× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চীনের ‘নতুন ধরনের অস্ত্র'

দেশ বিদেশ

মানবজমিন ডেস্ক
৭ মে ২০২১, শুক্রবার

গত শতাব্দীতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ চালানোর পদ্ধতিতে খুব দ্রুত হারে পরিবর্তন দেখা গেছে। যেমন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মেশিন গান এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শত্রুদের বিরুদ্ধে বিমান ও ট্যাংক ব্যবহার করা হতো। যুদ্ধের প্রযুক্তির বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন শত্রুদের অক্ষম, নিরপেক্ষ অথবা হত্যা করার জন্য নিত্যনতুন উপায়ের অনুসন্ধান করছে। আর এসব দেশের মধ্যে অগ্রণী অবস্থানে রয়েছে চীন।

বিগত কয়েকদশক ধরে চীনে প্রচলিত ‘এসাসিনস ম্যাস বা হত্যাকারীর হাতিয়ার’ অস্ত্র শব্দটি অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতো। চীনা শব্দ শাশুজিয়ান (প্রাচীন চীনা লোককাহিনীর একজন নায়ক। যিনি শুধুমাত্র একটি অস্ত্র ব্যবহার করে এবং নিয়মের বাইরে শত্রুদের অতর্কিত হামলা করে অনেক শক্তিশালী শত্রুদের পরাভুত করেছেন।)

চীন নিজেই পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) অনেক বিশেষ অস্ত্রকে ‘এসাসিনস ম্যাস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এসব অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে পিএইচএল-০৩ ট্রাক মাউন্টেট মাল্টিপল রকেট লাউঞ্চার, ডিএফ-২১ডি অ্যান্টি-শিপ ব্যালেস্টিক মিসাইল রয়েছে। সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। চীন এখন ‘নতুন ধরনের অস্ত্র ব্যবস্থার’ অনুসন্ধান করছে। তারা এমন ধরনের প্রযুক্তি চাইছে যেগুলো একদিকে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেবে অন্যদিকে পিএলএর জন্য অসামান্য সুবিধা নিয়ে আসবে।

তবে এখানে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে থাকা লাইট সাবার্স এবং দ্বৈত মহাকাশযানের কথা বলা হয়নি। বরং এখানে ডিজিটাল এবং সাইবার ডোমেইনের কথা বলা হচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে এসব ‘অস্ত্রের’ অনেকগুলোই পিএলএ স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের (পিএলএএসএসএফ) অন্তর্গত। আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের  স্থান, বৈদ্যুতিক যুদ্ধ এবং সাইবারের দিকগুলো পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এই পিএলএএসএসএফ গঠন করা হয়।  

মার্কিন বিমান বাহিনীর চায়না অ্যারোস্পেস স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক মার্কাস ক্লে নিউ কনসেপ্ট ওয়াপনস (এসসিডব্লিউ) পরিভাষাটি ব্যাখ্যা করেন। তার ব্যাখায় এভাবে বলা হয়, ‘বিংশ শতাব্দীর শেষের মধ্যবর্তী সময়ে পিএলএ লেখকরা এনসিডব্লিউকে এমন অস্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন যেগুলো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং আধুনিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ধরনের অস্ত্রের ‘বিস্ময়কর প্রভাব’ রয়েছে এবং এগুলো সামরিক বাহিনীর ধরন ও দক্ষতায় মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে।’

ক্লে বলেন, ২০১০ সালের দিকে চীনের একাডেমিক এবং সামরিক বাহিনীতে এ ধরনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি আরো বলেন, ‘বিধ্বংসী প্রযুক্তিগুলো তখন কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান নেয়। এনসিডব্লিউ নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনায় ‘নতুন শক্তির উৎস, নতুন কর্মপরিকল্পনা এবং ধ্বংস প্রক্রিয়ার দিকে’ আলোকপাত করা হয়।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব অস্ত্রের ধরণ হলো এটি দিয়ে সহজে কোন বন্দুক, জাহাজ অথবা বিমানের দিকে তাক করা যায় না। তবে প্রাথমিকভাবে ডোমেইনের তথ্য হিসেবে কাজ করে, তাদের কার্যকারিতা প্রায় সময়ই ডিজিটালভাবে সম্পন্ন হয় এবং সহজে এর কোন নামকরণ হয় না।

২০১৪ সালে চীন কিছু অস্ত্রের তালিকা তৈরি করে। এই অস্ত্রগুলোর চার ধরনের বৈশিষ্ট রয়েছে। এসব অস্ত্র নেটওয়ার্ক আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা অস্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, নতুন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, স্টিলথ ওয়াপন, হাইপারসনিক গতিশীল অস্ত্র, প্রাণঘাতি নয় এমন রাসায়নিক।

তবে অনেকের মধ্যেই ধারণা রয়েছে চীন তাদের অস্ত্রের ধরণ সম্পর্কে অনেক কিছুই অতিরঞ্জিত করে। যেমন- ভারতের সঙ্গে চলমান সীমান্ত সংঘর্ষের সময় দুটি পাহাড়ের চূড়া থেকে ভারতীয় সেনাদের সরাতে লেক প্যানগংয়ে মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র ব্যবহার করেছিলো পিএলএ সেনাবাহিনী। মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রগুলো উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সির বৈদ্যুতিক পালস দিয়ে তৈরি যা মানুষের শরীরের কোষে তাৎক্ষণিক যন্ত্রণা ও ব্যাথার সৃষ্টি করে। চীনের একজন শিক্ষাবিদ দাবি করেছেন, ‘১৫ মিনিটের মধ্যে ওই পাহাড়ের চূড়ায় থাকা সবাই বমি করতে থাকে। তারা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলো না, একপর্যায়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এভাবেই আমরা সেখানে অবস্থান নিতে পারি।’

তবে মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র ব্যবহারে পিএলএর দাবিটি মেনে নেয়নি ভারত সরকার। তবে চীন অবশ্যই এ ধরনের অস্ত্র তৈরি করছে। ২০১৪ ঝুহাই এয়ার শোতে ডব্লিউবি-ওয়ান নামে একটি ট্রাক মাউন্টেড সক্রিয় ডেনায়াল সিস্টেম প্রদর্শন করে পলি টেকনোলজিস। এ ধরনের মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র ব্যবহার করে চীন গুলিবর্ষণ ছাড়াই শত্রুদের দমন করে কোন অঞ্চল দখল করতে পারবে।
 
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে দক্ষিণ চীন সাগরে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য নৌবাহিনীর জাহাজে এ ধরনের মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র লাগিয়েছে পিএলএ নেভি। অ্যান্টি-শিপ মিসাইল প্রতিরোধসক্ষম উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র তৈরির জন্য ২০১৭ সালে পিএলএ নেভিকে জাতীয় প্রযুক্তি পুরস্কার দেয়া হয়। তবে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, অভিযোগ রয়েছে ২০১৮ সালে গুয়াংঝুতে আমেরিকান কূটনীতিবিদ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাইক্রোওয়েভ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। পাইলটদের বিরুদ্ধে চীন লেজার ব্যবহার করে বলেও জানা গেছে। জিবুতি ও পূর্ব-সাগরের ওপর দিয়ে যাওয়া আমেরিকান সামরিক বাহিনীর বিমানচালকদের ওপর তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে।

সূত্র: এএনআই
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর