× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আকাশের তারা তোমাকে বলছি-

সেরা চিঠি

শামীমুল হক
২৭ জুন ২০২১, রবিবার

গভীর রাত। বাইরে আলো-আঁধারির খেলা। দূর থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের ডাক। চোখে ঘুম নেই। বিছানায় শুয়ে ছটফট করছি। মনে পড়ছে- তোমার কথা। খুব করে জানতে ইচ্ছে করছে- কেমন আছো তুমি। কিন্তু জানার তো কোনো উপায় নেই।
কারণ আজ তুমি অন্য ভুবনের বাসিন্দা। আর আমি আছি দোজখে। অথচ তোমার আমার কথা ছিল- তুমি যদি ধর বাজি/সাত দোজখে যেতে রাজি/তোমায় ছাড়া চাই না আমি/আট বেহেস্তের সুখ। চাই না হারাতে তোমায়/শূন্য করে বুক। সে কথা এক নিমিষেই হারিয়ে যায়। এখন আমি শূন্য বুকেই আছি। আছি বুক ভরা কষ্ট নিয়ে। যে কষ্ট আমার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে সুখ, আনন্দ। কেড়ে নিয়েছে স্বপ্ন। কেড়ে নিয়েছে বেঁচে থাকার স্পৃহা। এখন বেঁচে আছি মরার মতো। চোখের সামনে দিয়ে কতো কিছু যে হয়ে যাচ্ছে কোনো কিছুতেই আমার শিরা নড়ে না। বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। মনে পড়ে কি সেদিনের কথা। যেদিন ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে তুমি আমার বুকে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিলে- আমি মরে গেলে তুমি চাঁদনিকে জীবন সঙ্গী করে নিও। আগের রাতে কেন যে দীঘির পাড়ে গেলাম। সেখানে দুজনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ করে একটি সাপ আমাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। সেটি দেখে তুমি চিৎকার দিলে। আমি তোমার মুখ চেপে ধরলাম। পাছে কেউ যদি চিৎকার শুনে ফেলে। পরক্ষণেই দেখি তুমি ভয়ে কাঁপছো। তোমাকে নিয়ে তোমাদের বাড়ি ফিরি। পরদিন থেকেই তোমার জ্বর। ভীষণ জ্বর। কোনো ওষুধই কাজে আসছিল না। রাতে পাশের রুম থেকে চুপি চুপি তোমার রুমে যাই। মাথায় হাত দেই। দেখি তুমি জ্বরে কাঁপছো। এরই মধ্যে তুমি আমাকে টান দিয়ে তোমার পাশে শুয়ালে। বুকে হাত বুলিয়ে দিলে। বললে, চাঁদনির কথা। তুমি যেমন মামাত বোন আমার, চাঁদনিও তাই। কিন্তু তুমি আর চাঁদনি এক নয়- সেদিন সেটা বলতে পারিনি। আর পারিনি বলেই আজও দিন-রাত কাটে তোমাকে ভেবে। তোমাকে কল্পনায় আমার পাশে রেখে। এ জ্বর তোমাকে কেড়ে নেয় আমার কাছ থেকে। তোমার বাবা-মা’র কাছ থেকে। আমার বুক শূন্য করে তুমি চলে যাও অন্য ভুবনে। আজ পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আমি আছি তোমার স্মৃতি মনে ধরে। আমি আছি সেদিন দীঘির পাড়ের কথাগুলো আগলে রেখে। জান, এখনো বছরে একবার তোমাদের বাড়ি যাই। কিন্তু ওই দীঘির ধারে কাছেও যাই না। নিজেকে অপরাধী মনে করে ধিক্কার দেই। কেন সেদিন তোমাদের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। না গেলে তো এমনটা হতো না। তুমি এত ভয় পেয়েছিলে যে, ভয় তোমাকে টেনে নিয়ে যায় ওপারে। আরশিনগরে। ওই যে, লালন ফকিরের গানটি শুনোনি? বাড়ির পাশে আরশিনগর/ সেথায় পড়শি বসত করে/ আমি একদিনও না দেখিলাম তারে/ পড়শি যদি আমায় ছুঁতো/ যম যাতনা সকল যেতো দূরে/ সে আর লালন একখানে রয়/ তবু লক্ষ যোজন দূরে/ আমি একদিনও না দেখিলাম তারে। তারপরও সব সময় প্রার্থনা করি আরশিনগরে তুমি ভালো থেকো। আর আমার হৃদয় পুড়ে অঙ্গার হচ্ছে। যে অঙ্গারে দেহ, মন ধারণ করেছে নীলবর্ণ। অপেক্ষায় আছি, কখন আরশিনগরের ডাক আসবে। যেখানে গেলে তোমার দেখা পাবো।
ইতি
তোমারই একতারা
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর