ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নে পাউবো’র বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার ২৬ দিন অতিবাহিত হলেও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ আজও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। ফলে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ইউনিয়নের মানুষ সুপার সাইক্লোন আম্ফানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়ার পর বছরাধিককাল পানির সঙ্গে লড়াই করে যখনই ঘর গুছিয়ে নিতে শুরু করেছিল, ঠিক তখন ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পুনরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় ইউনিয়নের প্রতাপনগর, কুড়িকাহুনিয়া, হরিষখালি, চাকলা, কল্যাণপুর, লস্করী খাজরা, বন্যাতলাসহ ১৭টি গ্রাম। মানুষ ঘরে বসবাসের উপযোগিতা হারিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র, উঁচু স্থানে, অন্যের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘ সময় ঘরছাড়া মানুষগুলো অর্থ ও খাদ্যের অভাবে দিনযাপন করছেন। আবাসস্থল, রান্নাঘর, পায়খানা, সুপেয় পানি এমনকি গোসল করার মতো মিষ্টি পানির অভাবে ভুগছে। মানুষ আয়ের পথ খুঁজতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এজন্য অনেকে এলাকা ছেড়ে ভিন্ন উপজেলা বা জেলা সদরে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে দূষিত পানি ব্যবহার করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা চরম কষ্টে রয়েছেন। সড়কগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ও জোয়ার ভাটার টানে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট দেখা দিয়েছে। এ এলাকায় মানুষ মারা গেলে কবর দেয়ার মতো জমিও পাওয়া দুষ্কর। মসজিদগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় নৌকায় চড়ে বা ভেলায় উঠে সেখানে গিয়ে হাঁটু পানিতে কিংবা মসজিদের ছাদে নামাজ আদায় করতে হচ্ছে।
১৭ই জুন থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আম্ফানের পর এলাকার কিছু পানি ভাটায় নদীতে সরে যেত। কিন্তু এখন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে জ্বর, কাশি, সর্দি, ডায়রিয়াসহ দেখা দিচ্ছে নানা পানিবাহিত রোগ। রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি তারা মাঝে মধ্যে ত্রাণ ও সরকারি বেসরকারি সহায়তা পেলেও প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকার মানুষ সবসময় থাকছে ত্রাণ বঞ্চিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, গরিব সকল শ্রেণির প্লাবিত মানুষ বিপদসংকুল অবস্থায় রয়েছেন।
কুড়িকাহুনিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের দুঃখ কষ্ট দেখার কেউ নেই। আমাদের কষ্ট আমাদের ভেতরেই রাখতে চাই। প্রতিবছর এই রকম হলে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
কল্যাণপুর গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, বাড়িতে পানি থই থই করছে। আমাদের আর এখানে থাকার ইচ্ছা নেই। অনেকে এলাকা থেকে চলে গেছে এবং যাচ্ছে। এমন অবস্থা থাকলে আমরাও চলে যাব।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, গত বছরের
২০শে মে আম্ফানে ঘরবাড়িসহ হাজার হাজার গাছপালা, গবাদি পশুর ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ। সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল উপকূলবর্তী প্রতাপনগরের মানুষ। কিন্তু তারা সে সুযোগ পেলো না। বছর না যেতেই ইয়াসের আঘাতে ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের ১৭ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ আজও পানিবন্দি। প্রতাপনগরের হরিষখালী, বন্যাতলা, কুড়িকাহুনিয়া ৩টি পয়েন্ট বাঁধ দেয়া সম্ভব হয়নি। এই ৩টি পয়েন্ট দিয়ে এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে। ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। তিনি দ্রুত বাঁধ মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।