× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

হুমকিতে পেপার কাপ শিল্প, আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি

দেশ বিদেশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
৭ মে ২০২১, শুক্রবার

 জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নীতিমালার কারণে কাগজের কাপ-প্লেট তৈরির দেশীয় শিল্প মার খাচ্ছে। আবার এর বাজার ধরতে পারছে না দেশীয় উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, পেপার কাপ উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক বেশি থাকায় বিকাশ ঘটছে না পেপার কাপ শিল্পের। শুল্ক বেশি থাকায় প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে উৎপাদন খরচে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। তাই পেপার কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন পেপার কাপ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (পিসিএমএবি) সম্প্রতি আবেদন করেছে। পিসিএমএবি আমদানি করা পেপার কাপের প্রতি কেজির দাম ন্যূনতম ৩.৫ ডলার করার দাবি জানিয়েছে।

পিসিএমএবি তথ্য মতে, পেপার কাপ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে বাংলাদেশে শুল্ক দিতে হয় ৬১ শতাংশ। যেখানে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, ভারত পেপার কাপের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। অন্যদিকে নেপালে সাড়ে সাত শতাংশ, মিয়ানমারে ৫ শতাংশ, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।


পিসিএমএবি জানায়, চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দেশীয় বিনিয়োগকারীরা ছোট-বড় ৫০-৬০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু একই পণ্য আমদানিতে ন্যূনতম দাম কম নির্ধারণ করায় দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাকিগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ।

তাদের মতে, করোনা পরিস্থিতিতে চা কফির জন্য কাগজের কাপের চাহিদা বেড়েছে। কফি শপ থেকে রেস্টুরেন্ট, এমনকি চায়ের দোকান সর্বত্রই বেড়েছে কাগজের কাপের ব্যবহারের চল। পেপার কাপের বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার ৩১৬ বিলিয়ন ডলারের। আর দেশে প্রতি মাসে পেপার কাপের চাহিদা ২০ কোটি পিস কাপ। গড়ে এক টাকা করে কাপের দাম হলে বছরে দেশে চাহিদা ২৪০ কোটি টাকার কাপ। এর মধ্যে পাঁচ কোটি কাপ দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করে। আমদানি হয় ১৫ কোটি কাপ। যার বেশিরভাগই ভারত থেকে আসে বলে জানায় পিসিএমএবি।

জানা গেছে, ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও বাংলাদেশে পেপার কাপ ও পেপার প্লেট উৎপাদন ও বাজারজাত করছে কিছু প্রতিষ্ঠান। কাগজের তৈরি কাপ সারা বিশ্বেই পরিবেশবান্ধব এবং স্বাস্থ্যসম্মত পণ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যা চা, কফি, কোমল পানীয়, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিবেশনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।

উল্লেখ্য, পরিবেশ সংরক্ষণে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ৬ই জানুয়ারি প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম পণ্য নিষিদ্ধ করে বিকল্প পণ্য ব্যবহারের আদেশ দেন। ফলে পেপার কাপ ও পেপার প্লেট পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্য হিসেবে সমাদৃত হতে পারে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলিয়ে এ ধরনের প্লাস্টিক পণ্য দেশে উৎপাদন হচ্ছে এবং তা প্রকাশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশবান্ধব পেপার কাপ ও অন্যান্য পণ্যের বাজার হুমকির মুখে পড়েছে।

এ শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, কাগজের কাপ ও প্লেট তৈরির কাঁচামাল ভার্জিন উড পাল্প মন্ড থেকে মেকানিক্যাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়। পণ্যটি ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলে অতি দ্রুত তা মাটির সঙ্গে মিশে জৈব সারে পরিণত হয়।

পেপার কাপ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন বাংলাদেশের (পিসিএমএবি) সভাপতি কাজী সাজিদুর রহমান বলেন, রপ্তানিবাজার বড় করার জন্য নতুন পণ্যের অবাধ বাজার সৃষ্টি করা খুবই প্রয়োজন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলে থাকেন। বর্তমান বিশ্বে পেপার কাপ পণ্যের বাজারের আয়তন ২৮০ বিলিয়ন ডলার, যা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সম্ভাবনার ইংগিত দেয়। যেহেতু, কাগজের কাপের পৃথিবীব্যাপী বাজার আছে, সেহেতু এই শিল্প সম্প্রসারণের মাধ্যমে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। তিনি বলেন, এ সম্ভাবনাময় শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য স্বার্থান্বেষী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে কম দাম ঘোষণার মাধ্যমে পেপার কাপ-প্লেট আমদানি করছে। এর ফলে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প হুমকির মুখে পড়ছে।

উল্লেখ্য, পেপার কাপ ও প্লেটের ন্যূনতম আমদানি মূল্য প্রতি কেজি ১.৫ ডলার নির্ধারণ করা আছে, যা আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কাজী সাজিদুর রহমান জানান, শুরুতে এর প্রতি কেজির দাম ছিল ৬০ সেন্ট। বিষয়টি এনবিআরের দৃষ্টিগোচর করা হলে প্রতি কেজির দাম ১.৫ ডলার করা হয়। এটাও খুবই কম। এ কারণে কাগজের কাপ-প্লেট আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ আমদানি দাম কেজি প্রতি ৩.৫ ডলার নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। করোনাকালে দেশীয় শিল্প নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসন্ন বাজেটে দেশীয় শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। পেপার কাপ শিল্পের বিষয়ে আমরা অবহিত আছি।

৮০ এমএল থেকে ৩৬০ এমএলের পেপার কাপ উৎপাদিত হয় দেশে। দাম ৮০ পয়সা থেকে আড়াই টাকা। ৮০ এমএল ৮০ পয়সা, ১০০ এমএল ৯০ পয়সা, ১২০ এমএল ৯৫ পয়সা । আর পেপারের তৈরি প্লেট তিন টাকা থেকে ৫ টাকা। এগুলো ৭ ইঞ্চি, ৮ ইঞ্চি, ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি আকারের প্লেট।

বর্তমানে পেপার কাপ তৈরির কাগজ আমদানি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে পিসিএমএবি এর সভাপতি বলেন, করোনার আগে এক টন কাগজের দাম ছিল ১১০০-১২০০ ডলার। সেই কাগজের দাম বেড়ে হয়েছে ১৭০০ ডলার। এখন কাগজ আমদানিও বন্ধ হয়ে গেছে।

টিএসএস এম্পায়ার একটি পেশাদার কাগজ পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের শীর্ষ ৫ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের একটি। ঢাকার বাউনিয়াতে টিএসএস এম্পায়ারের অফিস। এর স্বত্বাধিকারী রাশেদ বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে তিনটি মেশিন রয়েছে যা দিয়ে প্রতিদিন এক লাখ দশ হাজার কাপ তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগী বাজারে টিকতে না পেরে গত ২০ দিন ধরে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

রাশেদ বলেন, আমাদের ব্যবসা বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই। এক দিকে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে আর অন্যদিকে নি¤œমানের কাপ আমদানি হচ্ছে। এখন আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে পেপার কাপ উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে শূণ্য শুল্ক রাখতে হবে। একই সঙ্গে বিদেশ থেকে ফিনিশড কাপ আমদানিতে শুল্ক বাড়াতে হবে।

তিনি জানান, এ খাতে একশ'র বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তারা একটি মেশিন কিনে উৎপাদন শুরু করেছে। কিন্তু এখন টিকে থাকতে পারছেন না। এখন না পারছে মেশিন বিক্রি করতে, না পারছে পণ্য উৎপাদন করে বিক্রি করতে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর