নকশি কাঁথায় বদলে গেছে সাগরিকা চৌধুরী রুমার ভাগ্য। এখন তিনি দেশ-বিদেশের অনেক মানুষের কাছে নকশি আপু হিসেবে পরিচিত। সাংসারিক জীবনের মধ্যে রুমা পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের প্রচেষ্টা ও কাজের দক্ষতায় মাত্র এক বছরের মধ্যে পাকাপোক্ত করেছেন নিজের অবস্থান। একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কাজের পরিচিতি ও অনলাইন মার্কেটে নিজের পণ্য তুলে ধরতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব ছিলেন তিনি। ফেসবুক গ্রুপ ও অনলাইনে শেয়ারের পর থেকেই আসতে থাকে ক্রেতাদের অর্ডার।
জানা গেছে, স্বামীর চাকরির সুবাদে বর্তমানে রুমা বসবাস করছেন তেঁতুলিয়ার উপজেলার তিরনইহাট এলাকায়। রুমা পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী।
চার বছরের সাংসারিক জীবনে তার একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। রুমা স্কুল জীবন থেকেই সুঁই-সুতোয় স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। বাবা ইকবাল হোসেন চৌধুরী ছিলেন একজন নামকরা আর্টিস্ট। তখন থেকে তার আঁকিবুকির অভ্যাস গড়ে ওঠে। বিয়ের পর যখন সন্তান গর্ভে আসলো তখন আগত সন্তানের জন্য পুরনো কাপড় দিয়ে কাঁথা তৈরির কাজ শুরু করেন। করোনা মহামারি শুরু হলে বোরিং সময় কাটানোর জন্য নকশি কাঁথার কাজ শুরু করার চিন্তা করেন। স্বামীর বাধার মুখে রুমা গত বছরের ১৮ই জুলাই থেকে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন নকশি কাঁথার কাজ। কাজের শুরুটা মাত্র ৭ হাজার টাকা দিয়ে। অনলাইন মার্কেট থেকে সংগ্রহ করেন কাঁথার কাপড়, সুঁই সুতা, ফ্রেম ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন এস আর হ্যান্ডিওয়ার্ক। বছর না পেরোতেই কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে কাজ করায় শুধু নকশি কাঁথা বিক্রি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার।
রুমা বলেন, কাজ শুরু করার পর তেমন একটা পরিচিতি না থাকায় অবস্থা ভালো ছিল না। অনলাইনে যুক্ত হওয়ার পর প্রডাক্টের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে আমার বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির নিজস্ব নারীদের কাজে লাগাই। তাদের সামান্য পারিশ্রমিকও দেয়ার চেষ্টা করি। চাহিদা আরো বেড়ে যাওয়ায় বাড়াতে থাকি আমার ব্যবসার পরিধিও। গ্রামের শিক্ষিত মেয়েদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের সুঁই-সুতার ওপর আগ্রহ তৈরি করি। এ ছাড়া গ্রামের আত্মীয়-স্বজন গৃহবধূরা কাজের ফাঁকে আমাকে সময় দিতে থাকে। আমিও সাধ্যমতো তাদের পারিশ্রমিক দেয়ার চেষ্টা করি। চেষ্টা করছি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নারীদের নিয়ে গ্রুপ তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ দেবো। নিজের কাজের ফাঁকে তারা আমার কাজে সময় দিয়ে বাড়তি কিছু টাকা রোজগার করবে।