× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বনাথে সুমেল হত্যা /‘ঘাতক’ সাইফুলের দুই পাসপোর্ট জব্দ

শেষের পাতা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৪ মে ২০২১, মঙ্গলবার

বিশ্বনাথের ‘ঘাতক’ সাইফুল এখনো পলাতক। দুইদিনেও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে সাইফুলের দুটি পাসপোর্ট জব্দ করেছে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। এর মধ্যে একটি বৃটিশ ও অপরটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট। সাইফুল যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে কারণে ঘটনার দিনই পুলিশ তার দুটি পাসপোর্ট জব্দ করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সাইফুল খুব ধূর্ত। সে দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করতো। একটি বৃটেনের ও অপরটি বাংলাদেশের।
সে পাসপোর্ট ছাড়া বিদেশে যেতে পারবে না। এবং পারছেও না। দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে আছে সে। তাকে গ্রেপ্তারে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরের ‘ত্রাস’ সাইফুল ইসলাম ও তার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের হাতে স্কুলছাত্র সুমেল নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ কমছে না। গতকাল হাওরের নিকটবর্তী গ্রামের লোকজন বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দলে দলে বের হয়ে সাইফুল ও তার সহযোগীদের খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। বিশ্বনাথ থানা পুলিশও তাকে গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুছা জানিয়েছেন, তার দুটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পথ তার বন্ধ। সে দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে আছে। তাকে গ্রেপ্তার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার গুলি করে সুমেল হত্যার পর এলাকাতেই ছিল সাইফুল ও তার সহযোগীরা। এরপর সুমেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তারা এলাকা ছেড়ে পালায়। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ মিলছে না। রোববার বিকালে স্থানীয় এলাকার মানুষ সুমেলের লাশ নিয়ে বিশ্বনাথ সদরে বিক্ষোভ করেছে। এরপর বাড়িতে এনে দাফন করে। লাশ দাফনের পর রাতে সিলেটের বিশ্বনাথ থানায় সাইফুলকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন চৈতন্যনগর গ্রামের ইব্রাহিম আলী। মামলায় তিনি ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করেন। মামলার আসামি ইব্রাহিম আলী বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রোববার রাতে তারা বিশ্বনাথ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ রাতে মামলা রেকর্ড করেনি। সোমবার দিনে মামলা করবে বলে জানিয়েছে। মামলার এজাহারে তিনি জানিয়েছেন, জোরপূর্বক মাটি কাটতে যায় সাইফুল ও তার লোকজন। এ সময় মৌখিক বাধা দিলেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাইফুল ও তার সহযোগীরা। বাধা দিতেই তাদের ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ ও গুলিবর্ষণ শুরু করে সাইফুল ও তার সহযোগীরা। পূর্বের পরিকল্পনা মতো সাইফুল এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান মামলার বাদী। বিশ্বনাথ থানার ওসি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, স্কুলছাত্র সুমেল হত্যার ঘটনায় প্রবাসী সাইফুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল তাদেরকে সুমেল হত্যার মামলার আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ সুমেল হত্যার ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে পুলিশ ঘটনার পর দুটি পাসপোর্ট জব্দ করতে পারলেও এখনো খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত একনলা বন্দুক উদ্ধার করতে পারেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাইফুলের নেতৃত্বে ইসলামপুরের গ্রামের রাস্তার ওপর হামলার সময় সাইফুলের হাতে ছিল একনলা বন্দুক। এটিকে সাইফুল সব সময় বৈধ বলে প্রচার করলেও সত্যিকার অর্থে বন্দুকটি বৈধ কিনা- সেটি জানেন না এলাকার মানুষ। তবে শনিবার স্কুলছাত্র সুমেলকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় বন্দুকটি লুকিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে চলে গেছে। এ কারণে বন্দুক কোথায় রয়েছে সেটি জানে না কেউ। স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সুমেল হত্যার ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষ সন্ত্রাসী সাইফুলের ওপর ক্ষুব্ধ-বিক্ষুব্ধ। সুমেল মারা গেলেও এখনো তার গুলিবিদ্ধ পিতা মানিক মিয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মানিক মিয়ার মাথায় ৫টি গুলি লেগেছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই গুলিগুলো মাথার চামড়া ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গেছে। এই অস্ত্রোপচারটি সিলেটে ঝুঁকিপূর্ণ। এ কারণে গতকাল বিকালে মানিক মিয়াকে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। আনোয়ার জানান, এভাবে নির্দয়ের মতো কেউ কারো ওপর গুলি চালাতে পারে না। তিনি বলেন, সাইফুলকে গ্রেপ্তার না করলে এলাকার মানুষের ক্ষোভ কমবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সাইফুল সহ খুুনিদের গ্রেপ্তার দাবি করেন তিনি। এদিকে, সুমেলের ওপর গুলিবর্ষণকারী সাইফুল আলমকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও উপজেলার পশ্চিম চান্দশিরকাপন গ্রামের মোহাম্মদ কবির মিয়া। গত রোববার দুপুরে তিনি এ পুরস্কার ঘোষণা করেন। ঘোষণার সময় থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ধরিয়ে দিতে পারলে এই টাকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তার ঘোষণা অনুযায়ী প্রায় ৩০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘাতক সাইফুলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। সাইফুলের সন্ধানও দিতে পারেননি কেউ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর