মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজারে মারকাযুস সুন্নাহ মাদ্রাসার ৫ তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পালাতে গিয়ে মো. ফয়সাল (১২) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহত শিক্ষার্থী ফয়সাল জেলার বি.পাড়া উপজেলার মহালক্ষ্মীপাড়া গ্রামের মৃত আবুল ফজল মাস্টারের ছোট ছেলে। রোববার বিকালে বাঙ্গরা বাজারের মারকাযুস সুন্নাহ মাদ্রাসায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফয়সাল ওই মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। গত ৭ই জুন ২০২১ মাদ্রাসায় ভর্তি হয় সে।
জানা যায়, শিক্ষার্থী ফয়সাল কয়েকদিন ধরে বাড়িতে যাওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ছুটি দেননি। মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলে ওই ছাত্রকে। পরে রোববার বিকালে প্রতিদিনের মতো শিক্ষকদের সঙ্গে ফয়সাল মাদ্রাসার ছাদে উঠে।
মাগরিবের নামাজের পূর্বে সব শিক্ষার্থী যখন ছাদ থেকে নেমে নামাজ পড়তে যায়, তখন ফয়সাল দৌড়ে গিয়ে ছাদে উঠে। ছাদ থেকে লাফ দিলে ভবনের পাশেই একটি দোকানের টিনের চালা ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মারকাযুস সুন্নাহ মাদ্রাসার শিক্ষক মামুন মিয়া জানান, আসর নামাজের পর আমি ও আরেকজন শিক্ষক ছাত্রদের সঙ্গে ছাদে ছিলাম। যখন সময় শেষ তখন ছাত্রদেরকে একসঙ্গে করে নামতে বলি। অন্যরা নামার জন্য আসলেও ফয়সাল না এসে দৌড়ে গিয়ে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যায়।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার পরিচালক হাফেজ মো. আরিফ হাসান জানান, ঘটনার সময় মাদ্রাসার পাশে এক দোকানে বসা ছিলাম। আমাকে যখন জানানো হয় তখন যে দোকানের চালার উপর পড়েছে সেই দোকানে যাই। দোকানটি তখন তালাবদ্ধ ছিল। দোকানদারকে দিয়ে তালা খুলে ভেতয়ে গিয়ে দেখি ফয়সাল মাটিতে পড়ে আছে। তার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তাকে মুরাদনগর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। তখন ডাক্তার দেখে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, ফয়সাল এর আগেও কয়েকটি মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে এসেছে। আমার আত্মীয় হওয়ায় তার মা তাকে আমার এখানে এনে ভর্তি করান। সে যেন আবার পালিয়ে না যায় সেজন্য তাকে সব সময় চোখে চোখে রাখতাম। শিক্ষার্থী ফয়সালের মা, বড় ভাই ও মামা জানান, আত্মীয়ের মাদ্রাসা হওয়ায় তার (ফয়সালের) ভালোর জন্যই ভর্তি করিয়েছি যেন হাফেজ হতে পারে। আমাদের ভাগ্যে হয়তো নেই। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানান। বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।