প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এ জায়গা করে নিয়েছেন ৯ বাংলাদেশি তরুণ। মঙ্গলবার বিখ্যাত এই ম্যাগাজিনটির এশিয়ার ৩০ বছরের কমবয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনকারী (চেঞ্জমেকার) তালিকায় এ বছর প্রথমবারের মতো উঠে আসে তাদের নাম। ২০১১ সাল থেকে এই তালিকা করছে ফোর্বস। ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৯ জন বাংলাদেশি তাদের অসামান্য কাজের জন্য এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। এবারের তালিকায় থাকা বাংলাদেশিরা প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, সামাজিক প্রভাব, খুচরা ও ই-বাণিজ্যে অবদান রাখায় তালিকাভুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তারা হলেন- গেজ-এর শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় (২৪) ও মোতাসিম বীর রহমান (২৬), ক্র্যামস্ট্যাকের মীর সাকিব (২৮), হাইড্রোকোপ্লাসের রিজভানা হৃদিতা (২৮) ও জাহিন রোহান রাজীন (২২), অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটির সুমী হাসান চৌধুরী (২৬) ও রিজভী আরেফিন (২৬), অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশনের আহমেদ ইমতিয়াজ জামি (২৭) ও পিকাবোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোরিন তালুকদার (২৭)। এ বছরের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন রিটেইল অ্যান্ড ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে স্থান করে নেয়া মোরিন তালুকদার ই-কমার্স প্ল্যাটফরম পিকাবুর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৬ সালের ১৫ই মে এটি যাত্রা শুরু করে।
ই-কমার্স প্ল্যাটফরমের বাইরে চলতি বছরে দেশব্যাপী দেড়শ’টি দোকানও খোলার পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এবার প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছে তিনটি উদ্যোগ। এর একটি হলো ‘গেজ’। এটি বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইভিত্তিক স্ট্যার্টআপ। এ উদ্যোগের জন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন শেহজাদ নূর তাওস প্রিয় ও মোতাসিম বীর রহমান। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোগটি অনলাইন লেনদেনের জন্য ভিজ্যুয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি সরবরাহ করে। গেজ ২০২০ সালে ‘স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ড কাপ বাংলাদেশ’ এবং ২০১৯ সালে সেরা স্টার্টআপের জন্য বাংলাদেশ বিজনেস ইনোভেশন পুরস্কার পায়। প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় থাকা আরেকটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ক্র্যামস্ট্যাক। এটির প্রতিষ্ঠাতা মীর সাকিব। এই স্টার্টআপ একটি ব্যবসাভিত্তিক ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম, যেটি তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করে। এইআই নিয়ে কাজ করা আরেক প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকুয়োপ্লাস এই ক্যাটাগরিতে ফোর্বসের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। এই স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করছেন রিজওয়ানা হৃদিতা ও জাহিন রোহান রাজিন। ঢাকাভিত্তিক এই উদ্যোগ ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত। তারা নিরাপদ পানি নিয়ে কাজ করেন। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির গুণগত মান যাচাই বাছাই করে। বিভিন্ন সরকারি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা নিচ্ছে। ২০২০ সালে জাতিসংঘের ১৭ ‘ইয়াং লিডার্সের’ সম্মাননা পেয়েছেন তারা। সামাজিক খাতে অবদান রাখায় সামাজিক প্রভাব ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পেয়েছে অ্যাওয়ারনেস থ্রিসিক্সটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শমী চৌধুরী ও রিজভী আরেফিন। কুয়ালালামপুরভিত্তিক সেবামূলক এনজিওটি তরুণদের সংগঠিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে। ২৩টি দেশে তাদের দেড় হাজার ভলান্টিয়ার রয়েছে, যারা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায়। শমী ও রিজভী এর আগে ইউএনডিপির স্বীকৃতি পেয়েছেন। এ ক্যাটাগরিতে সেরার তালিকায় স্থান পাওয়া আরেক বাংলাদেশি উদ্যোগ অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন। আহমেদ ইমতিয়াজ জামি ২০১০ সালে এটি গড়ে তোলেন। সেই থেকে তিনি দারিদ্র্যদূরীকরণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, মানবাধিকার ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। ফাউন্ডেশনটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তা দিয়েছে এবং ৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। নিজস্ব স্কুল ও অনুদান কর্মসূচিও রয়েছে। প্রায় ১০ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। করোনাভাইরাস মহামারিতেও কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি। গত বছর ফোর্বসের এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তা ও সমাজ পরিবর্তনকারী (চেঞ্জমেকার) তালিকায় ছিলেন বাংলাদেশের রাবা খান ও ইশরাত করিম। ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাবা খান সমাজের নানা বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও অনলাইনে প্রকাশ করে সুপরিচিত হয়েছেন। আর ইশরাত করিম আমাল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সহায়তায় নানা কাজ করেন।