× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো না বেটা

সেরা চিঠি

আলতাফ হোসাইন
৩০ জুন ২০২১, বুধবার

কেমন আছো মা? সুদূর ঢাকায় বসে প্রথমবারের মতো তোমাকে চিঠি লিখছি। এর আগেও তোমাকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। অনেক আগের কথা। তখন আমার কাছে কোনো ফোন ছিল না। এখন তো হাতে স্মার্টফোন। যেকোনো সময় কল করতে পারি, এসএমএস করতে পারি। কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির যুগে তোমার কাছে আবার চিঠি লিখবো তা কখনো ভাবিনি। জানো মা, কেন যেন মনটা আমার প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে; কথাগুলো যেকোনোভাবেই হোক তোমার কাছে পৌঁছাবে বলে।
কারণ আজ তোমাকে আমার ‘বলা-না বলা’ কিছু কথা বলবো।

প্রিয় মা,
অনেকদিন তোমাকে স্পর্শ করি না। কতোদিন দেখি না তোমায়। তোমার আদরমাখা কণ্ঠে ভালোবাসার ডাক কতোদিন শুনি না! জানো মা, এই জাদুর শহরে আমার বেশির ভাগ সময়ই কাটে কর্মব্যস্ততায়। চাকচিক্যময় শহরটি বেশির ভাগ সময়ই ধুলায় ধূসর থাকে, আবার কখনো ঝুম বৃষ্টিতে সিক্ত হয়। প্রায় ১২টি বছর এই শহরে চলতে ফিরতে নানান রঙের মানুষ দেখেছি। শহরের গল্প তোমার কাছে অনেক করেছি। তুমি জানো। এখানে জোয়ারের মতো কখনো সুখ আসে, কখনো অজানা সংকট এসে ভর করে। তবুও ভালো থাকার চেষ্টায় দিন কাটে, রাত আসে। কর্মময় জীবনে কখনো কখনো তোমার মায়াবী সুন্দর মুখটা চোখে ভেসে ওঠে। তখন নিঃসঙ্গ একা লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে যাই। তোমার কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমাতে পারলে আমার হৃদয় জুড়াতো।

এই সুযোগে আরেকবার তোমাকে বলি, আর কতো ঘাম ঝরাবে তুমি? দিনে দিনে পৃথিবীর কতো কিছু বদলে গেল। তুমি আছো ঠিক আগের মতোই। আমাকে ভালোবাসায় তোমার নেই ক্লান্তি, নেই বিরক্তি। কতো জ্বালাতন সহ্য করেছো তুমি। আমার সব দাবি মিটিয়েছো। মা, তোমার কী একটুও বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে না? সংসারে তোমার অবদান আব্বার থেকে কম নয়। দু’জনই সমান তালে সংগ্রাম করে গেছো সন্তানদের কথা ভেবে। তাইতো আমরা আজ পাঁচ ভাইবোন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পেয়েছি। আব্বা যেমন চলনবিলের ধান ঘরে তুলতে কাঠফাটা রোদে প্রচণ্ড গরমে নিজেকে পুড়িয়েছে বছরের পর বছর, তেমনি তুমিও রোদ-গরম উপেক্ষা করে সেই ধান কুলায় উড়িয়ে ডোলে তুলেছো। উপলব্ধি করতে পারি, জীবনে কতো দুঃখ কষ্টই না সয়েছো তুমি। কিন্তু আর কতো ঘাম ঝরাবে তুমি বলো মা? এখনো ব্যস্ত তুমি তোমার সংসার নিয়ে। কি-বা করবে, নিয়তির লেখাও যে বড় কঠিন মা। আমি তোমার নাড়ি ছেঁড়া
ধন! তুমি কি জানো তোমাকে নিয়ে আমার কতো স্বপ্ন, কতো আশা? আফসোস। সন্তান হিসেবে তোমার জন্য আমি এখনো

পর্যন্ত কিছুই করতে পারিনি। সারা জীবন আমাকে দিয়েই গেলে। বিনিময়ে কিছুই পাওনি। চাওনি। শত দুঃখের মাঝে যখন তোমার ফোন পাই ‘বেটা তুই কই? খাওয়া দাওয়া করেছিস? সাবধানে কাজ করিস। শরীরের দিকে খেয়াল রাখিস। চারদিকের পরিবেশ ভালো না। আমার ভয় হয়, কখন কিযে হয়ে যায়। তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো না’। মা তোমার এসব কথা শুনে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।  

ও মা! যখন তোমাকে এই কথাগুলো বলছি; তোমার হাতের রান্না করা গরম ভাত, বাড়ির পুকুরের টাটকা সুস্বাদু মাছ, কালো জিরা ভর্তা আর মৌলভী কচুর ভর্তা খুব মিস করছি মা! তোমার হাতের রান্না কতোদিন খাই না। প্রতিবার বাড়ি গেলে আমায় নিয়ে কিযে তোমার দৌড়ঝাঁপ! বাড়ির আঙ্গিনায় কোথায় কি আছে সব নিয়ে আসো। কারণ তুমি জানো আমি বাড়ির ন্যাচারাল খাবারগুলো খুব পছন্দ করি। যে ক’দিনই থাকি, তোমার ব্যস্ততা শেষ হয় না। আবার ফেরার পথে ব্যাগ ভরে কিছু দিয়ে দেয়া। বিদায় মুহূর্তে দেখি তোমার চোখের কোণায় পানি। এটা দেখে আমার আর এই শহরে ফিরতে মন চায় না মা। বিশ্বাস করো মা, আমার খুবই ইচ্ছে হয় তোমার সাথে বাড়ি গিয়ে থাকি। আমার একটাই প্রার্থনা- আমৃত্যু তুমি বেঁচে থাকো, ভালো থাকো।

মা, তুমি জানো, আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষার স্বপ্নরা সবসময় বাড়ি ফেরার জন্য উদগ্রীব থাকে। তোমার কাছে ফেরার আশায় পথ চেয়ে বসে আছি। ফিরে যেতে চাই আমার সেই স্নেহের নীড়ে, পরম মমতায় তোমার কোলে মাথা রেখে একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিধাতার দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার তুমি। অনেক ভালো থেকো মা আমার।
ইতি,
তোমার ‘সোনার ধন বেটা’

অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর