চার বছর ধরে ১১ লাখ রোহিঙ্গার ঘানি টানছে জনবহুল বাংলাদেশ। মানবিক কারণে বাস্তুচ্যুত ওই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছিল ঢাকা। বর্ডার খুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপও ছিল সরকারের উপর। অবশ্য গত চারবছর ধরে ঢাকার অবস্থানে সর্বোতভাবে সাপোর্ট ছিল গোটা দুনিয়ার। পূর্ব এবং পশ্চিমা দুনিয়ার স্বাতন্ত্র্যতা, মত ও পথের ভিন্নতা থাকলেও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং তাদের রাখাইনে নিরাপদ প্রত্যাবাসন প্রশ্নে একাট্টা ছিল সবাই। ঢাকার গোলপোস্ট পরিবর্তন নিয়ে সমালোচনা থাকলেও প্রত্যাবাসন চেষ্টায় সবার সমর্থন পাচ্ছিলো বাংলাদেশ। তবে বরাবরই ঢাকার আশঙ্কা ছিল মুমেনটাম ধরে রাখা যাবে কিনা- তা নিয়ে। সেটাই বোধ হয় সত্য হতে চলেছে- এমটাই দাবি সেগুনবাগিচার।
কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এখন আর পশ্চিমা দুনিয়ার ফোকাসে নেই। এটা আমাদের হতাশ করেছে। পশ্চিমারা তাদের অগ্রাধিকারে বেশ পরিবর্তন এনছে উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হলেও পশ্চিমা বিশ্ব এখন মিয়ানমারে বহুদলীয় গণতন্ত্র ও অং সান সু চি সরকারকে ফেরানোতেই বেশি মনোযোগী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেয়ে ‘গণতান্ত্রিক বার্মা’ প্রতিষ্ঠায় জোর দিচ্ছে তারা। ওই মতপার্থক্যের প্রতি ইঙ্গিত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। ওই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমাদের বন্ধু যারা মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, তারা সব বাংলাদেশকে বাহবা দেন। তাদের দাবি, তারা বাংলাদেশের পাশে আছেন। কার্যত তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু মিয়ানমারের সঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সঙ্গে তাদের বাণিজ্য অনেক গুণ বেড়েছে দাবি করে মন্ত্রী একটি পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, যারা মানবাধিকারের বড় বড় কথা বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের ব্যবসা চার বছরে ১৫ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সম্প্রতি একটি রিপোর্ট দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৬০টি ব্যাংক গত চার বছরে মিয়ানমারকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের গ্যারান্টি দিয়েছে। ওই ব্যাংকগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপিয়ান ব্যাংক রয়েছে। মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মুখে তারা বলে আমরা জেনারেলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। কিন্তু বাস্তবে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক আছে। মন্ত্রী বলেন, এটা দ্বিচারিতা। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলোর উদ্দেশ্য প্রত্যাবাসন না, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে মিয়ানমারে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফেরানো। সুচি ফের ক্ষমতায় বসানো। সুচি ক্ষমতায় ফিরলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরাও গণতন্ত্র চাই কিন্তু সুচি সরকারের গণতন্ত্র চর্চার যে নমুনা আমরা দেখেছি তা দুঃখজনক। মন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা তিনটি কথা বলেছি। প্রথমত বাংলাদেশ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং আমরা আইনসম্মতভাবে ক্ষমতার পালাবদল চাই। দ্বিতীয়ত আমরা বলেছি আমরা সহিংসতা দেখতে চাই না। তিন নম্বর আমরা মিয়ানমারকে অনুরোধ করেছি তারা যেনো তাদের অঙ্গীকার রক্ষা করে বাস্তুুচ্যুতদের ফিরিয়ে নেয়। ফলে এখানে আমাদের অবস্থানে কোনো অস্পষ্টতা নেই।