মঙ্গলবার ১২ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৮৮আমার চোখ, দাঁত ও ঠোঁটের সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করেছে। আরও পরীক্ষার জন্য আজ আবার আমাকে নেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। ডাক্তাররা তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা করছেন এবং তাদের কর্মচারীরাও যথাসাধ্য সহযোগিতা করছেন কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ পরিনির্ণয় কিংবা প্রেসক্রিপশন সঠিক নয় কিংবা তা আমার জন্য ভালোভাবে কাজ করছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থার এই দুই প্রধান দুর্বলতার কারণেই অর্থ-সক্ষম রোগীরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে বিদেশে।
ডা. হেলালের মাধ্যমে হাসনার কাছ থেকে একটি ই-মেইল পেয়েছি। আমান বাস করছে অত্যন্ত ভালো একটি ইংরেজ পরিবারের সঙ্গে অক্সফোর্ডশায়ারে। যুক্তরাজ্য সরকারের সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের অনুমোদিত প্রতিবন্ধী শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য এটি একটি অনুমোদনপ্রাপ্ত পরিবার। বিশেষায়িত স্কুলে শিক্ষা কর্মসূচিতে সহায়তা দেওয়ার সক্ষমতাসম্পন্ন এ পরিবারটি। তারা চান যে, আমি জেলখানায় থাকাকালীন আমানকে ঢাকায় আনা হোক।
তাদের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত। আমান এখন তার স্ত্রী জোরাহর সান্নিধ্যবঞ্চিত হলেও এ অবস্থানকে সে মেনে নিয়েছে। আমান বড়ই নিষ্পাপ ও সরল আমরা যা-ই বলি অকাতরে তা সে মেনে নেয়। তার ক্ষুদ্র পৃথিবীর পরিবৃত্তে বসে আমান সবসময় কী নিয়ে ভাবে তা আমরা জানি না। তবে আমরা জানি সে বুঝতে পারছে তার বাবা এখন কয়েদখানায় এবং আমাদের চলছে মহা এক দুঃসময়। আমি এ ভেবে অনেক অনুতপ্ত যে, আমার কারণেই আমানকে এ বিপর্যস্ত অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও হিংস্র যৌথবাহিনীর নির্যাতনের চাইতে এখন দেশের বাইরে থাকাই হবে তার জন্য উত্তম। আমাকে গ্রেফতার করার অব্যবহিত পরে দেশ ত্যাগের প্রাক্কালে তার ওপর এয়ারপোর্টে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে সে দুঃসহ স্মৃতি বোধহয় আমান কোনোদিন ভুলতে পারবে না।
হাসনা লিখেছে যে, আমার বন্দিত্ব আনা’র পড়াশোনাকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গতবার যে পরীক্ষা সে দিতে পারেনি আবার ওকে সেই পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সে অত্যন্ত মেধাবী কিন্তু একবার ৩-৪ বছরের জন্য সাইকিয়াট্রিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ায় সে পড়াশোনায় অনেকটা পিছিয়ে যায়। কিন্তু এর পরেও সে যেভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পেরেছে তার জন্য আল্লাহ্তাআলার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ফলাফল খুব ভালো করেছে।
ইউরোপিয়ান ‘ল’-এর ওপরে সে ভালোই উন্নতির স্বাক্ষর রাখছে।
বুধবার ১৩ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৮৯সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে জামিন লাভের পর হাইকোর্টের অপর এক আদেশে জরুরি আইনের ১৬(২) ধারা বলে জেলগেটে আবার কেবলমাত্র সন্দেহবশত কাউকে পুনঃগ্রেফতার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ ধরনের পুনঃগ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহতই রয়েছে।
বেগম জিয়া নিজেকে একজন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন তার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে বলেছেন যে, কেউ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইলে তাকে ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে। এ সিদ্ধান্তের বিচার্যে খালেদা জিয়া যদি ভবিষ্যতে নির্বাচন করতে চান তাহলে ভোটার তালিকাভুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। অবশ্য তিনি যদি ভোটার তালিকাভুক্ত হতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তারেক রহমান কিংবা নিজের মুক্তির লক্ষ্যে এ কৌশল অবলম্বন করতে চান তাহলে তার পেছনে যথাযথ যুক্তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ১৪ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৯০বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সম্প্রতি প্রতিদিন খবরের কাগজে নানারকম বিবৃতি ও রিপোর্ট ছাপা হচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, তার মুক্তির বিষয়টি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। যোগাযোগ উপদেষ্টা বলেছেন- তিনি নিঃর্শতভাবে মুক্তি পাচ্ছেন। তবে একই দিনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন এই ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। আসলে এসব মেরুদ-হীন উপদেষ্টাদের কেউই কিছু জানে না। একমাত্র জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত বন্দুকধারীরাই জানেন কখন এবং কীভাবে তিনি মুক্তি পাবেন।
শুক্রবার ১৫ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৯১আজ জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ধানম-ির বাড়িতে স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে খুন হন। জাতির ইতিহাসে এ এক মহাশোকের দিন।
বিতর্কিত একটি জন্মদিনের হিসাবে আজ বেগম জিয়ারও ৬৩তম জন্মদিন। সঠিক হলেও আমি হলে আমার জন্মদিন বোধহয় একদিন আগে বা পরে পালন করতাম ও শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতাম। এটা একটা রুচিবোধের বিষয়। বেগম জিয়া তা করলে তিনি সকল শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে আরও বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারতেন। তার এই উদারতা তাকে আরো বেশি মহীয়ান করে তুলতো।
বর্তমান ‘চম্পাকলি’ নামে অভিহিত ২৬ নং সেলের আলাদা একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা এই সেলে তাদের বন্দিজীবন কাটিয়েছেন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হবার আগে শেখ মুজিব এই সেলে বছরের পর বছর কারা জীবন কাটিয়েছেন। কয়েক বছর আগেও এটা ছিল জেলখানার ভেতরে আরেকটা ছোট জেলখানা। খোলা একটা চত্বরে আমরা ব্যাডমিন্টন ও ভলিবল খেলতে পারতাম এবং চারপাশে ছিল ফুল ও সবজির ছোট একটা সুন্দর বাগান।
কিন্তু এখন চত্বরের একটা অংশ ময়লা ও ভাঙা ইটে পরিপূর্ণ। ফুল বা সবজি গাছের কোনো অস্তিত্ব নেই। পেছনের দিকে উন্মুক্ত ড্রেনের দুর্গন্ধ অনেক সময় এই সেলকে বসবাসের অযোগ্য করে তোলে।
ময়লার আস্তাবলটি সরিয়ে নেওয়া এবং ড্রেনটি ঢেকে দেওয়ার জন্য আমরা বারবার অনুরোধ করেও কোনো ফল পাইনি।
শনিবার ১৬ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৯২আজ শবেবরাত মহাসৌভাগ্যের রাত। এ রাতে মুসলমানেরা তাদের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহ্র দরবারে মোনাজাত করেন ও মহান আল্লাহ্র করুণা ভিক্ষা করেন। আমরা যদি খাঁটি মানুষ হই এবং সাহায্য প্রার্থনা করার যোগ্য হই তাহলে আল্লাহ্ আমাদের নিবেদন পূরণে সদা প্রস্তুত থাকেন।
শেষবার জামিন পাওয়ার পর ড. তৌফিকের প্রায় এক মাস কেটে গেছে। কিন্তু এখনো তিনি জেলখানায়। জীবনের ভয়ে তিনি জেলখানার বাইরে যেতে চাইছেন ও আশঙ্কা করছেন যে, এবার মিলিটারি গুণ্ডারা তাকে আবার গ্রেফতার না করে হয়তো খুন করে ফেলবে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কি পর্যায়ে আছে এ থেকে তার পরিষ্কার ধারণা মেলে এবং আমরা বুঝতে পারি দেশে বিরাজ করছে কী ধরনের একটা স্বৈরাচারী সরকার।
রবিবার ১৭ আগস্ট ২০০৮দিন ৪৯৩রাত দেড়টায় ঘুম থেকে জেগে উঠেছি আমি। বিশ্বের সকল মানুষের জন্য আমি দোয়া করেছি। আমি মনে করেছি, আজ রাতে ইবাদতের পর আমি আমার বেশ কয়েকটা ইচ্ছার কথা লিখে রাখবো: (১) আরো অভিনিবেশ সহকারে প্রতিদিন ইবাদত করবো, (২) যখনই সুযোগ হবে আবার উমরাহ্ ও হজ্বব্রত পালন করবো। (৩) আমার বাবা ও মায়ের কবর নিয়মিতভাবে জিয়ারত করবো ও আসিফের স্মরণে ফরিদপুরে আমার শ্বশুরালয়ে নিয়মিতভাবে সফর করবো, (৪) পরীবাগ, পুরনো হাইকোর্টের মাজার ও হযরত শাহ্জালালের মাজার যখনই সুযোগ হবে জিয়ারত করবো, (৫) প্রতিমাসে তিনদিন রোজা রাখবো, (৬) যাকাত ও অনুদান ক্রমশ বাড়িয়ে দেবো এবং টঙ্গী ও সাভারের জমি দান করে দেবো, (৭) কোরআন তিলাওয়াত শুনবো নিয়মিত, (৮) এতিমখানায় যাবো ও গ্রামে দান খয়রাত করবো, (৯) কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিযোগিতার আয়োজন করবো, (১০) আমাদের এলাকায় যারা কোরআনে হাফেজ তাদের স্বীকৃতি দেওয়া ও তাদের সম্মানার্থে ব্যবস্থা নেবো, (১১) গ্রামের গরিব লোকদের বাসস্থলে যাতায়াত রাখবো, (১২) আত্মীয়স্বজনের মধ্যে নগদ অর্থসাহায্য বিতরণ করবো।
সোমবার ১৮ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৯৪আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আমাকে সমাহিত করা হবে আমাদের গ্রামের বাড়িতে; আমার বাবা ও মায়ের কবরের পাশে। আমি যেদিন এই বিশ্বচরাচর ছেড়ে অন্তহীন জগতের পথে পা বাড়াবো, সেদিন আমি আমার সন্তান আমান ও আনা এবং আমার স্ত্রী হাসনার জন্য রেখে যাবো আমার অন্তরের অন্তঃস্তল থেকে সকল নিবেদিত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
আজ ছিল বিচারিক আদালতে সম্পদ ও আয়সংক্রান্ত মামলায় আমার হাজিরার দিন। কিন্তু আপিল বিভাগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশের মেয়াদকাল সম্প্রসারণ করায় ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত আমাকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে না। অন্যদিকে আমি এখন কোর্টে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হবো। কোর্টে গিয়েই সাধারণত আমি অন্যান্য পত্রিকা পড়ি, আত্মীয়স্বজনের সাথে মিলিত হই এবং বিভিন্ন বিষয়ে চিরকুট আদান-প্রদান করি। যে কোনো উপলক্ষে কোর্টে বা হাসপাতালে গেলেই সর্বপ্রথম আমার জানার জন্য মনে যে প্রশ্ন আসতো তা হচ্ছে, দেশে কী পরিস্থিতি চলছে? নিশ্চয়ই জনগণ রয়েছেন অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে। তাছাড়া জেলের বাইরে যতবারই লোকজনের সাথে আমার দেখা হয় ততবারই লোকজনের প্রশ্ন শুনতে হয়, এ সরকার আসলে কী করতে চাইছেন?
মঙ্গলবার ১৯ আগস্ট ২০০৮ দিন ৪৯৫আয়কর প্রদানের নোটিশ দেওয়ার পর সময়সীমা পার হয়ে গেছে। কিন্তু এর ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আপাতত ভয়ের কোনো কারণ নেই।
কতিপয় সামরিক অফিসারের দুর্নীতি নিয়ে বাতাসে যেসব কথা ভেসে বেড়াচ্ছে তা সত্যিই বিপজ্জনক। বন্দিদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে এবং শারীরিক অত্যাচার ও ফৌজদারি মামলা করার হুমকি দিয়ে সেনা অফিসারেরা আদায় করছে নগদ অর্থ, সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে কিংবা পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করছে বেআইনি পন্থায়। আমার সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি যে, ইউনিফর্মধারী অফিসারেরা যে কোনো সময় বেসামরিক ক্ষমতায়নের পরিধিতে প্রবেশ করে ক্রমশ তারা দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে যান। ফিল্ড ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, টাস্কফোর্স এবং যৌথবাহিনীর গুটিকয়েক অফিসার এখন প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেনাবাহিনীর বদনামের উপলক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। জেনারেল মইন ও তার ভাইদের বাদেও আরও কয়েকজন সেনা অফিসারের নাম এ সম্পর্কে কানে আসছে- এদের স্ত্রীরা তাদের সম্পত্তির বহরে প্রতিদিন যোগ করছেন নিত্য নতুন গহনা ও বিলাসবহুল গাড়ি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন পার্সোনাল অফিসার কুতুবউদ্দিন আহমেদ আমাকে জানিয়েছেন যে, এদের একজন মামলায় অভিযুক্ত এক পরিবারকে তাদের গুলশানস্থ বসতবাড়ি এবং সোনারগাঁও হোটেলের কাছে আড়াই একর জমি তার মনোনীত ব্যক্তির নামে লিখে দিতে বাধ্য করেছেন। হাসপাতাল বা কোর্টে গেলে এ ধরনের খবর প্রায়ই আমাদের কানে আসে। আমি জানি না এসব তথ্যের সত্যতা কতটুকু। তবে এর অংশবিশেষ সত্য হলেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতি নিয়ে আশঙ্কাগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে। সরকারের মধ্যে যেখানে জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই সেখানে এসব দুর্নীতি অপ্রতিহতভাবে ঘটতে থাকাটাই স্বাভাবিক। সারা বিশ্বের সামরিক কর্মকর্তাদের বেসামরিক প্রশাসনিক আচরণে সবসময় এমনটাই ঘটেছে। সিনিয়র কোনো সেনা অফিসার বদনামে অভিযুক্ত হলে জনগণের দৃষ্টি থেকে তাকে আড়াল করে ফেলার লক্ষ্যে প্রায়ই তাকে অন্য কোনো পদে সরিয়ে দিয়ে তার আত্মসাৎকৃত অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি আইনসিদ্ধ করে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। কতুবুদ্দিন আমার কাছে সেনা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির যেসব চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন তার অনেকগুলো আসলেই আমাকে হতবাক করেছে।
চলবে...