× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দুর্দশা

প্রথম পাতা

ফাহিমা আক্তার সুমি
২১ এপ্রিল ২০২১, বুধবার

লকডাউন চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ এখন প্রায় সবাই কর্মহীন। চরম কষ্টে কাটছে তাদের জীবন। রাজধানীর তেজগাঁও, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, কাওরান বাজারসহ বিভিন্ন্ন এলাকার ভাসমান নিম্নআয়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনই তথ্য।

ঢাকা শহরে ফুটপাথ ও বস্তিতে অনেক নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ ভাসমান অবস্থায় থাকেন। তারা প্রায় সবাই সংসারে অভাব অনটনের কারণে পেটের দায়ে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। অনেকে আবার নিজ পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। এসব নিম্নবিত্ত মানুষগুলো দিনমজুরের কাজ, রিকশা চালানো, বাসাবাড়ির কাজ, ফুটপাথে চা-সিগারেট বিক্রি করে জীবনযাপন করেন। করোনাকালের এই চলমান লকডাউনে দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পারছেন না কোনো কাজ করতে। বাসাবাড়িতেও কাজের জন্য নেয়া হচ্ছে না তাদের। আবার অনেকে কর্মহীন অনিশ্চিত জীবনের চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে ফিরছেন বাড়িতে।

এই ছিন্নমূল নিম্নআয়ের মানুষগুলোর আয়ের সব পথ লকডাউনে বন্ধ হয়ে আছে। খাবারের অপেক্ষায় শুকনো মুখে তাকিয়ে থাকেন তারা। কোথাও কেউ খাবার নিয়ে আসছে কিনা এই ভেবে। গত বছর সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে লকডাউন চালাকালে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিম্নআয়ের লোকজন পেলেও এ বছর সেসবের দেখা খুব একটা মেলেনি।

আলেয়া বেগমের মাত্র ১২ বছর বয়সে বিয়ে হয়। স্বামী মারা গেছেন সড়ক দুর্ঘটনায়। কিন্তু রেখে যান ৩ বছরের সালমা ও ৬ মাস বয়সের সুফি নামে দুই মেয়ে। স্বামী মারা যাবার কিছুদিন পর পেটের দায়ে ছুটে আসেন কর্মব্যস্ত শহরে। তিনি বলেন, গত পাঁচ মাস আগে এক্সিডেন্টে স্বামী মারা যায়। দুই বাচ্চা নিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। এরপর চলে আসি ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করার জন্য। বাসাবাড়িতে কাজ করে দুই মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। লকডাউনের কারণে বাসাবাড়ির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন এই দুই বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করি। লকডাউনে মানুষ নেই। ভিক্ষাও কেউ দিচ্ছে না। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। রাত হলে ফার্মগেট এলাকায় রাস্তায় ঘুমাই।

কাওরান বাজার ফুটপাথ থেকে ৬৮ বছর বয়সী উলিয়া বেগম বলেন, গত ৩০ বছর ধরে তিনি ঢাকায়। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। অন্ধ ছেলেকে নিয়ে জামালপুর থেকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষা করেন। এই করোনার লকডাউনে ভিক্ষাও কেউ দিচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ইফতারের সময় একটু চেয়েচিন্তে খাবার আনি। সেহ্‌রির সময় খাওয়ার মতো কিছুই থাকে না। কেউ আমাদের কোনো খাবার দেইনি।

কাঁটাবন এলাকায় সাফি বেগম (৭০) বলেন, গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসেছি ২০ বছর আগে। কোনো ছেলেমেয়ে নেই। স্বামী দেশ স্বাধীনের সময় ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। আগে শাকসবজি বিক্রি ও বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। এখন ভিক্ষা করে খাই। গত দুই তিন দিন ধরে ভিক্ষাও দিচ্ছেন না কেউ। একবার ভাত খেলে আর একবার না খেয়ে থাকি। রোজা থাকতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

রিকশাচালক নাসির আহমেদ বলেন, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে রাস্তায় ফুটপাথে থাকি। সারা দিন রিকশা চালাই। তার স্ত্রী ভাঙাড়ির জিনিসপত্র টোকান। লকডাউনের আগে ভালো আয় হতো। আর এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। একবার ঠিকমতো খেতেও পারছেন না। ছোট ছেলেমেয়েদের খাবার দিতে পারছেন না। তিনি বলেন, রিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ মাঝে মাঝে রিকশা উল্টিয়ে ফেলে। ভয়ে রিকশা নিয়েও বের হন না। জীবন যেন এভাবে আর চলছে না।

আবদুস সাত্তার দিনমজুরের কাজ করেন। থাকেন রায়ের বাজার বস্তিতে। তিনি বলেন, ‘আমার কাজকাম সবই বন্ধ। আমি এখন বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে কী করে খাবো।’
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর