর্মসূচির জন্য আরো বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রয়োজন।

এদিকে বাংলাদেশের হাতে থাকা এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৪ ডোজ বিতরণ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৭ লাখ ২৯ হাজার ১৪৭ জন এবং ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৮৭ দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন। মজুত ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৬ ডোজ টিকা দিয়ে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এই সময়ের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না এলে অনিশ্চয়তায় পড়বে বাংলাদেশের চলমান টিকাদান কর্মসূচি। চুক্তি অনুযায়ী মার্চ পর্যন্তই আরো ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য সেই টিকা পেতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই টিকা এলে প্রথম ডোজ নেয়া সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হবে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত বছরের ৫ই নভেম্বর সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয়। ওই টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ দেশে আসে গত ২৫শে জানুয়ারি। এর আগে ভারত সরকার বাংলাদেশকে আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পাঠায় ২১শে জানুয়ারি। ওই টিকা হাতে পাওয়ার পর ২৭ ও ২৮শে জানুয়ারি পরীক্ষামূলক টিকাদান করা হয়। ৭ই ফেব্রুয়ারি সারা দেশে গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২২শে ফেব্রুয়ারি কেনা টিকার আরো ২০ লাখ ডোজ আসে। আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশকে আরো ১২ লাখ ডোজ উপহার দেয় ভারত। সবমিলিয়ে সরকার এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, কেনা টিকার তিন কোটি ডোজের মধ্যে প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আসার কথা। কিন্তু জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে আসে ২০ লাখ ডোজ। ৩০ লাখ ডোজ কম আসে। মার্চ মাসে কোনো টিকা আসেনি। এ হিসাবে মার্চ পর্যন্তই চুক্তি অনুযায়ী ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এপ্রিলের টিকা আসবে কিনা তা নিশ্চিত নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, এ মুহূর্তে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের কার্যক্রম একইসঙ্গে চালানোটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজগুলো দেয়া যাবে কিনা, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত। কারণ আমাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ ভ্যাকসিন নেই।

ভারত থেকে টিকা না আসলে বিকল্প কোনো উৎস থেকে টিকা আসবে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম  মানবজমিনকে বলেন, বিকল্প উৎস থেকে টিকা নেয়ার বিষয়ে ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি এই বিষয়ে জানাবে। যদি সেরামের কাছ থেকে দ্রুত ভ্যাকসিন পাওয়া না যায়, তাহলে আমরা অন্য উৎস থেকে একই ভ্যাকসিন জোগাড় করার চেষ্টা করবো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, মার্চ পর্যন্ত বকেয়া টিকা পেতে বেক্সিমকোর মাধ্যমে সেরামকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও টিকার জন্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। আশা করি, টিকা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তা কেটে যাবে। সেরাম জানিয়েছে তারা টিকা দিতে প্রস্তুত। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর অনুমতি দিলেই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন পাঠানো হবে বলে ডিজি উল্লেখ করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর