× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অবৈধ বিট কয়েনে কোটিপতি সুমন

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
৪ মে ২০২১, মঙ্গলবার

বরগুনার ইসমাইল হোসেন সুমন ২০১৩ সালে সমাজবিজ্ঞানে পড়ালেখা শেষ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর আর চাকরির পেছনে ছুটেননি। ছোট একটি কম্পিউটারের দোকান দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। শিশুদের খেলনা ও কাপড়ও বিক্রি করতেন। তার কিছুদিন পর শুরু করেন অবৈধ বিট কয়েন ব্যবসা। অবৈধ এই ব্যবসাটি আড়াল করার জন্য অনলাইন আউটসোর্সিং ব্যবসাও শুরু করেন। ছোটখাটো একটি অফিস দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও কয়েক বছরের মাথায় একটি ভবনের তিনটি ফ্লোরে ব্যবসার পরিধি বাড়ান। ২৪ ঘণ্টার ব্যবসায় কাজ করেন তিন শিফটে ৩২ জন কর্মচারী।
দেশ-বিদেশে গড়ে তুলেন অবৈধ ব্যবসার নেটওয়ার্ক। শুধু তাই নয় অনলাইনে নানা রকম লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এসব করে মাত্র সাত বছরেই গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ বিত্ত বৈভব। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, সুপারশপ, বেবি শপ, গাড়ি কি নেই তার? করোনাকালীন গত এক বছরেই তার অনলাইন লেনদেন হয়েছে ১৫ লাখ ডলার। এখন পর্যন্ত তার অনলাইনে মজুত আছে ১ লাখ ডলারের মতো। কিন্তু রেহাই মিলেনি। র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম দীর্ঘদিন ধরে তাকে নজরদারিতে রেখেছিল। পরে গত রোববার রাত আড়াইটার দিকে র‌্যাব ঢাকার উত্তর বাড্ডা এলাকায় বেসিক বিজ মার্কেটিং নামক অফিসে অভিযান চালিয়ে মূলহোতা ইসমাইল হোসেন সুমন ওরফে কয়েন সুমনসহ ও তার ১১ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পর তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য।
গ্রেপ্তারকৃত বাকিরা হলো, আবুল বাশার রুবেল (২৮), আরমান পিয়াস (৩১), রায়হান আলম সিদ্দিকী (২৮), মো. জুবায়ের (১৮), মেহেদি হাসান রাহাত (২৪), মেহেদি হাসান (১৯), রাকিবুল হাসান (২৩), মো. রাকিবুল ইসলাম (২২), মো. সোলাইমান ইসলাম (২১), মো. জাকারিয়া (১৮), মো. আরাফাত হোসেন (২২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৯টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, ৩টি ল্যাপটপ, ১৫টি মোবাইল ফোন, ১টি ট্যাবলেট ফোনসহ আরো কিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মূলহোতা সুমন জানিয়েছেন, বেসিক বিজ মার্কেটিং নামক অনলাইন আউটসোর্সিং ব্যবসার আড়ালে অবৈধ বিট কয়েন ও অনলাইন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা করে আসছিলেন। ২০১৩ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। এখন তার ব্যবসার বিস্তার দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে। এই অবৈধ প্রতারণামূলক ব্যবসার মাধ্যমে সে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। ঢাকার ইসিবি চত্বরে ১টি, গাজীপুরে ১টি ফ্ল্যাট রয়েছে। রয়েছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্লট, মোহাম্মদপুরে রয়েছে সুপার শপ, অনলাইন বেবি শপ।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, একাধিক ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেটের মাধ্যমে সুমন বিট কয়েনসহ বিভিন্ন প্রতারণামূলক ব্যবসা করে আসছিলেন। ভার্চ্যুয়াল ওয়ালেটে তার ১ লাখ ডলার মজুত আছে। পাশাপাশি গত এক বছরে ভার্চ্যুয়ালি ১৫ লাখ ডলার লেনদেন করেছেন। প্রতারণার কৌশল হিসেবে দেশি- বিদেশি বিভিন্ন সাইটে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিতেন। পরে এসব সাইট বন্ধ করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করতেন। ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি বলেন, বিট কয়েন ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত এবং তারা যে সকল সাইট ব্যবহার করছেন তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্ধ্যা ৭টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সময়টা তারা বেছে নেয়। আমরা বাড্ডায় সুমনের অফিসে ওই সময়টাতে অভিযান চালিয়ে দেখতে পেয়েছি ওই অফিসে ১২ জন কর্মচারী পৃথক কম্পিউটারে বিভিন্ন সাইটে কাজ করছেন। আমরা জানতে পেরেছি সুমনের সঙ্গে বিভিন্ন অনলাইন জুয়াড়ি ও বিট কয়েন কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত আছে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সঙ্গে বড় অঙ্কের লেনদেন ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের অনলাইন সাইটের সঙ্গে তাদের ভালো যোগাযোগ ছিল।
র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে বিট কয়েন নিষিদ্ধ তবে বেশকিছু দেশেই বিট কয়েন বৈধ। সমপ্রতি ভারতে এটা বৈধ করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরেও বৈধ। এসব দেশের সঙ্গে লেনদেন রয়েছে বা দেশীয় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায়ী এবং আন্তর্জাতিক জুয়াড়িদের নিকট বিট কয়েন লেনদেন ও বিক্রি করতেন সুমন। বিট কয়েন দিয়ে অনেকেই অর্থপাচার, অস্ত্র কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা করছেন। এতে করে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। আমরা তাদের কয়েকটা সাইট মনিটরিং করে দেখতে পেয়েছি যারা অনলাইন গেম, জুয়া ও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসা করে তারাই বিট কয়েন কিনেছে।
এরআগে বিট কয়েন ব্যবসার আরেক হোতা রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে মামলা দিয়েছিলাম। মামলা এখন সিআইডি তদন্ত করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর